বছরজুড়ে আগুনের উত্তাপ, বহু প্রাণহানি-ক্ষয়ক্ষতি
* বছরজুড়েই ছোট-বড় আগুনের ঘটনা ছিল অগণিত* ১০ মাসে ১৯ হাজার ৯৩৬টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা * ক্ষতির পরিমাণ ৩৯২ কোটি ৬৮ লাখ ২ হাজার ৩৭৯ টাকা* টঙ্গীতে রাসায়নিকের গুদামের আগুনে নিহত চার ফায়ারকর্মী * মিরপুরে রাসায়নিকের গুদামে আগুনে মারা যান ১৭ জন ২০২৫ সালের ২১ জুলাই। দিনটি ছিল সোমবার। ঘড়ির কাঁটায় আনুমানিক দুপুর ১টা বেজে ১৮ মিনিট। প্রতিদিনের মতোই স্কুল শেষ করে ঘরে ফেরার আগ মুহূর্তে শেষ ক্লাসে মনোযোগী ছিল রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা। হঠাৎ বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান (এফ-৭ বিজিআই) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে স্কুলটির একটি ভবনে আছড়ে পরে। মুহূর্তের মধ্যেই বিকট শব্দে আগুন ছড়িয়ে পড়ে ভবনজুড়ে। সেই আগুনের তীব্র লেলিহান শিখায় প্রাণ দিতে হয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ কমপক্ষে ৩৫ জনকে, যাদের বেশির ভাগই শিশু। এ ঘটনায় আহত হয় আরও ১৬৫ জন। যদিও নিহতের সংখ্যা নিয়ে বেশ বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। ১৪ অক্টোবর সকালে পরিবারের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে কাজে যোগ দিতে বেরিয়ে পড়েন রাজধানীর মিরপুরের রূপনগর আবাসিক এলাকার সরদার গার্মেন্টস ও কসমিক ফার্মা নামের দুটি প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজে যোগ
* বছরজুড়েই ছোট-বড় আগুনের ঘটনা ছিল অগণিত
* ১০ মাসে ১৯ হাজার ৯৩৬টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা
* ক্ষতির পরিমাণ ৩৯২ কোটি ৬৮ লাখ ২ হাজার ৩৭৯ টাকা
* টঙ্গীতে রাসায়নিকের গুদামের আগুনে নিহত চার ফায়ারকর্মী
* মিরপুরে রাসায়নিকের গুদামে আগুনে মারা যান ১৭ জন
২০২৫ সালের ২১ জুলাই। দিনটি ছিল সোমবার। ঘড়ির কাঁটায় আনুমানিক দুপুর ১টা বেজে ১৮ মিনিট। প্রতিদিনের মতোই স্কুল শেষ করে ঘরে ফেরার আগ মুহূর্তে শেষ ক্লাসে মনোযোগী ছিল রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা। হঠাৎ বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান (এফ-৭ বিজিআই) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে স্কুলটির একটি ভবনে আছড়ে পরে। মুহূর্তের মধ্যেই বিকট শব্দে আগুন ছড়িয়ে পড়ে ভবনজুড়ে। সেই আগুনের তীব্র লেলিহান শিখায় প্রাণ দিতে হয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ কমপক্ষে ৩৫ জনকে, যাদের বেশির ভাগই শিশু। এ ঘটনায় আহত হয় আরও ১৬৫ জন। যদিও নিহতের সংখ্যা নিয়ে বেশ বিতর্ক তৈরি হয়েছিল।
১৪ অক্টোবর সকালে পরিবারের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে কাজে যোগ দিতে বেরিয়ে পড়েন রাজধানীর মিরপুরের রূপনগর আবাসিক এলাকার সরদার গার্মেন্টস ও কসমিক ফার্মা নামের দুটি প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজে যোগ দেন তারা। বেলা সাড়ে ১১টা, হঠাৎ বিভৎস অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। অনুমোদনহীন রাসায়নিক গুদাম থেকে সূত্রপাত হওয়া আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে পাশের পোশাক কারখানায়। এই আগুনে মারা যান দুই প্রতিষ্ঠানের ১৭ জন কর্মী। আহত হন আরও অনেকেই।
ফায়ার সার্ভিসের তথ্য বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে ১৯ হাজার ৯৩৬টি অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। আর এসব আগুনে পুড়ে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৯২ কোটি ৬৮ লাখ ২ হাজার ৩৭৯ টাকা। তবে হতাহতের তথ্য এখনো নিশ্চিত করতে পারেনি সংস্থাটি।
