ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্রের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে

3 hours ago 2

সম্প্রতি নতুন কয়েকটি দেশের স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে ১৫৭ দেশের স্বীকৃতি পেল ফিলিস্তিন। তালিকায় আছে ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশ। অবশ্য তাতেও চোখ রাঙানি কমছে না ইসরায়েল ও তার প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের।

এমন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই স্বীকৃতিগুলো তাৎক্ষণিকভাবে বড় কোনো পরিবর্তন না আনলেও ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের ওপর রাজনৈতিক চাপ ক্রমেই বাড়ছে। তবে এসব দেশের ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার পেছনে অভ্যন্তরীণ চাপসহ মানবিক কারণ রয়েছে বলেও মনে করেন তারা।

জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে ১৫৭টি ইতোমধ্যে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে—মানে ৮০ শতাংশের বেশি দেশ। ফলে ইসরায়েল যেভাবেই প্রকাশ্যে প্রতিক্রিয়া দেখাক না কেন, এর ফলে তার ওপর চাপ বাড়ছে।- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওবায়দুল হক

এসব পশ্চিমা দেশগুলো সাধুবাদ জানিয়েছে ফিলিস্তিনের দীর্ঘদিনের মিত্র বাংলাদেশ। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. নজরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘এসব দেশকে আমরা সাধুবাদ জানাই। এই পশ্চিমা দেশগুলোর ফিলিস্তিনের সমর্থন নিঃসন্দেহে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে। যতক্ষণ পর্যন্ত একটি কার্যকর রাষ্ট্র গড়ে তোলা সম্ভব হবে না, ততক্ষণ বাংলাদেশ ফিলিস্তিনের পক্ষে কাজ করবে।’

সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে ফ্রান্সসহ আরও ছয়টি দেশ। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) বার্ষিক অধিবেশনের আগে নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত উচ্চপর্যায়ের এক সম্মেলনে সংস্থাটির স্থায়ী সদস্য দেশ ফ্রান্সসহ ছয় দেশের নেতারা এ স্বীকৃতির ঘোষণা দেন। অন্য দেশগুলো হলো- অ্যান্ডোরা, বেলজিয়াম, লুক্সেমবার্গ, মাল্টা ও মোনাকো। এর মধ্য দিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী পাঁচ সদস্যের মধ্যে চারটি দেশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে গ্রহণ করলো। এখনো স্বীকৃতি দেয়নি কেবল যুক্তরাষ্ট্র।

অবশ্যই নতুন দেশগুলোর স্বীকৃতি ফিলিস্তিনের জন্য ভালো খবর। তবে এসব দেশের স্বীকৃতি প্রত্যাখ্যান করার মতো মানসিকতা-সক্ষমতা দুটোই যুক্তরাষ্ট্রের আছে।- জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রনি বসাক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওবায়দুল হক জাগো নিউজকে বলেন, ‘নতুন ছয়টি দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিলেও ইমিডিয়েট কোনো পরিবর্তন আমরা দেখবো না। তবে এ স্বীকৃতিকে ছোট করে দেখারও কোনো কারণ নেই। জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে ১৫৭টি ইতোমধ্যে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে—মানে ৮০ শতাংশের বেশি দেশ। ফলে ইসরায়েল যেভাবেই প্রকাশ্যে প্রতিক্রিয়া দেখাক না কেন, এর ফলে তার ওপর চাপ বাড়ছে।’

আরও পড়ুন
ফিলিস্তিনকে বিভিন্ন দেশের স্বীকৃতি দেওয়ার অর্থ কী? 
ইসরায়েলের জন্য ‘রেড লাইন’ ঘোষণা করলো সৌদি-ফ্রান্স 
এখন পর্যন্ত ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিলো যে কয়টি দেশ 

তিনি বলেন, ‘স্বীকৃতি নিয়ে সমালোচনাও আছে। অনেকে বলছেন ‘টু লিটল, টু লেট’, অর্থাৎ অনেক দেরিতে ও সামান্য পদক্ষেপ। তবে এ সমালোচনার মধ্যেও স্বীকৃতির সিগনিফিকেন্স আছে। ইসরায়েল ইতোমধ্যে ওয়েস্ট ব্যাংকের আরও জায়গা দখল করার হুমকি দিচ্ছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র বলছে, এটি হামাস ও অন্য সংগঠনকে শক্তিশালী করবে। কিন্তু বাস্তবে এ স্বীকৃতিগুলো ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র—দুই দেশের ওপরই ক্রমবর্ধমান চাপ তৈরি করছে।’

