ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক তরঙ্গ কি শরীরের ক্ষতি করছে?

1 day ago 4

সম্প্রতি দেশে মোবাইল নেটওয়ার্কে ফাইভ-জি সেবা চালু করেছে শীর্ষ দুই মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোন ও রবি আজিয়াটা। পঞ্চম প্রজন্মের মোবাইল নেটওয়ার্ক। ফাইভ-জির মাধ্যমে ইন্টারনেটের গতি আরও বাড়বে, যা আপনার ইন্টারনেট ব্যবহারের অভিজ্ঞতা আরও ভালো করবে। ফাইভ-জির গতি ফোর-জির চেয়ে ১০ থেকে ২০ গুণ বেশি হতে পারে। তবে দেশভেদে গতিতে ভিন্নতা দেখা যায়। ফাইভ-জিতে ডাটা আদান-প্রদানের সময় অনেক কম লাগে। ফলে ইন্টারনেট ব্যবহারে পাওয়া যায় স্বাচ্ছন্দ্য।

ইন্টারনেট ব্যবহার করেন না এমন মানুষ বোধহয় দেশে খুঁজে পাওয়া একটু মুশকিলই বটে। স্মার্টফোন, ল্যাপটপ বা ডেস্কটপে ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন। যোগাযোগ, ব্রাউজিং কিংবা ভিডিও দেখার কাছে ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন। কিন্তু কাজের সময় ইন্টারনেটের স্পিড ঠিকমতো না পাওয়া বা বাফারিং নতুন কোনো ঘটনা নয়। সেই সমস্যার সমাধান সহজেই হবে ফাইভ-জি ইন্টারণেট ব্যবহারে।

এছাড়া যেসব অঞ্চলে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ নেই সেখানেও দ্রুতগতির ইন্টারনেট পাওয়া যাবে এই প্রযুক্তির মাধ্যমে। বিশ্বের যেসব দেশে ফাইভ-জি চালু আছে, সেখানে সাধারণ গ্রাহকদের ব্যবহার ছাড়াও বন্দর পরিচালনা, বাণিজ্যিক কার্যক্রম, চিকিৎসা, শিক্ষা, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, শিল্প খাতে এই সেবা ব্যবহৃত হয়।

তবে অনেকেই মনে করেন ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক তরঙ্গ হয়তো মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। এর আসলে বৈজ্ঞানিক কোনো ব্যাখ্যা বা প্রমাণ পাওয়া যায়নি। জার্মানির কনস্ট্রাক্টর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের পরিচালিত নতুন এক গবেষণায় বলা হয়েছে, উচ্চক্ষমতার ফাইভ-জি নেটওয়ার্কের তরঙ্গ চরম পরিস্থিতিতেও মানুষের স্বাস্থ্যের কোনো ক্ষতি করে না।

পিএনএএস নেক্সাস নামের একটি বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধে প্রকাশিত সেই গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, গবেষণা চলাকালে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ফাইভ-জি নেটওয়ার্কের তড়িৎ-চুম্বকীয় তরঙ্গের সামনে মানুষের ত্বকের কোষ সরাসরি উন্মুক্ত করা হয়েছিল। তবে ফাইভ-জি নেটওয়ার্কের তরঙ্গ মানুষের ত্বকের ওপরে কোনো প্রভাব তৈরি করেনি।

বিজ্ঞানীরা সরাসরি মানুষের চামড়ার কোষে ৫জি তরঙ্গ প্রয়োগ করে দেখেছেন। ফলাফল: কোনো ধরনের ক্ষতি হয়নি-না জিন বদলেছে, না ডিএনএতে কোনো প্রভাব পড়েছে। শুধু তাপ সৃষ্টি ছাড়া আর কিছুই ঘটেনি।

৫জি প্রযুক্তিতে যে তরঙ্গ ব্যবহার হয় তাকে বলা হয় রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি (আরএফ) তরঙ্গ। এগুলো হলো নন-আইয়নাইজিং রেডিয়েশন, মানে হলো এরা কোষ বা ডিএনএ ভেঙে ফেলতে পারে না। শুধু তাপ সৃষ্টি করতে পারে, যেমন মাইক্রোওয়েভ ওভেন করে। তবে মোবাইল টাওয়ার থেকে যে মাত্রায় তরঙ্গ আসে, তা এতটাই কম যে শরীরে ক্ষতি করার মতো নয়।

২০১১ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) একটি শাখা আইএআরসি রেডিও তরঙ্গকে “সম্ভবত ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকতে পারে” এমন একটি ক্যাটাগরিতে রেখেছিল। কিন্তু এই গ্রুপে কফি আর আচাড়ও আছে! অর্থাৎ ঝুঁকির প্রমাণ খুবই দুর্বল।

আরও সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে ভিন্ন কথা। ২০২৪ সালে হু-এর সমর্থনে একটি বড় গবেষণায় দেখা গেছে-মোবাইল ব্যবহার আর মস্তিষ্কের ক্যান্সারের মধ্যে কোনো সম্পর্ক পাওয়া যায়নি। অস্ট্রেলিয়ার আরেকটি বিশাল গবেষণাও একই ফল দিয়েছে। যেহেতু এখন পর্যন্ত ৫জি নিয়ে বড় কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকির প্রমাণ পাওয়া যায়নি, তাই অযথা আতঙ্কের কারণ নেই।

সূত্র: রয়টার্স, টাইমস অব ইন্ডিয়া

কেএসকে/এএসএম

Read Entire Article