বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উত্তরণের জন্য এখনো প্রস্তুত নয়: খসরু

2 hours ago 3

বাংলাদেশ এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের (উত্তরণ) জন্য এখনো প্রস্তুত নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিদলের বৈঠক শেষে তিনি এ কথা বলেন।

এদিন গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিকেল ৫টায় এই বৈঠক শুরু হয়। দেড় ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে এলডিসি গ্রাজুয়েশন, শ্রম আইন সংশোধনসহ ব্যবসাখাতে নানা সমস্যা নিয়ে ব্যবসায়ীরা আলোচনা করেন।

বৈঠকের পর সন্ধ্যায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।

ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের বিজনেস কমিউনিটিতে যারা জড়িত আছেন তাদের প্রায় সবাই আজ এখানে উপস্থিত। দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি যেসব বড় বড় ব্যবসায়ী, তাদের সবাই আজ এখানে আছেন। তাদের আসার পেছনে দুটো কারণ আছে। একটা হচ্ছে আমাদের এলডিসি গ্রাজুয়েশন এবং আরেকটা লেবার ইস্যু। এটা কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য-বিনিয়োগে আগামী যে সম্ভাবনা আছে সেটাকে প্রটেক্ট করার জন্য, রক্ষা করার জন্য আমাদের কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

তিনি বলেন, এই বিষয়ে আমরা ওনাদের বিস্তারিত কথা শুনেছি, ওনারা ওনাদের সুবিধা ও অসুবিধাগুলো বলেছেন। এখান থেকে যেটা প্রতীয়মান হয় যে, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনে যাওয়া এই মুহূর্তে বাংলাদেশের বর্তমান এবং আগামীদিনে ব্যবসা-বাণিজ্য-বিনিয়োগের জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করবে না। কারণ দেশে বড় ধরনের একটা আপরাইজিংয়ের পর আমরা এখন কিন্তু দেশটার অর্থনীতিকে রক্ষা করার জন্য সবাই মিলে কাজ করছি, এটা সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করছি। বিগত দিনে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পরিপ্রেক্ষিতে যে পরিসংখ্যানগুলো দেওয়া হয়েছিল সেগুলো প্রশ্নবিদ্ধ।

আরও পড়ুন
গুলশানে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে মির্জা ফখরুল

এই বিএনপি নেতা বলেন, সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অর্থনীতি, বিনিয়োগ, ব্যবসা-বাণিজ্য যদি আমরা অব্যাহতভাবে এগিয়ে নিতে চাই, যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন আমরা দেখছি, তাহলে এই মুহূর্তে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন স্থগিত রাখার বিষয়ে আমরা সবাই আলোচনা করেছি, এটা স্থগিত রাখার প্রয়োজনীয়তা আছে।

‘ওনারা (ব্যবসায়ীরা) এটাও মতামত দিয়েছেন যে, বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থে এই মুহূর্তে এলডিসির বিষয়ে রেডি আছে কি না সে বিষয়ে বর্তমান সরকারের পক্ষ থেকে জাতিসংঘকে চিঠি দেওয়া দরকার? বর্তমান সরকারকে অনুরোধ করা হচ্ছে তারা যেন একটা চিঠি দেয় এবং জাতিসংঘের প্রতিনিধিরা এখানে এসে সরেজমিনে দেখে বাংলাদেশের প্রস্তুতিটা আাছে কি না এটা প্রত্যক্ষভাবে দেখার প্রয়োজনীয়তা আছে।’ বলেন খসরু।

লেবার ইস্যুতে আলোচনার প্রসঙ্গ টেনে আমীর খসরু বলেন, লেবার ইস্যুতে রেটিফিকেশনের ব্যাপারে ওনাদের কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু অন্যান্য ইউনিয়নের নাম্বার নিয়ে যে বিষয়গুলো আছে সেখানে এই পরিবর্তনটা আনলে সত্যিকার অর্থে শ্রমিকদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হবে কি না এটা বিবেচনা করা দরকার, কিংবা ইউনিয়নগুলো ইফেক্টিভলি কাজ করতে পারবে কি না এটাও বিবেচনা করা দরকার।

তিনি বলেন, এগুলো বিবেচনা না করে তাড়াহুড়ো করে যদি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় তাহলে আগামীদিনে একবার যদি একটা ব্যাড মেসেজ (খারাপ বার্তা) যায় দেশের ভেতরে, দেশের বাইরে, এটা থেকে বেরিয়ে আসা খুব কঠিন হবে।