শুধু উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল বা মিরপুরের গার্মেন্টস ও রাসায়নিকের গুদামই নয়, বছরজুড়েই ছোট-বড় আগুনের ঘটনা ছিল অগণিত। আর এসব ঘটনায় প্রাণহানির সংখ্যাও কম নয়।

গত ১৮ অক্টোবর ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানববন্দরের কার্গো ভিলেজ কমপ্লেক্সে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে/ফাইল ছবি
ফায়ার সার্ভিসের তথ্য বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে ১৯ হাজার ৯৩৬টি অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। আর এসব আগুনে পুড়ে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৯২ কোটি ৬৮ লাখ ২ হাজার ৩৭৯ টাকা। তবে হতাহতের তথ্য এখনো নিশ্চিত করতে পারেনি সংস্থাটি।
আরও পড়ুন
শাহজালাল বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ২৮ ইউনিট
টঙ্গীর কেমিক্যালের গুদাম যেন মৃত্যুপুরী
রাসায়নিক গুদামে আগুন, নেভাতে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের ৫ কর্মী দগ্ধ
বছরজুড়ে অগ্নিকাণ্ডের আরও যত ঘটনা
টঙ্গীতে রাসায়নিকের গুদামে আগুন, ৪ ফায়ারকর্মী নিহত
গত ২২ সেপ্টেম্বর গাজীপুরের টঙ্গী শিল্পাঞ্চলের একটি কারখানার রাসায়নিকের গুদামে অগ্নিকাণ্ড ঘটে।
আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের সাতটি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। এ সময় রাসায়নিকের বিস্ফোরণে ফায়ার সার্ভিসের চার সদস্য ও ঘটনাস্থলের পাশের একটি দোকানের এক কর্মচারীসহ পাঁচজন দগ্ধ হন। তাদের উদ্ধার করে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ফায়ার সার্ভিসের চারজন মারা যান।
শাহজালাল বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে আগুন
গত ১৮ অক্টোবর দুপুর আড়াইটার দিকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ কমপ্লেক্সে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। খবর পেয়ে ১৩টি ফায়ার স্টেশনের ৩৭টি ইউনিটের প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। এ সময় উড়োজাহাজ চলাচল বন্ধ থাকে। আগুন নেভাতে গিয়ে আনসার বাহিনীর ২৫ সদস্যসহ মোট ৩৫ জন আহত হয়। আগুনের এ ঘটনায় অনেক টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়।
ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালে বাসাবাড়ি/আবাসিক ভবনে সবচেয়ে বেশি অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। সারাদেশে বাসাবাড়িতে মোট ৭ হাজার ১৩১টি আগুন লাগার ঘটনা ঘটে, যা অগ্নিকাণ্ডের মোট ঘটনার ২৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ।
মহাখালীর সাততলা বস্তিতে আগুন
গত ২০ আগস্ট রাজধানীর মহাখালীর সাততলা বস্তিতে আগুন লাগে। পরে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিটের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এরআগে, গত ১২ মার্চ সাততলা বস্তিতে আগুন লাগে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিটের চেষ্টায় পৌনে দুই ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুনে বহু ঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়।

গত ২১ জুলাই উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হলে আগুন ধরে যায়/ছবি: সংগৃহীত
কড়াইল বস্তিতে ৫ ঘণ্টার আগুন
গত ২৫ নভেম্বর রাজধানীর কড়াইল বস্তিতে অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এ ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিটের চেষ্টায় পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় পর নিয়ন্ত্রণে আসে আগুন। আগুনে বস্তির প্রায় দেড় হাজার ঘর-বাড়ি পুড়ে গেছে।
আরও পড়ুন
বেইলি রোডে বহুতল ভবনের নিচতলায় আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৯ ইউনিট
কড়াইল বস্তিতে বারবার আগুন, দায় কার?
