বন্ধ হচ্ছে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ৯ বিভাগ

2 weeks ago 8

প্রশাসনিক কাঠামোর বাইরেও রাজশাহী সিটি করপোরেশনে খোলা হয়েছিল বিশেষ নয় বিভাগ। সেই নয় বিভাগে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয় প্রায় ২০০ কর্মকর্তা-কর্মচারী। দলীয় নেতাকর্মীদের পুনর্বাসনের জন্য নতুন বিভাগ চালুর নামে রাসিকের অর্থ অপচয়ের পথ সৃষ্টি করেছিলেন তৎকালীন মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। তবে এসব বিভাগে নিয়োজিতদের অধিকাংশই আওয়ামী রাজনৈতিক নেতাকর্মী। রাসিকের বেতন-ভাতা দেওয়া হলেও অধিকাংশ সময়ই তাদের দেখা মিলতো দলীয় মিটিং মিছিলে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে রাসিকে নিয়োজিত প্রশাসক দায়িত্ব পেলে আয়-ব্যয়ের খাত যাচাইয়ে তৎপর হয়। এসময় প্রশাসনিক কাঠামোর বাইরে সৃষ্ট বিভাগে অর্থ অপচয়ের বিষয়টি নজরে আসে। বেরিয়ে আসে তৎকালীন মেয়র লিটনের আস্থাভাজনদের নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টিও। তাই অযাচিত অর্থ অপচয় রোধে অপ্রয়োজনীয় বিভাগ বন্ধে উদ্যোগ নেয় নতুন প্রশাসক।

বিভাগগুলো হলো- সামাজিক বিরোধ নিষ্পত্তি শাখা, ধর্মবিষয়ক শাখা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ শাখা, শিক্ষা ও আইসিটি বিভাগ, আইসিটি শাখা, সিটি মিউজিয়াম ও আর্কাইভ শাখা, আইন ও বিচার বিভাগ, আইন শাখা এবং নারী ও শিশু কল্যাণ শাখা।

সিটি করপোরেশনের তথ্যমতে, রাজশাহী সিটি করপোরেশনে অনুমোদিত বিভাগ আছে ১১টি। এগুলো হলো- সচিবালয় বিভাগ, সাধারণ প্রশাসন বিভাগ, নিরাপত্তা শাখা, জনসংযোগ শাখা, ম্যাজিস্ট্রেসি শাখা, অ্যানফোর্সমেন্ট অ্যান্ড মনিটরিং শাখা, সম্পত্তি শাখা, মসজিদ শাখা, ভাণ্ডার শাখা, শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান বোটানিক্যাল গার্ডেন ও চিড়িয়াখানা এবং ক্রীড়া ও সংস্কৃতি শাখা।

এর বাইরেও ২০১৮ সালে নির্বাচিত হওয়ার পর নতুন করে নয়টি বিভাগ চালু করেন সাবেক মেয়র লিটন। এসব বিভাগের কোনো অনুমোদন না থাকলেও বাজেটের ভিত্তিতে কাজ হতো। এসব কাজ ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দেওয়া হতো রাসিকের নির্ধারিত বার্ষিক বাজেট থেকে।

নাম প্রকাশ না করে সিটি করপোরেশনের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, তারা এগুলো অনুমোদনের জন্য ঢাকা পাঠিয়েছিলেন। তবে এই বিভাগগুলো অনুমোদন হয়নি। অনুমোদন না পেলেও তৎকালীন মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন বিভাগগুলো পরিচালনা করেছেন। বিভাগ চালুর নামে বড় অংকের অর্থ অপচয়ের পথ সৃষ্টি করেছেন তিনি। এমনকি কিছু বিদেশিদের ডেকে এনেও বড় বড় অনুষ্ঠান করে টাকা জলে ঢালা হয়েছে। তাদের দাবি, বিভাগগুলোর প্রায় ৯৫ ভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারীই রাজনৈতিক নেতা।

এ বিষয়ে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. এবিএম শরীফ উদ্দিন বলেন, করপোরেশনের ৬টি সাংগঠনিক বিভাগ রয়েছেন। এই ৬টি বিভাগ ছাড়া আরও বিভাগ সাবেক মেয়র এএইচএম খাইরুজ্জামান লিটন খুলেছিলেন। তার উদ্দেশ্য ছিল, সিটি করপোরেশনের কলেবর ৯৮ স্কয়ার থেকে ৩৪২ স্কয়ার কিলোমিটার করা। এজন্য প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল। এই বৃহৎ পরিধির এলাকা বাড়বে এবং নতুন নতুন কাজ করতে হবে। অনেকগুলো শাখা প্রস্তাব করা হয়েছিল। এগুলো সাংগঠনিক কাঠামো নয়। তাই বাজেট অনুমোদিত হিসেবে এটি পরিচালিত হয়।

তিনি আরও বলেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আমরা মনে করছি, সিটি করপোরেশনের জায়গা বৃদ্ধি না হওয়া পর্যন্ত করপোরেশনের অনুমোদনের বাইরে কোনো শাখা আর ধারণ করতে চাচ্ছি না। পর্যায়ক্রমে এই শাখাগুলো বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যাতে আমাদের সাশ্রয়ী হবে। তবে শাখা থাকবে না। কেউ দক্ষ কর্মী হলে তাকে অন্য বিভাগে দেওয়া হবে। কিন্তু অপ্রয়োজনীয় শাখা ও কর্মচারী থাকবে না। মূলত সাংগঠনিক কাঠামোর মাধ্যমে অর্থ বা সিটি করপোরেশনের কাজ পরিচালনা করাটাই সমীচীন।

সুজন রাজশাহী জেলার সমন্বয়ক মিজানুর রহমান বলেন, এ বিভাগগুলো রাজনৈতিক পুনর্বাসনের জন্য তৈরি করা হয়েছিল। তাদের বেতন আমাদের রাজস্ব খাত থেকেই ব্যয় হতো। ভবিষ্যতে এরকম কোনো কিছু যাতে সিটি করপোরেশন হাতে না নেয়। এমন কিছু করা উচিত যাতে সেগুলো নাগরিকদের কাজে লাগে।

সাখাওয়াত হোসেন/জেডএইচ/এএসএম

Read Entire Article