বাংলাদেশ এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ- দুই দলই যেন হাঁটছে এক অজানা গন্তব্যে। সাম্প্রতিক সময়ে একের পর এক হার, দুই দলকেই যেন পর্যদুস্ত করে দিচ্ছে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয় করেছে বাংলাদেশ- এটা যেমন ঠিক, তেমনি ওয়ানডে সিরিজে পুরোপুরি নাকানি-চুবানি খেয়েছে মেহেদী হাসান মিরাজের দল। দুই ম্যাচেই অলআউট হয়েছে ৩০-এর নিচে কম ওভার খেলে।
শুধু তাই নয়, গত কয়েক বছর ওয়ানডেতে বেশ বাজে খেলছে বাংলাদেশ। টাইগানররা গত পাঁচটি ওয়ানডে সিরিজে হেরেছে, ২০২৩ সালের নভেম্বরে শুরু হওয়া যে ধারা শুরু হয়েছে, এরপর থেকে তারা মাত্র ১৪ ম্যাচে ২টিতে জয় পেয়েছে।
অন্যদিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের একটি দল আরব আমিরাতে নেপালের কাছে পর্যন্ত সিরিজ হেরেছে। তার আগেও পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়ার কাছে খুব বাজেভাবে সিরিজ হেরেছে। আর মূল দলটি সম্প্রতি ভারতের মাটিতে টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়ে এসেছে।
মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে তাই আজ দুই দলের সামনেই বৃত্ত ভাঙার মিশন। পরাজয়ের বৃত্ত। শুধু তাই নয়, ত্বপূর্ণ র্যাংকিং পয়েন্ট নিয়ে আগামী ওয়ানডে বিশ্বকাপে যোগ্যতা অর্জনের লক্ষ্যেও এই সিরিজ খুব গুরুত্বপূর্ণ। যে সিরিজ জিততে পারবে, তারাই এগিয়ে থাকবে বিশ্বকাপ নিশ্চিত করার দিকে। সে লক্ষ্যেই আজ দুপুর দেড়টায় সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
বাংলাদেশ এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ- দুই দলেরই একটি কমন সমস্যা। ব্যাটিং। মিরপুরে তাই আজ দুই দলই লড়বে নিজেদের সমস্যার সমাধান খুঁজতে। ইতিহাসের দিক থেকেও দুই দল সমান শক্তিশালী— এখন পর্যন্ত ছয়টি করে দ্বি-পাক্ষিক ওয়ানডে সিরিজ জিতেছে উভয় দল।
ব্যাটিং ধাঁধা বাংলাদেশ দলে
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা এখন ব্যাটিং লাইনআপ। সৌম্য সরকার দলে ফিরেছেন, ফলে সম্ভবত তানজিদ তামিমকে বেঞ্চে থাকতে হতে পারে। ওপেনার হিসেবে সাইফ হাসান প্রায় নিশ্চিত, তবে বড় ইনিংস খেলে নিজের অবস্থান শক্ত করার দিকে নজর দিতে হবে তাকে।
নজমুল হোসেন শান্তর ফর্ম এখনও উদ্বেগের কারণ, যদিও তাকে বাড়তি সুযোগ দিচ্ছে টিম ম্যানেজমেন্ট। তাওহিদ হৃদয়, জাকের আলী অনিক এবং নুরুল হাসান সোহানও আফগানিস্তানের বিপক্ষে রান পেতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। মেহেদী হাসান মিরাজ কিছু রান করলেও তার স্ট্রাইক রেট নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এই অবস্থায় নতুন মুখ মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনকে দলে নেওয়া হয়েছে এবং শামীম হোসেন পাটোয়ারীও বিকল্প হিসেবে আছেন।
বাংলাদেশের একমাত্র ভরসা তাদের বোলিং আক্রমণ। পেসাররা নিয়মিত রোটেশনে ভালো পারফরম করছে, আর স্পিন বিভাগে রিশাদ হোসেন ও তানভির ইসলাম ধারাবাহিক পারফরমেন্স দেখাচ্ছেন।
দলগত ভারসাম্য ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে এবং তাদের প্রস্তুতি
ওয়েস্ট ইন্ডিজও মিরপুরের স্লো-উইকেট নিয়ে সতর্ক। তাদের সবচেয়ে বড় ভরসা স্পিন জুটি গুদাকেশ মতি ও রস্টোন চেজ, যারা সাম্প্রতিক সিরিজগুলোতে সফল ছিলেন। শাই হোপ ও চেজ বাংলাদেশের কন্ডিশনে অভিজ্ঞ ব্যাটার। ব্রেন্ডন কিং, কেসি কার্টি, আলিক আথানাজে ও আমির জানগু ব্যাটিংয়ের দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত।
জাইডেন সিলস ২০২৪ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে দুর্দান্ত পারফর্ম করেছিলেন এবং পাকিস্তানের বিপক্ষে শেষ সিরিজেও ছিলেন ফর্মে।
বিশেষ নজরে থাকবেন
তানভির ইসলাম আফগানিস্তান সিরিজে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা পারফর্মার ছিলেন। মাত্র চার উইকেট নিলেও ধারাবাহিক ভালো স্পেল করেছেন। তার ম্যাজিক বলেই আউট হয়েছিলেন আজমতুল্লাহ ওমরজাই, যা তার উন্নতির প্রমাণ।
অন্যদিকে, কেসি কার্টি ওয়েস্ট ইন্ডিজের নতুন স্থিতিশীল নাম। তিন নম্বরে ব্যাট করে গড় ৫০-এর বেশি, রান ১১০০ ছাড়িয়েছে। আয়ারল্যান্ড ও ইংল্যান্ডে সেঞ্চুরি করে প্রমাণ দিয়েছেন বিভিন্ন কন্ডিশনে খেলার সামর্থ্য।
সম্ভাব্য একাদশ
বাংলাদেশ
সৌম্য সরকার, সাইফ হাসান, নজমুল হোসেন শান্ত, মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন, মেহেদী হাসান মিরাজ (অধিনায়ক), জাকের আলী অনিক, নুরুল হাসান (উইকেটরক্ষক), রিশাদ হোসেন, নাহিদ রানা, তানভির ইসলাম, হাসান মাহমুদ।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ
ব্রেন্ডন কিং, আলিক আথানাজে, কেসি কার্টি, শাই হোপ (অধিনায়ক ও উইকেটরক্ষক), শেরফানে রাদারফোর্ড, রস্টোন চেজ, গুদাকেশ মতি, জাস্টিন গ্রিভস, রোমারিও শেফার্ড, শামার জোসেফ, জাইডেন সিলস।
আইএইচএস/