মাইলস্টোনে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত ৩২, হাসপাতালে ৫১ জন
এর আগে, চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি কড়াইল বস্তিতে আগুন লাগে। আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের আটটি ইউনিট। তবে এ ঘটনায় হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
বংশালে ভবনে আগুনে একজন নিহত, আহত ১৭
গত ৭ এপ্রিল রাজধানীর পুরান ঢাকার বংশালের নাজিমুদ্দিন রোড এলাকার একটি পাঁচতলা ভবনের নিচতলায় আগুন লেগে একজন নিহত হন। আগুনের ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েন আরও ১৭ জন। ওইদিন ভোর ৪টা ১০ মিনিটের দিকে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। প্রায় ৪০ মিনিট চেষ্টার পর ভোর ৪টা ৫০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
‘আমাদের দেশের মানুষ কখনো ফায়ার কোড ফলো করে বিল্ডিং তৈরি করে না। তাছাড়া আমাদের স্ট্যান্ডার্ড ফায়ার কোডও নেই। আইনেও অনেক রকম জটিলতা আছে। আইন না মেনে যারা ভবন তৈরি করছে তাদের বিরুদ্ধে কখনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এতে মানুষজন বিষয়টি গায়ে লাগাচ্ছে না।’ —ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আলী আহমেদ খান, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সাবেক মহাপরিচালক

গত ৫ মে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত রাজধানীর বেইলি রোডের একটি ভবন/ছবি: মাহবুব আলম
বেইলি রোডে রেস্তোরাঁয় আগুন, ১৮ জনকে জীবিত উদ্ধার
গত ৫ মে রাজধানীর বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টারের ভূগর্ভস্থ (বেসমেন্ট) তলায় আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের নয়টি ইউনিটের প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। একইসঙ্গে ভবনের ছাদে আশ্রয় নেওয়া ১৮ জনকে জীবিত উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস। উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে সাতজন পুরুষ, নয়জন নারী ও দুইজন শিশু ছিল।

গত ১০ মার্চ রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে/ছবি: জাগো নিউজ
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে আগুন, ৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি
গত ১০ মার্চ রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে অগ্নিকাণ্ড ঘটে। পৌনে এক ঘণ্টার চেষ্টায় তা নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিস। এ ঘটনায় আনুমানিক ক্ষতির পরিমাণ পাঁচ লাখ টাকা। তবে দ্রুত উদ্ধার অভিযানে আনুমানিক ৫০ লাখ টাকার সম্পত্তি ক্ষতির হাত থেকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে বলে জানায় সংশ্লিষ্টরা।
আরও পড়ুন
বংশালে অগ্নিকাণ্ডে নিহত ১, ধোঁয়ায় অসুস্থ ৬ জন ঢাকা মেডিকেলে
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে আগুন
সাভারের আমিন বাজার পাওয়ার গ্রিডে ভয়াবহ আগুন
মহাখালীর সাততলা বস্তিতে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৭ ইউনিট
আমিনবাজারে পাওয়ার গ্রিডে আগুন
চলতি বছরের গত ১১ মার্চ সাভারের আমিনবাজার পাওয়ার গ্রিডে আগুন লাগে। সকাল সোয়া ৭টার দিকে অগ্নিকাণ্ডের সূচনা হয়। আগুন নেভাতে কাজ করে ফায়ার সার্ভিসের নয়টি ইউনিট।
পল্লবীতে বহুতল ভবনে আগুন
চলতি বছরের গত ২৫ মার্চ রাজধানীর পল্লবীর ১২ তলা ভবনের ৮ তলায় লাগা আগুনে মাসুদা বেগম নামের ৭০ বছরের এক নারী নিহত হন।
শাহজাদপুরে হোটেলে আগুন
গত ৩ মার্চ রাজধানীর ভাটারা থানাধীন শাহজাদপুর এলাকায় সৌদিয়া নামের একটি আবাসিক হোটেলে আগুন লেগে চারজন নিহত হন। নিহতদের সবাই পুরুষ।
