ভাত বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের খাদ্যতালিকার অপরিহার্য অংশ। সকালে হালকা নাস্তা হোক বা দুপুরে বা রাতের ভোজ, ভাত ছাড়া খাবারের ছবি অনেকেরই অসম্পূর্ণ মনে হয়। কিন্তু যারা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছেন, তাদের জন্য ভাত সবসময় একটি চিন্তার বিষয়। সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে একটি ফুড হ্যাক, যেখানে বলা হচ্ছে, ভাত রান্নার পর ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা করে পরে গরম করলে তা আরও স্বাস্থ্যকর হয়। অনেকেই বিষয়টিকে অবিশ্বাস্য মনে করলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর পেছনে রয়েছে বৈজ্ঞানিক কারণ। এটি ডায়াবেটিস বা রক্তে শর্করার সমস্যা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, রান্না করা ভাত ঠান্ডা বা ফ্রিজে রাখলে তার মধ্যে থাকা কিছু ডাইজেস্টেবল স্টার্চ রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চে রূপান্তরিত হয়।
ভারতীয় ডায়েটিশিয়ান রাশি চাহাল জানান, রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চ এক ধরনের আঁশের মতো কাজ করে। এটি শরীরে পুরোপুরি হজম হয় না, ফলে খাবারের পর রক্তে শর্করার মাত্রা ধীরে ধীরে বাড়ে।
ডা. মনোজ আগারওয়াল বলেন, এই প্রক্রিয়ায় ভাতের মোট স্টার্চ কমে না, তবে এর ধরন বদলে যায়। ফলে খাবারের পর হঠাৎ রক্তে শর্করার বৃদ্ধি কিছুটা কমে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এটি কোনো ‘ম্যাজিক কিউর’ নয়, তবে ছোট পরিবর্তন হিসেবে কার্যকর। গবেষণায় দেখা গেছে, ঠান্ডা করে পুনরায় গরম করা ভাত খেলে খাবারের পর রক্তে শর্করার মাত্রা প্রায় ১০ থেকে ২০ শতাংশ কম হতে পারে।
ডা. আগারওয়াল পরামর্শ দেন, রান্না করা ভাত সর্বোচ্চ দুই ঘণ্টার মধ্যে ফ্রিজে রাখতে হবে এবং খাওয়ার আগে ভালোভাবে গরম করতে হবে। এটি ভাতকে নিরাপদ রাখে এবং রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চও বজায় রাখে। তবে সতর্ক থাকতেও হবে। কারণ, ভাত ঠিকভাবে না রাখলে ব্যাসিলাস সেরিয়াস নামের ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে পারে, যা ফুড পয়জনিংয়ের কারণ হতে পারে।
রাশী চাহাল আরও বলেন, রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চ কেবল রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে না, এটি অন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী। এটি প্রিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে, অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি করে, প্রদাহ কমায় এবং দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে। ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণেও সহায়তা পাওয়া যায়।
সারসংক্ষেপে, রান্না করা ভাত ঠান্ডা করে পরে গরম করে খেলে এতে রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চ তৈরি হয়, যা রক্তে শর্করার প্রভাব কমায় এবং হজমে সহায়তা করে। এটি কোনো অলৌকিক সমাধান নয়, বরং এক ধরনের স্মার্ট কিচেন হ্যাবিট। যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত বা ভাত খেতে পছন্দ করেন কিন্তু রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান, তারা এই পদ্ধতি একবার চেষ্টা করে দেখতে পারেন। তবে সবসময় চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ, কারণ সবার শরীর একই রকম নয়।
সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস

2 hours ago
5









English (US) ·