এ সময় বিজেএমইএ’র সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, আমরা বিজনেস কমিউনিটির যারা শিল্প পরিচালনার দায়িত্বে আছি, ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছি, আমরা আজ আলোচনা করেছি। আমাদের অনেকগুলা বিজনেস কনসার্ন আছে। কিন্তু এই মুহূর্তে আমাদের সবচেয়ে বড় কনসার্ন হচ্ছে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের ডেফারমেন্ট নিয়ে কথাবার্তা বলা, আরেকটি হচ্ছে লেবার ল’ অ্যামেন্ডমেন্ট।

তিনি বলেন, লেবার ল’ অ্যামেন্ডমেন্ট করতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। আপনারা জেনে থাকবেন, ১২৪টি পয়েন্ট নিয়ে টিসিসিতে আলোচনা হয়েছে। ১২৪টি পয়েন্টের মধ্যে আমরা ১২২টি পয়েন্টে একমত হয়েছি। যে দুইটা পয়েন্টে আমরা একমত হতে পারিনি এটার বাস্তবসম্মত কারণ আছে।

কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ২০ জন শ্রমিক আবেদন করলেই ট্রেড ইউনিয়নের রেজিস্ট্রেশন দিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এই মুহূর্তে যেটা আছে শতকরা ২০ জন। একটা শিল্পে যদি ৫ হাজার লোক থাকে, ৩ হাজার লোক থাকে, ১০ হাজারের ওপরে লোক আছে এমন শিল্পও আছে আমাদের। সেখানে মাত্র ২০ জনের ট্রেড ইউনিয়নের রেজিস্ট্রেশন দিয়ে দেওয়া হয় এবং একটা শিল্পে সর্বোচ্চ ৫টি রেজিস্ট্রেশন দিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে শিল্প টিকবে না। এটা আমাদের একেবারে রুট লেভেলের বাস্তবসম্মত অভিজ্ঞতা।

মাহমুদ হাসান খান বলেন, যারা শ্রমের অধিকার নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করেন, ২০ জন করে ট্রেড রেজিস্ট্রেশন দিলে তারা পিছিয়ে যাবেন। তাতে করে দেখা যাবে যারা জুট ব্যবসা করেন, যাদের ইল মোটিভ আছে, বাড়িওয়ালা যেখানে ২০-৫০ জন শ্রমিক রাতে বসবাস করেন, তারা ট্রেড ইউনিয়নের রেজিস্ট্রেশন নিয়ে নেবে এবং রাতারাতি ব্যাঙের ছাতার মতো হাজার হাজার ট্রেড ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশন পেয়ে যাবে।

বিজেএমইএ’র সভাপতি আরও বলেন, এই বিষয়টা আমাদের বিগেস্ট কনসার্ন। বিএনপি মহাসচিব জাতিসংঘে যাচ্ছেন, সেখানে প্রধান উপদেষ্টাও যাচ্ছেন। যেহেতু উনি (বিএনপি মহাসচিব) কথা বলার সুযোগ পাবেন, ওনার মাধ্যমে আমরা এই বার্তাটা প্রধান উপদেষ্টার কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছি।

তিনি বলেন, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন আমরা প্রসপন্ড (বাতিল) করতে চাই না, আমরা ডেফারমেন্ট (দেরিতে) চাই, সেটাও বলেছি নির্দিষ্ট মাত্র তিন বছরের জন্য। এই তিন বছর ডেফারমেন্ট এজন্য লাগবে যে, আমরা এখনো প্রস্তুত না। এর মধ্যে একটা আছে ফলসিফাই ডাটা, যে ডাটা ডাটার ভিত্তিতে করা হয়েছিল। আমাদের ইনফ্রাস্ট্রাকচার এখনো রেডি না। এই বিষয়গুলো আমরা বিএনপির নেতৃত্বকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছি। আশা করি ওনারা বর্তমান সরকারকে এটা বোঝাতে সক্ষম হবেন।

বৈঠকে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী আহসান খান চৌধুরী, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি কামরান তানভিরুর রহমান, সাবেক সভাপতি তপন চৌধুরী ও নাসিম মনজুর, এফবিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ, বিকেএমইএ সভাপতি এম এ হাতেম, বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের (বিইএফ) সভাপতি ফজলে শামীম এহসান, বিজেএমইএ মহাসচিব রশিদ আহমেদ হোসাইনী, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকিন আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে আমীর খসরু মাহমুদ ছাড়াও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য এসএম ফজলুল হকসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

কেএইচ/ইএ/জিকেএস

Read Entire Article