গাবতলী শাহী মসজিদ বস্তিতে আগুন
গত ৬ মার্চ রাজধানীর গাবতলীতে ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটির সামনে শাহী মসজিদ বস্তিতে আগুন লাগে। আগুনে বস্তির প্রায় ১৫০-২৫০টি ঘর পুড়েছে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিট এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

চলতি বছরের ৬ মার্চ রাজধানীর ভাষানটেকের বিআরপি বস্তিতে আগুন লাগে/ছবি: ছবি: তৌহিদুজ্জামান তন্ময়
ভাষানটেকের বিআরপি বস্তিতে আগুন
৬ মার্চ রাজধানীর ভাষানটেকের বিআরপি বস্তিতে আগুন লাগে। আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট।
গুলিস্তানে সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেটে আগুন
চলতি বছরের গত ২ আগস্ট রাজধানীর গুলিস্তানের সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেটে আগুন লাগে। পরে ফায়ার সার্ভিসের ১১টি ইউনিটের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
চট্টগ্রামে তোয়ালে তৈরির কারখানায় আগুন
গত ১৬ অক্টোবর চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (সিইপিজেড) এলাকার অ্যাডামস ক্যাপস অ্যান্ড টেক্সটাইল লিমিটেড ও জিহং মেডিকেল কোম্পানির গুদামে আগুন লাগে। প্রায় সাড়ে ১৭ ঘণ্টার চেষ্টার পর পরদিন (১৭ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিস। এর আগের দিন বেলা ২টার দিকে সিইপিজেডের সাততলা কারখানা ভবনটিতে আগুন লাগে।
নরসিংদীতে স্পিনিং মিলে আগুন
গত ৬ ডিসেম্বর দিবাগত রাত ১০টার দিকে নরসিংদীর শীলমান্দিতে এনআর নামের একটি স্পিনিং মিলে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিটের প্রায় সাত ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়। আগুনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় বলে জানায় মিল কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয়রা।

গত ২৬ ডিসেম্বর রাজধানীর গুলিস্তানের জিরো পয়েন্ট এলাকার একটি বহুতল ভবনে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে/ছবি: ফাইল ছবি
গুলিস্তানে বহুতল ভবনে আগুন
গত শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টের খদ্দর বাজার শপিং কমপ্লেক্সের আটতলা ভবনের ছাদে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। ভবনটির ছাদের গুদামে ধর্মীয় বিভিন্ন উপকরণ (জায়নামাজ, তসবি, টুপি ইত্যাদি) মজুত করা ছিল বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। পরবর্তীতে সদরঘাট ফায়ার স্টেশনের দুটি ও সিদ্দিক বাজার স্টেশনের আটটিসহ মোট ১০টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে।
এছাড়াও চলতি বছরের প্রায় পুরো সময়টাজুড়ে আলোচনার তুঙ্গে ছিল ছোট বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। আর এসব ঘটনায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি হতাহতের ঘটনাও ছিল আলোচনায়।
অগ্নিকাণ্ড নিয়ে ফায়ার সার্ভিসের তথ্য
ফায়ার সার্ভিসের তথ্য বলছে, চলতি ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে ১৯ হাজার ৯৩৬টি অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এসব ঘটনায় ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৯২ কোটি ৬৮ লাখ ২ হাজার ৩৭৯ টাকা।

২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ওয়াহেদ ম্যানশনে আগুনে মারা যান ৭১ জন/ফাইল ছবি
