ফরিদপুরে নতুন জাতের পাট ‘সবুজ সোনা’ চাষ করে বেশ লাভবান হয়েছেন চাষিরা। বেশি উচ্চতা, কম সময় ও জলসহিষ্ণু হওয়ায় এ জাতের পাট চাষ লাভজনক। কৃষকেরা এ পাট চাষ করে ভালো ফলন পাচ্ছেন এবং লাভবান হচ্ছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্রমতে, জেলাজুড়ে এ মৌসুমে ৮৬ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। তবে এবার পাটের ফলন ভালো হলেও ব্যয় বেড়েছে বহুগুণ। জেলায় পাট চাষ হয় আবাদি জমির ৭৫ শতাংশের বেশি। এর সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে জড়িত আছেন অন্তত ৫ লক্ষাধিক কৃষক।
ফরিদপুর পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট জানায়, ভারতীয় জাতের জেআরও ৫২৪-এর সঙ্গে এক সেশনের হাইব্রিডাইজেশনের মাধ্যমে সবুজ সোনা উদ্ভাবন করা হয়। গবেষণা পর্যায়ে মানোত্তীর্ণের পর মাঠ পর্যায়ে সাফল্য পাওয়া গেছে। তাই একে সবার সেরা পাটের জাত হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সবুজ সোনা (বিজেআরআই তোষা পাট ৯) জাতের পাট চাষে ফলন বেশি। এতে রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ কম। এ ছাড়া বীজ বপনের পর মাত্র ১২৫ দিনে কাটা যায়। পাটের আঁশও বেশ ভালো মানের হয়।
সালথা উপজেলার পাট চাষি বিধান চন্দ্র বলেন, ‘এবার কয়েক বিঘা জমিতে নতুন জাতের পাট আবাদ করে সবদিক দিয়ে বেশ লাভবান হয়েছি।’
সালথা পাট চাষি সমিতির সভাপতি মো. মোক্তার মোল্লা বলেন, ‘এ জাতের পাট আবাদ করে বেশ লাভবান। এর উচ্চতা অন্য জাতের চেয়ে বেশি। আবাদ করতে হয় ১০০ দিনের মতো। যা অন্য যে কোনো পাটের চেয়ে তিন থেকে চার সপ্তাহ কম। এটি জলসহিষ্ণু হওয়ায় ক্ষেতে পানি জমে থাকলেও কোনো ক্ষতি হয় না।’
ফরিদপুর আঞ্চলিক কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. মজিবর রহমান বলেন, ‘এতদিন বাংলাদেশে যেসব ভারতীয় জাতের পাট বীজ বপন করা হয়েছে, তার বেশিরভাগ ছিল দুর্বল। কোনোটি জলঅসহিষ্ণু, কোনোটি বেশি সময় ধরে চাষ করতে হয়। আবার কোনোটির উচ্চতা বেশি হলেও ভঙ্গুর এবং আঁশ পাতলা। নতুন জাত ‘সবুজ সোনা’ এসব দুর্বলতা কাটাতে পেরেছে। এ জাতের পাট চাষ করে কৃষকেরা বেশ সফল ও লাভবান হয়েছেন।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ফরিদপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ খায়ের উদ্দিন মোল্লা বলেন, ‘আমরা বাস্তবে মাঠে দেখেছি ‘সবুজ সোনা’ অন্য তোষা পাটের চেয়ে মান ও ফলনে ভালো। যদিও বীজের সংকট আছে। যে পরিমাণ চাহিদা আছে; সে পরিমাণ বীজের সংকুলান করা কষ্টসাধ্য।’
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ শাহাদুজ্জামান বলেন, ‘এবার পাট পচনের সময় অতি বৃষ্টিপাত হওয়ায় পাটের রং ভালো হবে। এ জন্য বাজারদর সন্তোষজনক হবে। এবারের মৌসুমে ২ লক্ষাধিক মেট্রিক টন পাট উৎপাদন হবে। যার বাজারমূল্যের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ হাজার কোটি টাকার বেশি।’
এন কে বি নয়ন/এসইউ/জিকেএস