ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে ইসারায়েলে তাণ্ডব, বাস্তুচ্যুত ৩৫ হাজার
গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি হামলা থামেনি। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর 'অপারেশন আয়রন ওয়াল' অভিযানের কারণে অধিকৃত পশ্চিম তীর থেকে ৩৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। শুধু স্থানীয় বাসিন্দাই নয়, শরণার্থী শিবিরের অধিবাসীদেরও উচ্ছেদ করা হচ্ছে।
২১ জানুয়ারি থেকে ইসরায়েলি বাহিনী জেনিন ও আশপাশের শহর এবং শরণার্থী শিবিরে অভিযান চালায়। এতে অন্তত ২৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হন। ২৭ জানুয়ারি তুলকারম শহরে নতুন করে হামলায় আরও ৮ জনের মৃত্যু হয়। নিহতদের মধ্যে দুই বছর বয়সী এক শিশুও ছিল, যাকে ইসরায়েলি এক স্নাইপার গুলি করে হত্যা করে।
এ ছাড়া অধিকৃত এই ভূখণ্ডের নূর-শামস শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি সেনাদের অভিযান চলাকালে আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা এক নারী নিহত হয়েছেন। হামলায় ওই নারীর গর্ভের সন্তানও নিহত হয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যের সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি সেনারা জেনিন, তুলকারাম, নুর শামস, তুবাস, ফারা’আ, তামুনসহ বিভিন্ন এলাকার বাড়িঘর ধ্বংস করছে এবং ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করছে। ইসরায়েলি সেনাদের দাবি, এসব এলাকায় সশস্ত্র প্রতিরোধ যোদ্ধাদের আস্তানা রয়েছে।
তবে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা বলছেন, তারা বছরের পর বছর ধরে এসব এলাকায় বসবাস করে আসছেন এবং এখন তাদের পূর্বপুরুষের ভিটেমাটি ছাড়তে বাধ্য করা হচ্ছে।
অধিকৃত পশ্চিম তীরের বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিরা অস্থায়ী শিবিরে আশ্রয় নিচ্ছেন, যেখানে মৌলিক প্রয়োজনীয়তার অভাব রয়েছে। খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং চিকিৎসাসেবার সংকট দেখা দিয়েছে।
অন্যদিকে গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকলেও ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি। রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) মন্ত্রিসভার বৈঠকে তিনি বলেন, এই যুদ্ধবিরতি একটি অস্থায়ী পদক্ষেপ, এর মেয়াদ কখন শেষ হবে, তা নির্ধারণ করবে তেল আবিব।
যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা ৩ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা বিলম্বিত হয়েছে। নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়ে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এই সফরের পরই ট্রাম্প ঘোষণা দেন, ফিলিস্তিনিদের পশ্চিম তীর থেকে উচ্ছেদ করে মিসর ও জর্ডানে পাঠানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের দপ্তর ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, যদি আমরা একটি সুসংগত কর্মপরিকল্পনার কথা বলি, তাহলে বিস্তারিত জানার জন্য অপেক্ষা করা উচিত। আমরা গাজায় বসবাসকারী প্রায় ১২ লাখ ফিলিস্তিনির কথা বলছি, যাদের জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্য সমস্যার দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল।
এদিকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগ সত্ত্বেও ইসরায়েলি সেনারা পশ্চিম তীরে সামরিক অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন।
সংবাদ সংস্থা বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ক্ষমতায় ফেরায় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু প্রকাশ্যেই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। তিনি ট্রাম্পকে ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় বন্ধু বলে অভিহিত করেছেন।
নেতানিয়াহু বলেন, বাইডেন প্রশাসনের অধীনে যেসব অস্ত্র আটকে ছিল, ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর সেগুলোর সরবরাহ পুনরায় চালু করেছেন। তিনি নির্দিষ্ট কিছু ইহুদি বসতির ওপর আরোপিত ‘অন্যায় নিষেধাজ্ঞা’ প্রত্যাহার করেছেন। এ ছাড়া জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএকে আর মার্কিন তহবিল না দেওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন।
ইসরায়েলের এই সামরিক অভিযান ও মার্কিন সমর্থনকে কেন্দ্র করে পশ্চিম তীরের পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হয়ে উঠছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, যুদ্ধবিরতির আলোচনার মধ্যেও পশ্চিম তীরে গণউচ্ছেদ ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতকে আরও গভীর সংকটে ঠেলে দেবে।
সূত্র : আল-জাজিরা ও মিডল ইস্ট মনিটর