প্রেম ও চকলেট, যুগ যুগ ধরে চলা এক অবিচ্ছেদ্য বন্ধন

2 months ago 5

চকলেট আর প্রেম, দুটোর মাঝেই আছে এক অনন্য মিল। যেমন চকলেট এক কামড়ে মনভরানো সুখ এনে দেয়, তেমনি ভালোবাসাও একটুকরো মমতা, এক চিলতে হাসিতে ভরিয়ে দেয় হৃদয়। যুগ যুগ ধরে প্রেমের বহিঃপ্রকাশে চকলেট হয়ে উঠেছে নীরব এক দূত। কখনও প্রেমিকের হাতে প্রেমিকার জন্য, আবার কখনও ক্ষমা চাওয়ার এক মিষ্টি উপায় হয়ে চকলেট জায়গা করে নিয়েছে ভালোবাসার নানা মোড়ে। ভালোবাসা যখন শব্দ খুঁজে পায় না, তখন চকলেটই বলে ওঠে সেই অনুচ্চারিত অনুভব। ঠিক সেজন্যই, প্রেম আর চকলেট যেন যুগ যুগ ধরে এক বন্ধনে বাঁধা; ভাঙা যায় না, কমানো যায় না-শুধু অনুভব করা যায় হৃদয়ের গভীরে।

বিশ্ব চকলেট দিবস আজ। পৃথিবীর নানা প্রান্তে আজকের দিনটা উদযাপন করা হয়। তবে এই ছোট্ট মিষ্টির টুকরো কি শুধুই স্বাদের? না, চকলেট বরং এক আবেগের নাম। প্রেমের মতোই তার রয়েছে গভীরতা, রয়েছে তীব্রতা, আবার কখনো বা নরম মায়া। ভালোবাসা যেমন ভাষা ছাড়াও প্রকাশ পায়, তেমনি একটুকরো চকলেটেও জমে থাকে হাজার না বলা কথা।

চকলেট দিবসের পেছনের গল্প
১৫৫০ সালের দিকে ইউরোপে চকলেট দিবস পালনের সূচনা হয়েছি, যখন কোকো ফল আমেরিকা থেকে ইউরোপে আনা হয়। তবে ৭ জুলাই তারিখটিকে বিশেষভাবে ‘চকলেট দিবস’ হিসেবে বেছে নেওয়ার কারণ-এই দিনেই প্রথমবার বাণিজ্যিকভাবে চকলেট ইউরোপে পৌঁছায়। তখন থেকেই ধীরে ধীরে শুরু হয় চকলেটের জয়যাত্রা, মিষ্টি প্রেমের এক অনিবার্য প্রতীক হিসেবে।

ভালোবাসা মানেই চকলেট
চকলেট শুধু একটা খাবার নয়, বরং আবেগের প্রতীক। কোনো প্রেমিক যখন প্রেমিকার হাতে একটুকরো চকলেট তুলে দেন, তা যেন শত শব্দের থেকেও বেশি বলার ক্ষমতা রাখে। প্রথম দেখা, প্রথম প্রেম, প্রথম ঝগড়া কিংবা সম্পর্ক জোড়া লাগানোর দিন-সব মুহূর্তেই চকলেট যেন হয়ে ওঠে প্রেমের নীরব ভাষা।

কোনো কোনো গবেষণা বলছে, চকলেট খেলে শরীরে ‘ফিল গুড’ হরমোন ডোপামিন নিঃসরণ বাড়ে, মন ভালো হয়, মানসিক চাপ কমে যায়। হয়তো এজন্যই প্রেমে পড়লে বা ভালোবাসার দিনে মানুষ চকলেট খেতে বা উপহার দিতে চায় বেশি।

প্রেম ও চকলেট, যুগ যুগ ধরে চলা এক অবিচ্ছেদ্য বন্ধন

একটুকরো চকলেটে লুকিয়ে থাকে যত কথা...
মনে আছে প্রথম ভালোবাসার দিনটি? গালে লজ্জার আভা, কাঁপা কণ্ঠে বলা প্রথম ভালোবাসার কথা-সেই মুহূর্তে হাতে ছিল একটুকরো ডেইরি মিল্ক বা ফেরেরো রোশের। কিংবা ভাঙা সম্পর্ক জোড়ার সময় ‘সরি’ বলার আগে দেওয়া সেই ছোট্ট চকলেট, কত না কষ্টের ভেতরেও যেন একটুকরো আশ্বাস হয়ে দাঁড়িয়েছিল। জন্মদিনে কিংবা পরীক্ষায় ভালো করার পর যখন প্রিয়জনের হাত থেকে চকলেট আসে, তা যেন শুধু উপহার নয়, বরং ‘আমি তোমাকে নিয়ে গর্বিত’ বলার এক নীরব অভিব্যক্তি।

শুধু প্রেমিক-প্রেমিকার নয়, চকলেট মানেই সম্পর্কের মাধুর্য
বিশ্ব চকলেট দিবস শুধু প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। মায়ের হাতে বানানো চকলেট কেক, ছোট ভাইবোনের সঙ্গে ভাগ করে খাওয়া চকলেট বার, বন্ধুর ব্যাগে গোপনে রাখা একটি চকলেট-সবই ভালোবাসার এক একটি রূপ। চকলেট আমাদের শেখায়, ভালোবাসা দেখাতে বড় কিছু প্রয়োজন হয় না। একটু আন্তরিকতা, সামান্য মিষ্টতা, তাতেই গলে যায় কঠিনতম সম্পর্ক।

চকলেট দিবস উদযাপনের কিছু মিষ্টি আইডিয়া
>> প্রিয়জনকে নিজের হাতে বানানো হোমমেড চকলেট উপহার দিন।
>> প্রিয় বন্ধুকে দিন একটি চকলেট বার আর সঙ্গে ছোট্ট একটি চিঠি- ‘তুমি আমার জীবনের মিষ্টি মুহূর্তগুলোর একজন’
>> মায়ের জন্য আনুন তার পছন্দের চকলেট, আর বলুন-‘তোমার মতো আর কেউ নেই।’
>> নিজের জন্যও কিনে ফেলুন পছন্দের চকলেট, কারণ নিজেকে ভালোবাসাটাও জরুরি।

প্রেম ও চকলেট, যুগ যুগ ধরে চলা এক অবিচ্ছেদ্য বন্ধন

চকলেটের ভুবনে কিছু অজানা তথ্য
>> সুইজারল্যান্ড পৃথিবীর অন্যতম শীর্ষ চকলেট উৎপাদনকারী দেশ।
>> ডার্ক চকলেটে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা হৃদপিণ্ডের জন্য উপকারী।
>> প্রাচীন মায়া সভ্যতায় চকলেট ছিল দেবতাদের খাবার, আর আজও তা বিশেষ দিনের অনন্য উপহার।
>> বিশ্বের সবচেয়ে দামি চকলেটের দাম প্রায় ২৬০ ডলার প্রতি পিস!

চকলেটের মতো হোক ভালোবাসা
একটুকরো চকলেট যেমন তেতো-রসের সঙ্গে মিষ্টির এক অপূর্ব মিশেল, তেমনি প্রকৃত ভালোবাসাও আনন্দ আর চ্যালেঞ্জের মিশ্রণ। আজকের দিনে আমরা সবাই একটুখানি চকলেট দিয়ে হয়তো কারও মুখে হাসি ফোটাতে পারি। ভালোবাসা তো আর বড় কিছু চায় না, শুধু চায় একটু সময়, একটু মনোযোগ আর কখনো কখনো, একটুকরো চকলেট!

জেএস/এএসএম

Read Entire Article