ফেল করায় ক্লাসে ঢুকে অর্ধশত শিক্ষার্থীকে পেটালেন বাগছাস নেতা

2 hours ago 1

রংপুরে অর্ধবার্ষিক পরীক্ষায় ফেল করায় বিদ্যালয়ে ঢুকে প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থীকে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে বিদ্যালয়ের অ্যাডহক কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে।

গত ৪ সেপ্টেম্বর নগরীর হারাটি উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। তবে বিষয়টি জানাজানি হয় মঙ্গলবার (২২ সেপ্টেম্বর)।

অভিযুক্ত ইমতিয়াজ আহমেদ ইমতি বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) রংপুর মহানগর কমিটির আহ্বায়ক। গত ফেব্রুয়ারি বিদ্যালয়ের অ্যাডহক কমিটির সভাপতি হন তিনি। ইমতি ঢাকার বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকের শিক্ষার্থী।

খোঁজ নিেয়ে জানা গেছে, গত ৪ সেপ্টেম্বর দুপুরে বিদ্যালয়ে যান ইমতিয়াজ আহমেদ ইমতি। শ্রেণিকক্ষে ঢুকে ফেল করা শিক্ষার্থীদের বাঁশের লাঠি দিয়ে পেটাতে থাকেন। এসময় উপস্থিত কোনো শিক্ষক তাকে বাধা দেননি।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অভিযোগ, অর্ধবার্ষিক পরীক্ষায় বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই ফেল করেছে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে বিদ্যালয়ে যান ইমতিয়াজ আহমেদ ইমতি। শ্রেণিকক্ষে ঢুকে অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের যারা ফেল করেছে, তাদের বাঁশের লাঠি দিয়ে পেটাতে থাকেন।

মারধরের শিকার কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, অভিযুক্ত ইমতি শিক্ষার্থীদের কাছে তাদের পরীক্ষার রেজাল্ট জানতে চান। এসময় যারা ফেল করেছে তাদের পেটাতে শুরু করেন। সেখানে শিক্ষকরা উপস্থিত থাকলেও তারা কিছু বলেননি।

ভুক্তভোগী নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর ভাষ্য, ‌‘পেছন দিক থেকে ক্লাসে ঢুকে এক এক করে জানতে চাইছে রেজাল্ট কী? এসময় যে বলছে ফেল, তাকেই মারছে। আমি দুই সাবজেক্টে ফেল বলছি। আমাকে তিনটি আঘাত করেছে। অন্যদের আরও বেশি মারছে।’

এক শিক্ষার্থীর চাচা ইয়াকুব আলী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘সভাপতি কেন বাচ্চাদের মারবে? আমার ভাতিজিকে মারছে। হাত ফুলে গেছে তার। পরে ওষুধ নিয়ে খাওয়াইছি।’

রফিকুল ইসলাম নামের আরেক অভিভাবক অভিযোগ করে বলেন, ‘এ ঘটনার পর আমরা অভিভাবকরা বিদ্যালয়ে গেলে ইমতি প্রথমে ক্ষমা চান। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই তিনি ফোন দিয়ে পুলিশের গাড়ি নিয়ে আসেন। এতে অভিভাবকরা ক্ষুব্ধ হন। পরে ইমতি লোক মারফত আমাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। এত বড় একটা অপরাধের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না দিয়ে প্রধান শিক্ষক ধামাচাপা দিয়েছেন।’

ঘটনার এতদিন পার হলেও অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে তারই পক্ষে কথা বলেছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তার দাবি, ঘটনাটি মীমাংসা করেছেন। তবে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জানান, বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীকে শারীরিক নিযাতন করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তাকে এ বিষয়টি জানানো হয়নি।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত ইমতিয়াজ আহমেদ ইমতি বলেন, ‘একটু রাগারাগি করছি, শাসন করছি—এ আর কী! কিন্তু এটা নিয়ে ৯৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর কোনো কমপ্লেইন নেই। আমি নিজেও এ এলাকার বড় ভাই। একটু শাসন করছি। এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি হচ্ছিল। এলাকার কিছু ব্যক্তি ঘটনাকে অতিরঞ্জিত করার চেষ্টা করেছিল। তবে এটা মিউচুয়াল হয়েছে।’

জানতে চাইলে মারধরের কথা অস্বীকার করেন প্রধান শিক্ষক আতাউর রহমান। তিনি বলেন, ‘উনি এসে শিক্ষার্থীদের ভালো করে পড়াশোনা ও রেজাল্ট করতে উৎসাহ দেন। পরে বিষয়টি মীমাংসা হয়েছে।’

রংপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল হাই বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের শারীরিক নির্যাতনের কোনো সুযোগ নেই। এটি নিষিদ্ধ। হারাটি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমাকে বিষয়টি জানাননি। আমি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেবো।’

জিতু কবীর/এসআর/এএসএম

Read Entire Article