শোবিজে পরিচিতি পাওয়ার পর থেকে পরীমনির প্রায় প্রত্যেকটি জন্মদিনই জাঁকজমকের সঙ্গে পালন করা হয়। তার জন্মদিনটি আজ (২৪ অক্টোবর) হলেও কয়েকদিন আগেই পালন করা হয়েছে।
সোমবার (২০ অক্টোবর) রাতেই কেক কেটে জন্মদিনের আনন্দ ভাগাভাগি করেছেন তিনি। মঙ্গলবার সকালে নিজের ফেসবুকে সেই উদযাপনের বেশ কিছু ছবি প্রকাশ করেন পরীমনি। পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘২৪ অক্টোবর আমার জন্মদিন। গতকাল রাতেই উদযাপন করে ফেললো অর্ক। কারণ আমি এবার জন্মদিনে দেশে থাকছি না।’

পরীমনির জন্মদিনটি তার অনুরাগীদের জন্য বিশেষ। কারণ জন্মদিনের আয়োজন কেমন হবে তা জানতে পরীর অনুরাগীরা মুখিয়ে থাকেন। পরীর জন্মদিন মানেই চমক জাগানিয়া ব্যাপার।
আজকের এই দিনেই জন্মেছিলেন সাম্প্রতিক সময়ের ঢাকাই সিনেমার সবচেয়ে আলোচিত, সমালোচিত, অথচ সবচেয়ে প্রাণবন্ত এক নায়িকা—পরীমনি। তাকে ঘিরে যতটা বিতর্ক, ততটাই ভালোবাসা। কেউ তাকে বলেন সাহসী, কেউ বলেন ঝুঁকিপ্রবণ। কিন্তু এত কিছুর মাঝেও একটি সত্য অস্বীকার করা যায় না—পরীমনি বাংলা চলচ্চিত্রে নিজের অবস্থান তৈরি করেছেন নিজের মতো করেই।
পরীমনির জন্ম ১৯৯২ সালের ২৪ অক্টোবর, পিরোজপুর জেলার শঙ্করপাশা গ্রামে। শৈশবটা সহজ ছিল না তার। খুব অল্প বয়সে হারিয়েছেন মাকে, এরপর নানা বাড়িতেই বেড়ে ওঠা। ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতেন রুপালি পর্দায় আলো ছড়ানোর। সেই স্বপ্ন নিয়েই পাড়ি জমান ঢাকায়। শুরুটা হয় মডেলিং দিয়ে, এরপর বিজ্ঞাপনচিত্র। কিন্তু তার লক্ষ্য ছিল আরও বড়—নায়িকা হওয়া।
২০১৫ সালে ‘ভালোবাসা সীমাহীন’ সিনেমার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে আত্মপ্রকাশ পরীমনির। তারপর একে একে ‘রূপবান’, ‘স্বপ্নজাল’, ‘বিশ্বসুন্দরী’, ‘গুণিন’, ‘মা’—প্রতিটি সিনেমাতেই নিজেকে ভেঙে নতুন করে গড়েছেন। অভিনয়ে যতটা পরিশ্রমী, ততটাই সচেতন নিজের ভাবমূর্তি নিয়ে।
বাংলা চলচ্চিত্রে এমন খুব কম নায়িকা আছেন, যিনি ব্যক্তিজীবনকে এত খোলামেলাভাবে তুলে ধরেছেন দর্শকের সামনে। পরীমনি ঠিক তেমনই। সম্পর্ক, ভালোবাসা, বিবাহ, মাতৃত্ব—সব কিছুতেই তিনি ছিলেন স্বচ্ছন্দ। কিন্তু এই খোলামেলাতাই তাকে বারবার সমালোচনার মুখে ফেলেছে।
কখনো আইনি ঝামেলা, কখনো সামাজিক দৃষ্টিকোণ—সব কিছু মিলিয়ে তার জীবন যেন এক সিনেমা। তবে প্রতিবারই তিনি ফিরে এসেছেন আরও শক্ত হয়ে, যেন আগুনের ভেতর থেকে উঠে আসা এক ফিনিক্স পাখি।
নিজের জীবনের ওঠা-নামা নিয়ে পরীমনি এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘আমার জীবনে যা কিছু ঘটেছে, তা আমাকে থামায়নি। বরং এগিয়ে যেতে শিখিয়েছে। আমি ভাঙি, আবার নিজেকে গড়ি।’

২০২২ সালে ছেলে রাজ্যের জন্ম পরীমনির জীবনকে নতুন করে সাজিয়ে দিয়েছে। এখন তিনি শুধু একজন তারকা নন, একজন মা—যিনি সন্তানকে কেন্দ্র করে গড়ে তুলেছেন এক মায়াময় দুনিয়া। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রায়ই দেখা যায় তাকে রাজ্যকে নিয়ে মজার মুহূর্ত শেয়ার করে নিতে।
তবে মাতৃত্বের পরও তিনি অভিনয় থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেননি। বরং আরও গভীরভাবে যুক্ত হচ্ছেন গল্পনির্ভর সিনেমায়। ‘মা’ ছবিতে তার অভিনয় শুধু প্রশংসাই কুড়ায়নি, বরং প্রমাণ করেছে—চকচকে গ্ল্যামারের বাইরেও তিনি একজন পরিপূর্ণ অভিনেত্রী।
বাংলাদেশের বিনোদন অঙ্গনে পরীমনি যেন এক প্রতীক—সাহসের প্রতীক, প্রতিবাদের প্রতীক। তিনি কখনো সমাজের কটাক্ষে মুখ বন্ধ রাখেননি। বরং নিজের মতামত প্রকাশ করেছেন অকপটে, কখনো তীব্র ভাষায়, কখনো নরম প্রতিবাদে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার পোস্টগুলো নিয়ে যতই আলোচনা হোক, সেগুলোর ভেতর দিয়ে উঠে আসে এক বাস্তব নারী, যিনি ভালোবাসতে জানেন, কাঁদতে জানেন, আবার নিজের সম্মান রক্ষায় লড়তেও জানেন।
বিতর্কের আড়ালে যে মানুষটা আছেন, তিনি আসলে খুব সহজ, সরল। বই পড়তে ভালোবাসেন, ছবি আঁকেন, ভ্রমণ করেন। শিল্পের প্রতি তার টানটা গভীর। হয়তো সেই কারণেই তাকে বলা হয় ‘রঙিন ক্যানভাসের নায়িকা’—যিনি নিজের জীবনের প্রতিটি রঙ নিজেই বেছে নেন।
এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘আমার জীবনটা সিনেমার মতো, কিন্তু আমি এখনো নিজের স্ক্রিপ্ট লিখছি।’ এই আত্মবিশ্বাসই তাকে আজকের পরীমনি বানিয়েছে।
আজ তার জন্মদিন। হয়তো অনেকে এখনো তাকে ভালোবাসেন না, হয়তো কেউ কেউ ভুল বোঝেন—তবু তিনি আছেন আলোয়। কারণ আলো নিভে যায় না কখনো, শুধু তার দিক বদলায়।
আরও পড়ুন
যার কারণে চারদিন আগেই জন্মদিন পালন করলেন পরীমনি
প্রেমিক নয়, শেখ সাদীকে ছোট ভাই বললেন পরীমনি
পরীমনি সেই আলো, যিনি প্রতিবার অন্ধকারের ভেতর থেকেও নিজের পথ খুঁজে নেন। ঝড় তার নাম, কিন্তু সেই ঝড়েই লুকিয়ে আছে এক নারীর বেঁচে থাকার অনন্ত সুর।
এমএমএফ/জিকেএস

12 hours ago
7









English (US) ·