অপরদিকে, বিগত ২০২৪ সালে সারাদেশে মোট ২৬ হাজার ৬৫৯টি এবং দিনে গড়ে ৭৩টি আগুনের ঘটনা ঘটেছে। বৈদ্যুতিক গোলযোগ, বিড়ি-সিগারেটের জ্বলন্ত টুকরা, চুলা এবং গ্যাস সংক্রান্ত কারণে অগ্নিকাণ্ডের এসব ঘটনা বেশি ঘটেছে। গত বছর অগ্নিকাণ্ডে সারাদেশে মোট ৪৪৬ কোটি ২৭ লাখ ২৮ হাজার ৬৯৭ টাকার সম্পদের ক্ষতি হয়। আগুন নির্বাপণের মাধ্যমে ফায়ার সার্ভিস মোট এক হাজার ৯৭৪ কোটি ৪৪ লাখ ৭২ হাজার ৮৭৫ টাকার সম্পদ রক্ষা করে। এছাড়া অগ্নিকাণ্ডে সারাদেশে ৩৪১ জন আহত ও ১৪০ জন নিহত হন। আগুন নেভানোর সময় ফায়ার সার্ভিসের ৩৭ জন বিভাগীয় কর্মী আহত হন। গত বছর উদ্ধার কাজ করতে গিয়ে প্রাণ হারান ফায়ার সার্ভিসের দুজন কর্মী।
সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি ভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২৪ সালে বাসাবাড়ি/আবাসিক ভবনে সবচেয়ে বেশি অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। সারাদেশে বাসা বাড়িতে মোট সাত হাজার ১৩১টি আগুন লাগার ঘটনা ঘটে, যা অগ্নিকাণ্ডের মোট ঘটনার ২৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ। এছাড়া খড়ের গাঁদায় চার হাজার ৫১৩টি (১৬.৯২%), রান্না ঘরে দুই হাজার ৪১১টি (৯.০৪%), দোকানে এক হাজার ৮৮৭টি, হাট-বাজারে ৯১১টি, শপিং মলে ৪৮১টি, পোশাকশিল্প ব্যতীত কলকারখানায় ৪৯৪টি, পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠানে ২৩৬টি, বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রে ২১১টি, বহুতল ভবনে (৬ তলার ওপরে) ১৫৩টি, রেস্টুরেন্ট ও হোটেলে ১৫০টি, কেপিআই ও সরকারি প্রতিষ্ঠানে ১২৯টি, হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ১২৬টি, পাট গুদাম-পাটকলে ১২৩টি, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে ৮৫টি, বস্তিতে ৮৪টি এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৭৮টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
সার্বিক বিষয়ে কথা হলে বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সাবেক মহাপরিচালক ও অগ্নি ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আলী আহমেদ খান জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের দেশের মানুষ কখনো ফায়ার কোড ফলো করে বিল্ডিং তৈরি করে না। তাছাড়া আমাদের স্ট্যান্ডার্ড ফায়ার কোডও নেই। আইনেও অনেক রকম জটিলতা আছে। আইন না মেনে যারা ভবন তৈরি করছে তাদের বিরুদ্ধে কখনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এতে মানুষজন বিষয়টি গায়ে লাগাচ্ছে না।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে ফায়ারের রেগুলেটর বডির যে সংস্থা সেটি আসলে খুবই দুর্বল। আগুন যাতে না লাগতে পারে সেই ব্যবস্থা নিতে হবে। যেটাকে বলা হয় অগ্নিপ্রতিরোধ ব্যবস্থা। বাসাবাড়ি, ভবন বা মার্কেট তৈরি করলে সেখানে আগুন প্রতিরোধের ব্যবস্থা রাখতে হবে। দুটি নির্গমন পথ সেভ রাখতে হবে। বর্তমানে যে ১০ তলা বিল্ডিং হচ্ছে, সেখানে অগ্নি নির্বাপণ পথও ঠিকমতো নেই।
আলী আহমেদ খান আরও বলেন, ‘আমাদের ফায়ার কোড নেই। সে জন্য তারা (ফায়ার সার্ভিস) ব্যবস্থা নিতে পারে না। তাদের ক্যাপাসিটি বা সক্ষমতাও নেই। মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে এই প্রক্রিয়াটি পুরোপুরি উন্নত করতে হবে।’
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সাবেক এই মহাপরিচালক আরও বলেন, ‘আমাদের ফায়ার বিগ্রেড অনেক মান্ধাতার আমলে আছে। এটাকে মডারেট (আধুনিক) করার প্রয়োজন আছে। সক্ষমতা বাড়াতে হবে। ফায়ার ফাইটিংয়ের জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি দিতে হবে। দেশে থানা বাড়ছে কিন্তু ফায়ার স্টেশন সেভাবে নেই। পাবলিক সেক্টরে ফায়ার স্টেশনগুলো বাড়াতে হবে। তাহলে যানজট থাকলেও গাড়িগুলো ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারবে। বিভিন্ন এলাকায় ছোট ছোট ফায়ার সাবস্টেশনের সংখ্যা বাড়াতে হবে।’
কেআর/এমএমকে/এমএমএআর/জেআইএম
What's Your Reaction?