বাংলাদেশি শ্রমিক পাঠানো এজেন্সির তালিকা চায় মালয়েশিয়া

2 hours ago 3

মালয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশকে অনুরোধ করেছে এমন বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সির একটি তালিকা পাঠাতে, যারা নতুনভাবে নির্ধারিত ১০টি কঠোর মানদণ্ড পূরণ করতে সক্ষম।

মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ২৭ অক্টোবর ২০২৫ পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ হাইকমিশনকে ১৫ নভেম্বরের মধ্যে এসব যোগ্য রিক্রুটিং এজেন্সির নাম জমা দিতে হবে। এ তালিকা মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয় নির্ধারিত মানদণ্ড অনুযায়ী যাচাই-বাছাইয়ের জন্য ব্যবহৃত হবে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, এই নতুন প্রক্রিয়ার লক্ষ্য হলো বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়োগে অনুমোদিত বেসরকারি এজেন্সির সংখ্যা ‘যৌক্তিকীকরণ’ করা। এ উদ্দেশ্যে একটি উদ্দেশ্যভিত্তিক ও যোগ্যতাভিত্তিক যাচাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নৈতিক ও গঠনমূলক শ্রম অভিবাসন নিশ্চিত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

তবে শ্রমিক অধিকারকর্মীরা এ পদক্ষেপ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। তাদের আশঙ্কা, ‘র‍্যাশনালাইজেশন’ নামে আবারও নতুন আকারে পুরোনো ‘সিন্ডিকেট ব্যবস্থা’ ফিরতে পারে।

কুয়ালালামপুরভিত্তিক শ্রমিক অধিকার বিশেষজ্ঞ অ্যান্ডি হল বলেন, যদি মানদণ্ডগুলো বাস্তবিকভাবে প্রয়োগ করা হয়, তাহলে খুব অল্প কিছু এজেন্সি টিকে থাকবে— এমনকি তাদের মধ্যেও কেউ কেউ শর্ত পূরণ করতে পারবে না। আমার মনে হচ্ছে এটি ‘র‍্যাশনালাইজেশন’ নয়, বরং ‘সিন্ডিকেশন।’

মালয়েশিয়া সরকার যে ১০টি মানদণ্ডে বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সি বাছাই করবে, সেগুলো হলো: ন্যূনতম পাঁচ বছরের লাইসেন্সধারী হতে হবে; গত তিন বছরে অন্তত ৩ হাজার শ্রমিক পাঠানোর অভিজ্ঞতা থাকতে হবে; অন্তত তিনটি দেশে শ্রমিক পাঠানোর রেকর্ড থাকতে হবে; কমপক্ষে ১০ হাজার বর্গফুট আয়তনের স্থায়ী অফিস থাকতে হবে, যা অন্তত তিন বছর ধরে কার্যক্রমে রয়েছে; সুশৃঙ্খল আচরণের সনদ, বৈধ লাইসেন্স ও আইনি কার্যক্রমের প্রমাণপত্র থাকতে হবে; আন্তর্জাতিক নিয়োগদাতার কাছ থেকে কমপক্ষে পাঁচটি লিখিত সুপারিশপত্র থাকতে হবে; নিজস্ব প্রশিক্ষণ ও মূল্যায়ন কেন্দ্র থাকতে হবে, যেখানে আবাসনের সুবিধাও থাকবে। বাংলাদেশ–মালয়েশিয়া শ্রমবাজারে “সিন্ডিকেট ইস্যু” দীর্ঘদিন ধরেই বিতর্কের বিষয়।

আগের ব্যবস্থায় মাত্র ১০০টি বাংলাদেশি এজেন্সিকে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, যা ব্যাপক সমালোচিত হয়েছিল একচেটিয়া ও শোষণমূলক হিসেবে।

অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করা অধিকার সংগঠনগুলো জানায়, ওই সিন্ডিকেট শ্রম অভিবাসনের খরচ বাড়িয়ে দেয়, প্রতিযোগিতা সীমিত করে এবং হাজারো লাইসেন্সপ্রাপ্ত এজেন্সিকে প্রক্রিয়া থেকে বাদ দেয়। মালয়েশিয়া সরকার যদিও বলছে যে নতুন কাঠামোটি স্বচ্ছতা ও নৈতিক নিয়োগ বাড়াবে, তবুও পর্যবেক্ষকদের আশঙ্কা, কঠোর যোগ্যতা মানদণ্ড শেষ পর্যন্ত আবারও অল্প কয়েকটি প্রভাবশালী এজেন্সিকে সুবিধা দেবে — অর্থাৎ পুরোনো সিন্ডিকেট নতুন রূপে ফিরে আসবে।

বিশ্লষকরা বলছেন, তারা যেহেতু সমঝোতা স্মারক পরিবর্তনে আগ্রহী নয়, তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে এটি কিছুটা হলেও ভালো উদ্যোগ। তবে বাংলাদেশের মন্ত্রণালয়ের উচিত নির্বাচনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, যেন কোনো এজেন্সির মধ্যে ক্ষোভ না থাকে।

এমআরএম/জেআইএম

Read Entire Article