চাকরির শুরুতে ১১তম গ্রেডে বেতনসহ তিন দফা দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি শুরু করেছেন দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা। এতে দেশের সাড়ে ৬৫ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস বন্ধ রয়েছে। ক্ষতির মুখে পড়েছে প্রায় এক কোটি ১০ লাখ শিশু শিক্ষার্থী।
পাঠ্যবই বিতরণে দেরি, রাজনৈতিক অস্থিরতায় বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি রয়েছে। শিক্ষকদের কর্মবিরতিতে এ ঘাটতি আরও বাড়বে। সার্বিক দিক বিবেচনায় এখন আন্দোলনের উপযুক্ত সময় নয় বলে মনে করেন শিক্ষাবিদরা।
দীর্ঘদিন ধরে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী।
তিনি জাগো নিউজকে বলেন, প্রাথমিকের শিক্ষকরা বঞ্চিত। শুধু প্রাথমিক নয়, সব স্তরের শিক্ষকদের বেতন-ভাতা খুব কম। এটা নিয়ে আমরা দীর্ঘদিন দাবি জানিয়ে আসছি। তাদের বেতন-ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো খুব জরুরি। ফলে তাদের দাবি যে যৌক্তিক, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে তারা যে সময়টা আন্দোলনের জন্য; কর্মবিরতির জন্য বেছে নিয়েছেন, সেটা উপযুক্ত নয় বলে মনে করি।
- আরও পড়ুন
- শিক্ষক নিয়োগে ৩০ শতাংশ নারী কোটা বহাল রাখার দাবি মহিলা পরিষদের
- এনটিআরসিএ’র শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় আসছে বড় পরিবর্তন
কী কারণে এটি উপযুক্ত সময় নয়, জানতে চাইলে রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘দেখুন, করোনার সময়ে শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি শুরু হয়। সেটা পুরোপুরি এখনো পূরণ হয়নি। কারণ সে সময় যারা প্রথম বা দ্বিতীয় শ্রেণিতে ছিল, তারা এখন চতুর্থ বা পঞ্চম শ্রেণিতে। এরপর গত বছর কোটা সংস্কার আন্দোলন হয়েছে, রাজনৈতিক অস্থিরতা চলেছে বেশ কয়েক বছর ধরেই। আবহাওয়াগত কারণেও বিদ্যালয় বন্ধ থাকে। শীতে তীব্র শীত, তো গরমে প্রচণ্ড গরম। বাধ্য হয়ে স্কুল বন্ধ রাখে সরকার।
‘আমি মনে করি, এত এত সমস্যার পর এখন শিক্ষার্থীদের প্রতি বাড়তি মনোযোগ দেওয়ার প্রয়োজন ছিল। সেটা না করে শিক্ষকরা যদি আন্দোলনে নেমে পড়েন, কর্মবিরতি করেন; তাহলে তা খুবই দুঃখজনক। তাছাড়া এবার শিক্ষার্থীরা দেরিতে বই হাতে পেয়েছে। ক্লাসও দেরিতে শুরু হয়েছে। আর সরকার শিক্ষকদের কিছু সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়েছে, সামনে হয়তো আরও বাড়াবে। সেজন্য আমি মনে করি, নির্বাচিত সরকারের আসার আগে এর চেয়ে বেশি দাবি আদায় সম্ভব নয়। সেটি বিবেচনা করে এখন আর আন্দোলন না করাই উত্তম হবে’ যোগ করেন রাশেদা কে চৌধুরী।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের দশম গ্রেড বাস্তবায়নের দাবিতে সম্প্রতি রাজধানী ঢাকায় কয়েক দফা সমাবেশ করেছেন প্রাথমিক শিক্ষকরা।
অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত কনসালটেশন (পরামর্শক) কমিটি সহকারী শিক্ষক পদকে অ্যান্ট্রি পদ ধরে ১২তম গ্রেড বাস্তবায়নের সুপারিশ করেছে। তবে তা সংস্কার করে এবার ১১তম গ্রেড বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন তারা।
প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের ডাকে গত ৫ থেকে ১৫ মে পর্যন্ত প্রতি কর্মদিবসে এক ঘণ্টা কর্মবিরতি করেন শিক্ষকরা। এরপর ১৭ থেকে ২০ মে পর্যন্ত দুই ঘণ্টা, ২১ থেকে ২৬ মে পর্যন্ত অর্ধদিবস কর্মবিরতি করেছেন তারা। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী—সোমবার (২৬ মে) থেকে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি শুরু করেছেন সহকারী শিক্ষকরা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাদের এ কর্মবিরতি চলবে।
শিক্ষকদের তিন দফা দাবি—
১. সরকারের গঠিত কনসালটেশন কমিটির সুপারিশের যৌক্তিক সংস্কার করে সহকারী শিক্ষক পদকে অ্যান্ট্রি পদ ধরে ১১তম গ্রেডে বেতন নির্ধারণ।
২. ১০ বছর ও ১৬ বছরপূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির জটিলতা নিরসন।
৩. প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ পদোন্নতিসহ দ্রুত পদোন্নতি প্রদান।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বর্তমানে দেশে ৬৫ হাজারের বেশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পৌনে ৪ লাখেরও বেশি শিক্ষক কর্মরত। তাদের মধ্যে প্রধান শিক্ষকদের বর্তমান বেতন গ্রেড ১১তম। আর সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেড ১৩তম
এএএইচ/এমআরএম/জিকেএস