ব়্যাব, শেখ হাসিনা ও ১৪০ সাংবাদিককে নিয়ে এইআরডব্লিউর প্রতিবেদন

2 hours ago 4
শুধু রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে অপব্যবহার রোধই নয়, নিরাপত্তা বাহিনী যাতে পরবর্তী সরকারের দমন-পীড়নের হাতিয়ার না হয়, তা নিশ্চিত করতেও ব়্যাব বিলুপ্তির সুপারিশ করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। এক প্রতিবেদনে ব়্যাব বিলুপ্তির সুপারিশ করেছে এইচআরডব্লিউ। তাদের সিনিয়র গবেষক জুলিয়া ব্লেকনার বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সময় মানবাধিকার ও বাকস্বাধীনতার মতো বিষয়ে প্রতিশ্রুতির বিপরীত আচরণ দেখা যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ডয়চে ভেলে। জার্মানভিত্তিক গণমাধ্যমটি বলছে, বাংলাদেশের মানবাধিকার কর্মীরাও মনে করেন, একটি গণতান্ত্রিক দেশে এমন একটি বাহিনী থাকতে পারে না। গুম-সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের সদস্য, মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন বলেছেন, মানবাধিকার সংগঠন এইচআরডাব্লিউ কিন্তু হঠাৎ ব়্যাব বিলুপ্তির কথা বলেনি। তারা অনেক দিন ধরে এই কথা বলছে। আমরা গুম-সংক্রান্ত কমিশন থেকেও এই কথা বলেছি। এই বাহিনীটি ইতিমধ্যে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের কারণে খুনি বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। একটা সভ্য দেশে কোনোভাবেই এই বাহিনী থাকতে পারে না। নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) ‘আফটার দ্য মনসুন রেভল্যুশন : আ রোডম্যাপ টু লাস্টিং সিকিউরিটি সেক্টর রিফর্ম ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক ৫০ পৃষ্ঠার এক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) এইচআরডব্লিউর এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক এলেইন পিয়ারসন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে প্রতিবেদনটি তুলে দেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জুলাই অভ্যুত্থানের সময়ে নজিরবিহীন মাত্রায় দমন-পীড়ন চালানো হয়েছে। এ ধরনের অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ বাংলাদেশে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহৃত নিরাপত্তা বাহিনীর একটি সুপ্রতিষ্ঠিত অনুশীলন। বাহিনীটি দীর্ঘ সময় ধরে দায়মুক্তির সংস্কৃতি উপভোগ করে আসছে বলেও উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে। ২০১৯ সালে জাতিসংঘের নির্যাতন বিরোধী কমিটি (সিএটি) বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনীকে রাষ্ট্রের ভেতরে রাষ্ট্র হিসেবে বর্ণনা করেছিল। পুলিশসহ বাংলাদেশে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়মুক্তি ও জবাবদিহি না থাকার বিষয়টিও প্রতিষ্ঠিত। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, প্রধান তার বাহিনীর কর্মকাণ্ডের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। তারপরও এই বাহিনীর যারা গুম, খুন বা বেআইনি কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিচার হতে হবে। এলেইন পিয়ারসনও বিচারের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। দায়মুক্তি পেয়েই বেপরোয়া ব়্যাব ২০০৪ সালে বিএনপির শাসনামলে এলিট ফোর্স ব়্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (ব়্যাব) গঠন করা হয়। এরপর যে সরকার ক্ষমতায় এসেছে, তারা এই বাহিনীকে দায়মুক্তি দিয়ে কাজ করার অনুমতি দেয়। দায়মুক্তি পেয়েই বেপরোয়া ব়্যাব ব়্যাবের এক কর্মকর্তা হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে বলেন, গুম, হত্যা বা ক্রসফায়ারের ঘটনার জন্য ব়্যাবের একটি আলাদা দল রয়েছে। বেশির ভাগ কাজই ওই দল করে। ব়্যাবে নিজের কাজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে একজন কর্মকর্তা দাবি করেন, ২০১৬ সালে তিনি ব়্যাবে যোগ দিয়ে হতবাক হয়েছিলেন, কারণ, একজন প্রশিক্ষক প্রকাশ্যে বলেছিলেন যে তিনি ১৬৯টি ক্রসফায়ার পরিচালনা করেছেন। রাজনৈতিক নেতারা যখনই ক্ষমতার বাইরে থাকেন, তখন ব়্যাবের বিলুপ্তির বিষয়ে একমত পোষণ করেন। গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর মার্কিন সরকার ব়্যাবের পাশাপাশি বাহিনীর সাতজন সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। গুম-সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর তাদের প্রতিবেদনে ব়্যাবকে বিলুপ্তির সুপারিশ করে। ব়্যাব প্রধান এ কে এম শহীদুর রহমান ইতিমধ্যে ইউনিটের গোপন আটক কেন্দ্রের কথা স্বীকার করে প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনা করে বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার ইউনিটটি বিলুপ্তি করে দিতে চাইলে ব়্যাব তা মেনে নেবে। এমন প্রেক্ষাপটে এইচআরডব্লিউ জাতিসংঘ এবং দাতা সরকারকে সুপারিশ করে বলেছে, ব়্যাবের সঙ্গে যুক্ত সব কর্মকর্তা যাতে অন্য ইউনিটে গিয়ে একই অপকর্মের চর্চা করতে না পারেন, সে জন্য তাদের মানবাধিকার প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে কেবল এই শর্তেই ব়্যাব বিলুপ্ত করা যাবে। কাঠামোগত সংস্কারের বিষয়ে এইচআরডাব্লিউর সিনিয়র গবেষক জুলিয়া ব্লেকনার ঢাকায় সাংবাদিকদের বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে স্বাধীন করতে হবে। তাদের রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে হবে। তাদের পদোন্নতি থেকে শুরু করে নিয়োগ রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থাকতে হবে। তার মতে, যে দলই ক্ষমতায় এসেছে, ব়্যাবকে নির্যাতনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। এ পর্যায়ে এসে ব়্যাবকে সংস্কার করা সম্ভব নয়। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক ফারুক ফয়সাল বলেন, শুধু এইচআরডব্লিউ নয়, আমরাই চাই ব়্যাব বিলুপ্ত হোক। এই প্রক্রিয়াটি যত কঠিনই হোক না কেন, কাজটা করতে হবে। কারণ, এই বাহিনীটি এত বেশি মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে, সেখান থেকে ফেরানো কঠিন। আধুনিক বাংলাদেশকে যদি একটি গণতান্ত্রিক দেশে নিয়ে যেতে হয়, ব়্যাবের মতো একটি বাহিনী রেখে সেটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। আমি মনে করি, এই বাহিনী থাকলে আবারও রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। তবে মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন, ব়্যাব বিলুপ্ত হতে পারে। কিন্তু রাষ্ট্রের জন্য একটি বিশেষায়িত বাহিনীর প্রয়োজন হয়, যা অনেক দেশেই আছে। যেকোনো ঘটনায় ওই বাহিনী দ্রুত কাজ করে। এর আগেও আমরা দেখেছি, এই বাহিনীর বিরুদ্ধে যেমন মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ ছিল, তেমনি অনেক সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে ব়্যাবকে দ্রুত ভূমিকা নিতেও আমরা দেখেছি। শুধু ব়্যাব নয়, গোটা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে মানবাধিকারের চর্চা থাকাটা জরুরি। অন্তর্বর্তী সরকার ইতোমধ্যে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে ও সংস্কারের জন্য কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। গুম তদন্তে কমিশন, পুলিশের সংস্কারের জন্য আলাদা কমিশনও গঠন করেছে সরকার। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাঠামোগত সংস্কার নিয়ে এইচআরডব্লিউর এশিয়া বিভাগের পরিচালক ইলেইন পিয়ারসন ঢাকায় সাংবাদিকদের বলেন, শেখ হাসিনার আমলে নিরাপত্তা বাহিনীগুলো যেভাবে রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে ক্ষয়িষ্ণু হয়ে পড়েছে, সেখান থেকে বের হয়ে তাদের সংস্কার করা কঠিন হবে। এটি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে ঢালাও মামলা ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পরে প্রশ্নবিদ্ধ অনেক মামলার প্রসঙ্গও উঠে এসেছে এইচআরডব্লিউর প্রতিবেদনে। আট মামলার পাঁচ বাদী হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে বলেছেন, তারা মামলা করার সময় জানতেন না আসামি হিসেবে কাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের ভাষ্য, পুলিশ বা স্থানীয় রাজনীতিবিদরা তাদের শুধু কাগজে সই করতে বলেছিলেন। দুজন বাদী হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে বলেন, আওয়ামী লীগবিরোধী স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা পুলিশের প্রতিবেদনে সই করতে বলেন; যদিও তারা জানতেন না যে কার বিরুদ্ধে মামলা করা হচ্ছে। আন্দোলন চলাকালে ঢাকার লক্ষ্মীবাজার এলাকায় নিহত এক শিক্ষার্থীর মায়ের সঙ্গে কথা বলেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। তিনি বলেন, যখন তিনি ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করতে যান, তখন পুলিশ ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা তাকে একটি এফআইআরে সই করতে বলেন। আগেই লিখে রাখা ওই এফআইআরে অভিযুক্ত হিসেবে ৫০ জনের নাম এবং ২০ থেকে ৩০০ জন অজ্ঞাতনামা আসামির কথা উল্লেখ করা হয়। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ দেখেছে, ওই এফআইআরে আওয়ামী লীগের ৪৭ জন সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও ছাত্রলীগের কর্মীদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি একজন শিক্ষক ও দুজন চিকিৎসকের নামও ছিল সেখানে। লক্ষ্মীবাজার এলাকায় নিহত এক শিক্ষার্থীর মা আরও বলেন, অভিযুক্তদের অনেকের পরিচয়ই তিনি জানেন না এবং তারা কীভাবে তার ছেলের হত্যাকাণ্ডে জড়িত হতে পারে, তা তিনি বুঝতে পারেননি। প্রতিবেদনে নিরাপত্তা বাহিনীকে সংস্কার করে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করা অন্যতম চ্যালেঞ্জ বলে উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারি আইনজীবী ও বিচার বিভাগকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে হবে। পাশাপাশি নাগরিক সমাজের ওপর নজরদারি ও নিবর্তনমূলক চর্চা বন্ধ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কাঠামোগত সংস্কার নিশ্চিত করতে দাতা দেশগুলোর উচিত বিনিয়োগ করা। আর ভবিষ্যৎ সরকার ক্ষমতায় এসে যাতে এসব সংস্কারকে পাল্টে ফেলতে না পারে, সে জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত হবে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে একটি প্রস্তাব নেওয়া, যাতে তারা সংস্কার বাস্তবায়নে সহযোগিতার পাশাপাশি পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে পারে। গণগ্রেপ্তার, ১৪০ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে বলা হয়, সংস্কারের পদক্ষেপ নেওয়ার পর কিছু অগ্রগতি হয়েছে। তবে কাঠামোগত সংস্কার জরুরি, না হলে পুলিশ তার আগের ধারায় ফিরে যাবে। এরই মধ্যে কিছু ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে বলে উল্লেখ করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। ৫ আগস্টের পর মামলার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গণগ্রেপ্তারের কথা উল্লেখ করে বলা হয়, অভিযোগগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ১০০ আওয়ামী লীগ নেতা এবং ২০০ থেকে ৩০০ অজ্ঞাতনামাকে আসামি করা হয়েছে। এ অভিযোগগুলোর ভিত্তিতে পুলিশ যেকোনো মানুষকে হয়রানি করতে পারবে। কিছু অভিযোগকারীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা জানেনই না কার বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন। জুলিয়া ব্লেকনার ঢাকায় বলেছেন, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার মানবাধিকার ও বাকস্বাধীনতার মতো বিষয়গুলোতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কিন্তু কর্তৃপক্ষের এই প্রতিশ্রুতির বিপরীত আচরণ দেখা যাচ্ছে। গত নভেম্বর পর্যন্ত আন্দোলন নিয়ে প্রতিবেদন করার জন্য অন্তত ১৪০ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হয়েছে, ১৬০ সাংবাদিকের প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন বাতিল করা হয়েছে এবং অনেকের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে। এ আইন বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নামে আগের সরকার বাংলাদেশে ব্যবহার করেছিল। প্রতিবেদনে উদাহরণস্বরূপ বলা হয়, চট্টগ্রামে পুলিশ ২৮ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে। তাদের বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলনের প্রকৃত ঘটনা আড়াল করে মিথ্যা ও মনগড়া প্রতিবেদন তৈরির অভিযোগ আনা হয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছাত্র আন্দোলনের সময় কর্মরত দুই স্বাস্থ্যকর্মী আমজাদ হোসেন ও নিজাম উদ্দিনের সঙ্গে কথা বলেছে। তাদের বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলনকারী ওয়াসিম আকরামকে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। আমজাদ বলেছেন, ওই