অধ্যাপক ওবায়দুল হক বলেন, ‘ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া ছয় দেশের পেছনের কারণ এক নয়। কোথাও ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ কাজ করেছে, কোথাও ঐতিহাসিক সম্পর্ক প্রভাব ফেলেছে। আবার কোথাও দেশীয় রাজনীতি শান্ত করার উদ্দেশ্যে এ স্বীকৃতি এসেছে। পাশাপাশি এমন দেশও আছে যারা মানবিকতা, মানবাধিকার বা একেবারে হিউম্যানিটারিয়ান অবস্থান থেকেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রনি বসাক বলেন, ‘অবশ্যই নতুন দেশগুলোর স্বীকৃতি ফিলিস্তিনের জন্য ভালো খবর। তবে এসব দেশের স্বীকৃতি প্রত্যাখ্যান করার মতো মানসিকতা-সক্ষমতা দুটোই যুক্তরাষ্ট্রের আছে। তাই ফিলিস্তিনের ওপর চলমান আগ্রাসন ঠেকানোর জন্য যে এই দেশগুলোর স্বীকৃতি খুব প্রভাব ফেলবে তা বলা যাচ্ছে না। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে গণহত্যা বন্ধে এখনো সময় লাগবে।’

তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী পাঁচ সদস্য হলো- যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, রাশিয়া ও চীন। এই পাঁচ দেশের মধ্যে কোনো একটি দেশ যদি নিরাপত্তা পরিষদে কোনো প্রস্তাবের ওপর ভেটো (নারাজি) দেয়, তবে সেই প্রস্তাব বাতিল হয়ে যায়। ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের আগে ১৯৮৮ সালে স্থায়ী সদস্য রাশিয়া ও চীন ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।’

রনি বসাক বলেন, ‘নিরাপত্তা পরিষদের চার সদস্য দেশ ফিলিস্তিনের পক্ষে থাকলেও ভেটো ক্ষমতাধারী যুক্তরাষ্ট্রই যথেষ্ট তাদের যে কোনো সিদ্ধান্ত উল্টে দিতে।’

মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দিতে গিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অবশ্য গাজায় চলমান যুদ্ধ শিগগির বন্ধ করার জন্য জরুরি পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘গাজায় যুদ্ধ থামাতে হবে, আমাদের এটি অবিলম্বে রোধ করতে হবে।’

জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরায়েলের দূত ড্যানি ড্যানন ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতির বিষয়টি ‘সার্কাস’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। ইসরায়েলের কর্মকর্তারা জানান, পশ্চিমাদের এই স্বীকৃতির জবাবে তারা পশ্চিম তীরের কিছু অংশ ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্ত করার পরিকল্পনা করেছেন। যদিও বহু আগে থেকেই এ অঞ্চলে অবৈধ বসতি তৈরি করে আসছে ইসরায়েল।’

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় অব্যাহতভাবে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েল। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, প্রায় দুই বছরের এই সংঘাতের মধ্যে ৬৫ হাজার ৩৮২ জনের মৃত্যু এবং প্রায় এক লাখ ৬৬ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছে।’

জাতিসংঘের একটি তদন্ত প্রতিবেদনে এই আক্রমণকে জাতিগত নিধন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। দীর্ঘদিনের রক্তক্ষয়ী সংঘাত চলমান অবস্থায় সম্প্রতি বেশ কয়েকটি পশ্চিমা দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার অঙ্গীকার করে। তারই ধারাবাহিকতায় যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও পর্তুগাল ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়। পরদিন ফ্রান্সসহ আরও ছয় দেশের স্বীকৃতি পায় ফিলিস্তিন।

বিশ্বজুড়ে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন বাড়ার পরও গাজায় ইসরায়েলি হামলা থামেনি। মঙ্গলবার গাজা উপত্যকায় অন্তত ৩৮ জন নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলি বাহিনী গাজার উত্তরাঞ্চলীয় শহরে প্রবেশ করে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে।

জেপিআই/এএসএ/এমএফএ/জিকেএস

Read Entire Article