বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বিস্ময়বালক কে এই কাইরান কাজী?

2 weeks ago 10

বয়স মাত্র ১৬ বছর! কিন্তু এর মধ্যেই রকেট সায়েন্স ছেড়ে চাকরি করতে যাচ্ছেন কোয়ান্টিটেটিভ ফাইন্যান্সের মতো জটিল এক বিষয়ের দিকে। তার জন্য ইলন মাস্কের মালিকানাধীন স্পেসএক্স ছেড়ে যোগ দিচ্ছেন নিউইয়র্কের সিটাডেল সিকিউরিটিজে। সেই বিস্ময়বালকের নাম কাইরান কাজী। তাকে নিয়ে রীতিমতো তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে বিশ্ব মিডিয়ায়।

কে এই কাইরান?

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক কাইরান কাজীর বেড়ে ওঠা সান ফ্রান্সিসকো বে এরিয়ায়। তার মা জুলিয়া কাজী ওয়াল স্ট্রিটে কাজ করেন এবং বাবা মুস্তাহিদ কাজী একজন রাসায়নিক প্রকৌশলী।

কাইরান ছোটবেলা থেকেই ছিলেন মেধাবী। মাত্র নয় বছর বয়সে তৃতীয় শ্রেণি ছেড়ে ভর্তি হন কমিউনিটি কলেজে। ১০ বছর বয়সে ইন্টার্নশিপ করেন ইন্টেল ল্যাবসে। এগারোতেই ভর্তি হন সান্তা ক্লারা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং ১৭২ বছরের ইতিহাসে সেখানকার সবচেয়ে কনিষ্ঠ স্নাতক হয়ে বের হন।

২০২৩ সালে মাত্র ১৪ বছর বয়সে স্পেসএক্সের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ প্রকৌশলী হিসেবে যোগ দেন। এই নিয়োগ কেবল তার কর্মজীবনেরই সূচনা ছিল না, বরং এক বার্তাও বটে। কাইরান তখন বলেছিলেন, ‘এটি এক বিরল কোম্পানি, যারা বয়সকে পরিপক্বতা বা দক্ষতার মানদণ্ড হিসেবে ব্যবহার করে না।’

কিন্তু স্যাটেলাইট ইন্টারনেট প্রকল্প স্টারলিংকে সফটওয়্যার উন্নয়নে কাজ করার পর তিনি এবার নিম্ন-কক্ষপথ ছেড়ে ঝুঁকেছেন হাই-ফ্রিকোয়েন্সি ট্রেডিংয়ের ফ্লোরে।

লিংকডইনের সঙ্গে যুদ্ধ

স্পেসএক্সে যোগদানের আগে থেকেই তিনি আলোচনায় আসেন লিংকডইনের সঙ্গে সংঘাতে।

মাত্র ১৫ বছর বয়সে বয়সসীমার অজুহাতে লিংকডইন তার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয়। উত্তরে তিনি তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে লেখেন, ‘এটি অযৌক্তিক, আদিম বাজে নিয়ম।’

পরবর্তীতে অ্যাকাউন্ট ফিরে পেলে তিনি শিক্ষাব্যবস্থারও কড়া সমালোচনা করেন। তার ভাষায়, এটি আসলে ‘স্কুল ফ্যাক্টরি’, যা ভীতি, মর্যাদার লোভ আর মুখস্থবিদ্যা পুরস্কৃত করে, সত্যিকারের শেখাকে নয়।

কাইরান লিখেছিলেন, ‘পরীক্ষা আসলে দক্ষতা মাপে না, বরং মুখস্থ করার ক্ষমতা মাপে।’ এমনকি প্রাচীন দার্শনিক সেনেকা ও মার্কাস অরেলিয়াসের উদাহরণ টেনে বলেন, বয়স ও সুবিধাবাদ দিয়ে সুযোগ আটকে রাখা অতীতের মহৎ চিন্তকদের বিস্মিত করতো।

ওয়াল স্ট্রিটে যোগ দেওয়ার কারণ

সিলিকন ভ্যালির জনপ্রিয় এআই গবেষণা কেন্দ্রগুলো থেকেও চাকরির অফার পেয়েছিলেন কাইরান। কিন্তু বেছে নিয়েছেন সিটাডেল সিকিউরিটিজকে। প্রতিষ্ঠানটি যুক্তরাষ্ট্রের খুচরা শেয়ার লেনদেনের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ নিয়ন্ত্রণ করে এবং গত বছর তারা আয় করেছে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার।

কিন্তু এসব কারণে সিটাডেলে যোগ দেননি কাইরান। তার কথায়, এআই গবেষণায় প্রভাব দেখতে মাস বা বছর লাগে। কিন্তু কোয়ান্ট ফাইন্যান্সে? কয়েক দিনের মধ্যেই ফলাফল চোখে পড়ে।

এক পৃথিবী যেখানে মিলিসেকেন্ডও গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে অ্যালগরিদমে বিলিয়ন ডলারের লেনদেন হয়—সেই দ্রুত গতির পরিবেশই আকর্ষণ করেছে তাকে।

মায়ের স্মৃতির শহরে নতুন যাত্রা

এটি শুধু পেশা পরিবর্তন নয়, বরং ব্যক্তিগত দিক থেকেও বিশেষ মুহূর্ত।

কাইরানের মা একসময় ওয়াল স্ট্রিটেই কাজ করতেন। তিনি বেড়ে উঠেছেন নিউইয়র্কের অ্যাস্টোরিয়ায়। আজ তার ছেলে সিটাডেলের ঝকঝকে পার্ক অ্যাভিনিউ অফিস থেকে হাঁটার দূরত্বে থাকে। আর অভিভাবকের গাড়িতে করে কর্মস্থলে যাওয়া নয়—এবার নিউইয়র্কের সাবওয়ে ধরে নিজে নিজেই যাচ্ছেন কাজে।

নিউইয়র্ক আমার হৃদয়ে বিশেষ জায়গা দখল করে আছে, বলেন কাইরান।

প্রতিভা দখলের প্রতিযোগিতায় প্রতীকী জয়

সিটাডেল সিকিউরিটিজের জন্য কাইরান কাজীকে দলে টানা নিছক নিয়োগ নয়, বরং এক প্রতীকী জয়ও বটে। ওপেনএআই, অ্যানথ্রপিক কিংবা মাস্কের এক্সএআই যেখানে প্রতিভাবান তরুণদের দলে টানতে ব্যস্ত, সেখানে স্পেসএক্সের প্রাক্তন প্রকৌশলীকে নেওয়া সিটাডেলের জন্য মর্যাদার বিষয়।

এর মাধ্যমে তারা বার্তা দিয়েছে: যোগ্যতা থাকলে সুযোগ তৈরি হয়।

আর কাজীর জন্য এটি কেবল শুরু।

১৬ বছর বয়সে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করেছেন, স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে সফটওয়্যার তৈরি করেছেন, টেক জায়ান্টদের চ্যালেঞ্জ করেছেন এবং নিজের পথ নিজেই বেছে নিয়েছেন।

এবার যখন তিনি নিউইয়র্কের পার্ক অ্যাভিনিউয়ের সেই কাচঘেরা ভবনে প্রবেশ করছেন, তখন পরিষ্কার—ভবিষ্যৎ তার জন্য অপেক্ষা করছে না। বরং তিনিই ভবিষ্যৎকে কোড করছেন।

সূত্র: ফরচুন
কেএএ/

Read Entire Article