পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গত ১ নভেম্বর থেকে দেশের বাজারগুলোতে পলিথিন নিষিদ্ধ করে সরকার। কিন্তু বরিশালের বাজারগুলোতে এখনো কমেনি পলিথিনের ব্যবহার। বরং প্রশাসনের তদারকির অভাবে মানুষ ভুলতে বসেছে পলিথিন নিষেধাজ্ঞার কথা! কেননা এখনো ‘বাজার থেকে সুপারশপ’ প্রায় সবখানে হাত বাড়ালেই মিলছে নিষিদ্ধ পলিথিন। আবার পলিথিন নিষিদ্ধের আদেশ বাস্তবায়নে গত দুই মাসে প্রশাসনের সফলতাও প্রায় শূন্যের কোটায়।
জানা গেছে, গত ১ নভেম্বর থেকে বাজারগুলোতে পলিথিন বা পলিপ্রপিলিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এই নির্দেশ অমান্য হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা রয়েছে স্থানীয় প্রশাসনে। এমন নির্দেশনা পেয়ে গত ৩ নভেম্বর থেকে বরিশালের বাজারগুলোতে শুরু হয় নিষিদ্ধ পলিথিনবিরোধী অভিযান। ওইদিন বরিশাল নগরীর নতুন বাজারে পলিথিনবিরোধী এ অভিযানের নেতৃত্ব দেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন। এ সময় বাজার থেকে কিছু পলিথিন জব্দ করা হলে অভিযানের প্রথমদিন বিধায় সতর্ক করা হয় ব্যবসায়ীদের।
বরিশাল জেলাজুড়ে এ অভিযান অব্যাহত থাকার কথা সাংবাদিকদের জানান জেলা প্রশাসক। বাস্তবে দেখা গেল উল্টো চিত্র। পলিথিন ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করা বা ব্যবহার বন্ধে গত এক মাসে বরিশালের বাজারগুলোতে জেলা প্রশাসন বা পরিবেশ অধিদপ্তরের তদারকির চিত্র চোখে পড়েনি। বরং আগের মতোই পলিথিনের ব্যবহার করতে দেখা যায় বাজারগুলোতে। এ নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতা কারোর মধ্যেই নেই কোনো মাথাব্যথা। নগরীর নতুন বাজারে গিয়ে দেখা যায় পলিথিনের অবাধ ব্যবহারের চিত্র। এই বাজারটিতে গত ৩ নভেম্বর অভিযান চালিয়েছিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন এবং পরিবেশ অধিদপ্তর। সেই বাজারে সবজি, মাছ-মাংস বা নিত্যপণ্য কেনাবেচায় পলিথিন শপিং ব্যাগই যেন শেষ ভরসা।
কথা হয় নতুন বাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে। তারা বলেন, ‘পলিথিন যেমন সহজলভ্য, তেমনি দামেও কম। তা ছাড়া পলিথিনের বিকল্প তেমন কিছু পাওয়া যাচ্ছে না, যা পাওয়া যাচ্ছে, তা-ও দামে বেশি। আবার আগের মতোই পলিথিন বাজারে এসে দিয়ে যায় ব্যবসায়ীরা। এ বাজারের ব্যবসায়ীরা দাবি করেন, গত ৩ নভেম্বর জেলা প্রশাসকের উপস্থিতিতে অভিযান পরিচালিত হয়েছে। এরপর পলিথিনবিরোধী অভিযানে নতুন করে কেউ আসেনি। শুধু নতুন বাজার নয়, নগরীর চৌমাথা বাজার, নথুল্লাবাদ বাজার, কাশিপুর বাজার, সাগরদী বাজার, রূপাতলী বাজার, বাংলা বাজার, পোর্টরোডসহ সব বাজের চিত্র সেই আগের মতোই আছে। হাত বাড়ালেই নিষিদ্ধ পলিথিন মিলছে ব্যবসায়ীদের কাছে। আর প্রকাশ্যেই তা ব্যবহার হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত দুই মাসে বরিশালে পলিথিনবিরোধী অভিযানের চিত্র তেমন নেই বললেই চলে। গত ১২ নভেম্বর রাতে র্যাবের সহযোগিতায় নগরীর পলাশপুর এলাকার একটি গোডাউনে অভিযান পরিচালনা করে দুই সহস্রাধিক কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করে পরিবেশ অধিদপ্তর।
এ ছাড়া বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে উপজেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যবহারের অপরাধে এক ব্যবসায়ীকে চার হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এ ছাড়া মহানগরীসহ জেলাজুড়েই পলিথিনের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান নেই বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।
পরিবেশ অধিদপ্তর বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মুহাম্মদ মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে। গত এক মাসে বরিশাল জেলা কার্যালয় আড়াই টন পলিথিন জব্দ করেছে। এ ছাড়া জরিমানা আদায় করেছে ১২ হাজার টাকা। জেলার বাইরে বিভাগের অন্যান্য জেলা-উপজেলাতেও অভিযান চলমান রয়েছে।
এ ছাড়া পলিথিনবিরোধী প্রচার, লিফলেট বিতরণ, সচেতনতামূলক সভা করেছি। এতে পলিথিন যে নিষিদ্ধ, সেটা সাধারণ মানুষ নিশ্চিত হয়েছে। পলিথিনের সহজলভ্যতা এবং বিকল্প কিছু বাজারে না থাকায় বাজার বাজারে এটা নিয়ন্ত্রণ কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন কঠোর অভিযান, জেলজরিমানা ছাড়া কিছু করার নেই।
পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ করতে হলে আগে সরবরাহ বন্ধ করতে হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, বরিশালে পলিথিন তৈরি হয় না। এখানে যারা মজুত করে, তাদের ধরা জরুরি। আমরা তাদের ধরার চেষ্টা করছি। এরই মধ্যে পলাশপুরে একটি বড় চালান আমরা জব্দ করেছি, সেটা সবাই জানে। তাই পলিথিনের বড় ব্যবসায়ী এবং মজুতের বিষয়ে প্রশাসনকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা চেয়েছেন জেলা প্রশাসক।
প্রসঙ্গত, ২০০২ সালের ১ মার্চ আইন করে বিষাক্ত পলিথিন উৎপাদন, বিপণন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করে বাংলাদেশ। দেশে পলিথিনের ব্যবহার কমেনি। বরং গত দুই দশকের বেশি সময় ধরে পলিথিনের উৎপাদন ও ব্যবহার বাড়তে দেখা যায়। এরপর ২০১০ সালে আরেকটি আইন করে সরকার। কিন্তু সেই আইনও বাস্তবে কোনো কাজ দেয়নি।