দিন আমরা দায়িত্বরত চিকিৎসকদের সঙ্গে ওয়াসিমের মরদেহসহ বিক্ষোভে নিহত আরও তিনজনের মরদেহ দেখছিলাম। আমরা পরিবারগুলোর কাছে মরদেহ হস্তান্তরেও সহায়তা করেছিলাম। যখন জানতে পারলাম, ওয়াসিম হত্যার মামলায় আমার নাম দেওয়া হয়েছে, তখন অবাক হই। সেদিন আমি হাসপাতালে ছিলাম এবং আহত ছাত্রদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে ডাবল ডিউটি করেছি। প্রতিবেদনে টেকসই সংস্কারের সুপারিশের ক্ষেত্রে আরও বলা হয়েছে, গণগ্রেপ্তার ও অজ্ঞাতনামা মামলা বন্ধে নিষেধাজ্ঞা দিতে হবে। আটক ব্যক্তিদের যাতে দ্রুত বিচারকের সামনে হাজির করা যায়, আটকে রাখার স্থান যাতে পরিদর্শন করা যায়, তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি রিমান্ডের প্রচলনে নিষেধাজ্ঞা আনতে হবে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে সাংবাদিকদের রিমান্ডে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। অতীতের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, রিমান্ডে নিরাপত্তা বাহিনী নির্যাতন করে থাকে। এ ছাড়া যেসব আইন জবাবদিহির পথে বাধা, সেসব আইন সংশোধন বা বাতিল করার পরামর্শও অন্তর্বর্তী সরকারকে দিয়েছে এইচআরডব্লিউ। মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের পরিচালক নাসির উদ্দিন এলান বলেন, ব়্যাব বিলুপ্ত করা এখন সময়ের দাবি। স্বাধীনতার পর শেখ মুজিব সরকার যেমন রক্ষীবাহিনী করেছিল, তেমনি তথাকথিত সন্ত্রাসী দমনের নামে বিএনপি ব়্যাব গঠন করেছিল। কিন্তু এই বাহিনীকে সব সরকারই ব্যবহার করেছে। এটা রাখার কোনো প্রয়োজন নেই। পাশাপাশি আমরা দেখছি, এই সরকারের আমলেও আগের সরকারের মতো ঢালাও মামলা হচ্ছে। এ জন্য তো মানুষ আন্দোলন করেনি। এই মামলার সঙ্গে একটি রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের সম্পৃক্ততা আমরা দেখেছি। তারা এটা নিয়ে বাণিজ্য শুরু করেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সমালোচনা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) সমালোচনা করা হয়েছে। অতীতে এটিকে ব্যবহার করে অস্বচ্ছ বিচার করা হয়েছে উল্লেখ করে বলা হয়, আইসিটির অনেক ধারাই এখনো আন্তর্জাতিক মানের নয়। এখানে এখনো মৃত্যুদণ্ডের মতো বিধান রয়েছে। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘন হয় এমন ধারা রয়েছে, যেমন অনুপস্থিতিতে বিচার করা। নভেম্বর পর্যন্ত এ আদালতে শেখ হাসিনাসহ ৮০ জনকে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযোগ করার কথাও বলা হয়েছে প্রতিবেদনে। শেখ হাসিনার বিচার প্রসঙ্গে জুলিয়া ব্লেকনার বলেন, আইসিটিতে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরানো সহজ হবে না। বাংলাদেশ আইসিটিকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করলে, মৃতুদণ্ডের বিধান বাতিল করলে ভারতকে চাপ দেওয়া আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর জন্য সহজ হবে। কার্যকর বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠা অন্তর্বর্তী সরকারকে বিদ্যমান বিচার বিভাগে নিয়োগের এককালীন পর্যালোচনা করার সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এই প্রক্রিয়া সঠিক ও ন্যায্য হয়েছে, তা নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। বিচারকদের নিয়োগ বা পদোন্নতির ক্ষেত্রে কোনো রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ যাতে না থাকে তা নিশ্চিতে একটি ব্যবস্থা গড়ে তোলার সুপারিশ করা হয়েছে। পাবলিক প্রসিকিউটরদের জন্য ভূমিকা এবং নিয়োগ-পদ্ধতি পুনর্গঠন করতে অন্তর্বতী সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। সব মামলার তথ্য বিনামূল্যে পেতে অনলাইনে একটি কেন্দ্রীয় ব্যবস্থা গড়ে তোলার সুপারিশও করেছে সংস্থাটি। এ ছাড়া মহিলা প্রসিকিউটর ও বিচারক নিয়োগ করার আহ্বানও জানানো হয়েছে। প্রধান বিচারপতির সুপারিশ অনুযায়ী, বিচার বিভাগীয় কার্যক্রমে কোনো রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ নেই এবং যেকোনো মন্ত্রী বা কর্মকর্তা এই চেষ্টা করলে তাকে জবাবদিহি করা হবে, তা নিশ্চিত করার জন্য একটি স্বাধীন সচিবালয় তৈরির সুপারিশও করা হয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে।
Read Entire Article