বিশ্বজুড়ে চলমান যুদ্ধ ও সংঘাতের অবসান ঘটিয়ে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করা টেকসই প্রবৃদ্ধি ও দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতার জন্য অত্যাবশ্যক বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের যৌথ উন্নয়ন কমিটির (ডেভেলপমেন্ট কমিটি) চেয়ারপারসন ও সুইডেনের অর্থমন্ত্রী এলিজাবেথ স্ভান্তেসন।
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের ডেভেলপমেন্ট কমিটির ১১২তম সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
এলিজাবেথ বলেন, বৈশ্বিক অর্থনীতি বর্তমানে এক গভীর রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং বাড়তি অনিশ্চয়তার সম্মুখীন হচ্ছে—যা একদিকে নানা চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করছে, আবার অন্যদিকে নতুন সুযোগও এনে দিচ্ছে। প্রবৃদ্ধি তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল থাকলেও এর ওপর চাপ বাড়ছে। আমরা এমন কার্যকর নীতিমালা গ্রহণ করব, যা আস্থা জাগাবে, স্থিতিস্থাপকতা গড়ে তুলবে এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক ও আর্থিক স্থিতিশীলতা সুরক্ষিত করবে। বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমরা সহযোগিতা অব্যাহত রাখব।
তিনি আরও বলেন, বিশ্বব্যাপী চলমান যুদ্ধ ও সংঘাত মানবিক বিপর্যয় বাড়াচ্ছে, একই সঙ্গে এর অর্থনৈতিক ব্যয়ও ব্যাপক এবং এর নেতিবাচক প্রভাব বিস্তৃত হচ্ছে। এই যুদ্ধ ও সংঘাতের অবসান ঘটিয়ে বিশ্বজুড়ে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করা টেকসই প্রবৃদ্ধি ও দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতার জন্য অপরিহার্য।
আরও পড়ুন
বিশ্বে উন্নয়ন কৌশলের কেন্দ্রে কর্মসংস্থানকে স্থান দেওয়ার আহ্বান
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা রক্ষায় আইএমএফের সতর্কবার্তা
এআই ব্যবহারে দক্ষিণ এশিয়ার শ্রমবাজারে ৭% চাকরি ঝুঁকির মুখে
এক রেটে ভ্যাট বাস্তবায়ন করতে চায় সরকার
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নররা উল্লেখ করেন, স্বল্প ও মধ্যমেয়াদে বৈশ্বিক অর্থনীতি উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ ও অনিশ্চয়তার মুখে রয়েছে, যা প্রবৃদ্ধি টিকিয়ে রাখা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র্য হ্রাসের প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করছে।
সভায় সদস্যরা ‘ফাউন্ডেশনস ফর গ্রোথ অ্যান্ড জবস’ শীর্ষক প্রস্তাবনাকে স্বাগত জানান এবং বিশ্বব্যাংক গ্রুপের উদ্যোগগুলোর প্রশংসা করেন, যা কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় ভৌত, মানবিক ও প্রাকৃতিক অবকাঠামো গড়ে তুলতে সদস্য দেশগুলোকে সহায়তা করছে।
সভায় ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি) ও মাল্টিল্যাটারাল ইনভেস্টমেন্ট গ্যারান্টি এজেন্সির (মিগা) ভূমিকার গুরুত্ব তুলে ধরে বলা হয়, এসব প্রতিষ্ঠান সীমান্ত-পার ও দেশীয় বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বিশ্বব্যাংক গ্রুপকে আরও উৎসাহ দেওয়া হয় শিক্ষা, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ সম্প্রসারণ, দক্ষতাকে শিল্পের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য করা এবং নারী ও কন্যাদের জন্য অর্থনৈতিক সুযোগ ও উদ্যোক্তা কার্যক্রমে অংশগ্রহণের বাধা দূর করতে।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশকে রাজস্ব নীতি সংস্কার কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে: আইএমএফ
আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় গতি পাচ্ছে পাচার অর্থ ফেরত আনার প্রক্রিয়া
চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৪.৯%
গভর্নররা আফ্রিকান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ও অন্যান্য অংশীদারদের সঙ্গে যৌথভাবে পরিচালিত ‘মিশন ৩০০’ উদ্যোগের প্রশংসা করেন, যা প্রয়োজনীয় জনগোষ্ঠীর কাছে সাশ্রয়ী ও নির্ভরযোগ্য জ্বালানি সরবরাহের লক্ষ্যে কাজ করছে। তারা বলেন, কর্মসংস্থান, ব্যবসা, ডিজিটালাইজেশন ও সরকারি সেবা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে জ্বালানির চাহিদা আরও বাড়বে।
ঋণ টেকসইতা, স্বচ্ছতা ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার বিষয়ে বিশ্বব্যাংক গ্রুপকে আইএমএফ ও অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়। একই সঙ্গে স্থানীয় সম্পদ সংগ্রহ ও ন্যায্য কর ব্যবস্থার উন্নয়নে সহায়তারও আহ্বান আসে।
সভায় জানানো হয়, ২০২৫ অর্থবছরে বিশ্বব্যাংক গ্রুপের আর্থিক অঙ্গীকার দাঁড়িয়েছে ১১৮ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার এবং তারা ৬৯ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার বেসরকারি পুঁজি সংগ্রহ করেছে। এ সময়ে বাস্তবায়িত প্রকল্পগুলোর ৪৮ শতাংশে জলবায়ু-সম্পর্কিতসহ লাভ অন্তর্ভুক্ত ছিল।
আরও পড়ুন
কর্মসংস্থানের অভাব অস্থিরতা ও অভিবাসন ঝুঁকি বাড়াবে: অজয় বাঙ্গা
অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে সময়োপযোগী সংস্কার প্রয়োজন
বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার বেড়ে ২১.২ শতাংশ: বিশ্বব্যাংক
গভর্নররা নিম্নআয়ের দেশ, সংঘাত ও অস্থিরতায় আক্রান্ত রাষ্ট্র এবং ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর প্রতি অব্যাহত মনোযোগ দেওয়ার আহ্বান জানান। তারা আসন্ন ‘দুর্বলতা, সংঘাত ও সহিংসতা মোকাবিলায় ডাব্লিউবিজি কৌশল’ এবং ‘স্মল স্টেটস স্ট্র্যাটেজি’-এর আলোচনার প্রতীক্ষা করেন।
সভায় আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা আইডিএ’র ২১তম পর্বের বাস্তবায়ন অগ্রগতিতেও সদস্যরা সন্তোষ প্রকাশ করেন।
আগামী উন্নয়ন কমিটির বৈঠক ২০২৬ সালের এপ্রিলে ওয়াশিংটন ডিসিতেই অনুষ্ঠিত হবে।
আইএইচও/এমএমএআর/এএসএম