বকেয়া বেতন না পাওয়ায় কিংস ছাড়লেন তারিক কাজী

1 hour ago 5

জামাল ভূঁইয়ার পর প্রবাসী ফুটবলার হিসেবে নাম লিখিয়েছিলেন তারিক রায়হান কাজী। ফিনল্যান্ড প্রবাসী এই ডিফেন্ডার জাতীয় দলের নিয়মিত সদস্য এবং ঘরোয়া ফুটবলে খেলে আসছেন বসুন্ধরা কিংসে। বাংলাদেশ ফুটবল লিগের টানা পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংস বছরখানেক ধরে তার বকেয়া বেতন দিচ্ছে না অভিযোগ করে ক্লাবটির সাথে চুক্তি বাতিল করেছেন এই অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার।

শুক্রবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে বিশাল এক পোস্ট দিয়ে নিজের অবস্থান উপস্থাপন করেছেন জাতীয় দলের নির্ভরযোগ্য এই ডিফেন্ডার। ফেসবুকে দেওয়া তার স্ট্যাটাস পুরোটাই তুলে ধরা হলো-

'আজ আমি বকেয়া বেতন পরিশোধ না হওয়ার কারণে আইনগতভাবে আমার চুক্তি বাতিল করেছি বসুন্ধরা কিংসের সাথে।

একজন ফুটবলারের জীবনে এমন কিছু মুহূর্ত আসে, যখন নীরবতা বহন করা প্রচন্ড বোঝা হয়ে দাঁড়ায়।

এক বছরেরও বেশি সময় ধরে আমি অনিয়মিত ও বিলম্বিত বেতন পরিশোধের মধ্য দিয়ে গিয়েছি অনিশ্চয়তার এমন এক সময়, যা আমাকে শুধু একজন পেশাদার হিসেবেই নয়, একজন মানুষ হিসেবেও পরীক্ষা করেছে। এটি শুধু আর্থিক কষ্ট ছিল না; এটি ছিল এক মানসিকচাপ, যা প্রকৃত পেশাদাররা নিঃশব্দে বহন করে। তবুও প্রতিদিন আমি একই ভালোবাসা নিয়ে জেগেছি মাঠে সবকিছু উজাড় করে দিয়েছি, আর অন্তরে লড়েছি এক নীরব যুদ্ধ: ভালোবাসা ও অবিচারের মাঝে।

এই পুরো সময় আমি বেছে নিয়েছি ধৈর্য, পেশাদারিত্ব ও শ্রদ্ধা এমনকি, যখন পরিস্থিতি আমার সহ্যের সীমা ছুঁয়ে গিয়েছিল। আমি বিশ্বস্ত থেকেছি ক্লাবের প্রতীকে, সতীর্থদের প্রতি এবং সেই সমর্থকদের প্রতি যারা সবসময় পাশে থেকেছেন। আমার এ সবকিছুই ছিল ভালোবাসার কারণে ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা, দেশের প্রতি ভালোবাসা, আর সেই মানুষগুলোর প্রতি ভালোবাসা যারা স্টেডিয়াম পূর্ণ করেছে এক বুক আশায় ও হৃদয় দিয়ে।

আমার গভীর কৃতজ্ঞতা জানাই আমার সতীর্থদের, অস্কার ক্রজন, টিটা ভ্যালেরিউ এবং মারিও গোমেজসহ পুরো টেকনিক্যাল স্টাফকে, যারা নিরলস পরিশ্রম করেছেন, এবং সেই সমর্থকদের, যাদের কণ্ঠ আমাকে শক্তি দিয়েছে যখন সবকিছু অনিশ্চিত মনে হয়েছে।

আমি বাংলাদেশ জাতীয় দলকেও ধন্যবাদ জানাতে চাই। যখনই আমি লাল-সবুজ জার্সি পরে মাঠে নেমেছি, সেটি আমার কাছে ছিল পবিত্র এক অনুভূতি। সেই মুহূর্তগুলোতে আমি সব কষ্ট ভুলে গিয়েছি কারণ বাংলাদেশের হয়ে খেলা আমাকে মনে করিয়ে দিয়েছে, ফুটবল তার আসল রূপে এখনো পবিত্র।

বাংলাদেশের ফুটবল একটি নতুন অধ্যায়ের প্রাপ্য। এমন এক অধ্যায় যেখানে থাকবে স্বচ্ছতা, সততা ও ন্যায্যতা, প্রতিটি খেলোয়াড়ের জন্য, যারা এই খেলাটির জন্য নিজেদের উৎসর্গ করে।

আমি খুব ভালো করেই জানি, দেশে এমন অনেক খেলোয়াড় আছেন যারা আরও কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। পেশাদার খেলোয়াড় যারা এখনো নীরবে কষ্ট পাচ্ছেন, কারণ কিছু ক্লাব নিয়মিতভাবে খেলোয়াড়দের প্রাপ্য বেতন পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়। তাদের সংগ্রামগুলো হয়তো শোনা যায় না, কিন্তু তাদের অবদানই এই খেলাটিকে বাঁচিয়ে রাখে।

এই বিদায় কোনো রাগ থেকে নয় বরং সত্য, মর্যাদা এবং কৃতজ্ঞতা থেকে।

আমি গর্বিত প্রতিটি ঘামের ফোঁটার জন্য, প্রতিটি লড়াইয়ের জন্য, প্রতিটি ট্যাকলের জন্য এবং প্রতিটি মুহূর্তের জন্য যখন আমি বসুন্ধরা কিংসের জার্সি পরে মাঠে নেমেছি গত ছয় বছরে।

আমি বসুন্ধরা কিংস ছেড়ে যাচ্ছি গর্ব নিয়ে, কোন কষ্ট নিয়ে নয়। পরিস্থিতি যেমনই হোক, আমার হৃদয় ভরপুর থাকবে সেই বিশেষ মুহূর্তগুলোতে, যা আমি সারাজীবন মনে রাখব!

আমার গল্প এখানেই শেষ নয়। এটি কেবল নতুন অধ্যায়ের শুরু।'

আরআই/এমএমআর/এএসএম

Read Entire Article