সড়ক পরিবহন ও সেতু এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, আমাদের দেশে দক্ষ প্রকৌশলী না থাকায় বাইরে থেকে লোক এসে সড়ক-রেলপথ বানিয়ে দিয়ে যায়। অথচ আমাদের দেশের বুয়েট থেকে প্রতিবছর হাজার হাজার ইঞ্জিনিয়ার বের হয়। এটা অনেক লজ্জার বিষয়। সুতারং বিদেশিদের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে দেশে দক্ষ প্রকৌশলী তৈরির চেষ্টা করতে হবে।
রোববার (২৪ আগস্ট) সকালে ভোগড়া থেকে নারায়ণগঞ্জের মদনপুর পর্যন্ত ৪৮ কিলোমিটার ঢাকা বাইপাস সড়কের ১৮ কিলোমিটার অংশের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
উপদেষ্টা বলেন, সেতু মন্ত্রণালয় একটি মাল্টিমডেল ট্রান্সপোর্ট প্ল্যান হাতে নিয়েছে, যেখানে সব পথকে আমরা একত্র করে দেখব। সড়ক, রেল, নৌপথ যেখানে যেটি উপযুক্ত সেখানে সেটি গুরুত্ব দেওয়া হবে। ভূমি অধিগ্রহণ একটি ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া, এখান থেকে বেরিয়ে অন্যান্য ট্রান্সপোর্টে আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে।
তিনি বলেন, আশপাশের দেশের তুলনায় আমাদের সড়কের নির্মাণ ব্যয় বেশি। এ ছাড়া এটি দুর্নীতির একটি বড় ক্ষেত্র। এগুলো কমানো গেলে রাস্তায় নির্মাণ ব্যয় ২০-৩০ শতাংশ কমানো সম্ভব।
পরে উপদেষ্টা ফিতা কেটে মহাসড়কের টোল প্লাজা ও প্রকল্প উদ্বোধন করেন। এ সময় তার সঙ্গে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক শরফ উদ্দিন, পুলিশ কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান, জেলা প্রশাসক নাফিসা আরেফীনসহ প্রকল্পের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা বাইপাস সড়ক প্রকল্পের চিফ অপারেটিং অফিসার শফিকুল ইসলাম আকন্দ বলেন, পিপিপি ভিত্তিতে জয়দেবপুর-দেবগ্রাম-ভুলতা-মদনপুর সড়ক ঢাকা-বাইপাস ৪-লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পটি গাজীপুরের ভোগড়া থেকে নারায়ণগঞ্জের মদনপুর পর্যন্ত ৪৮ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি সড়ক প্রকল্প। সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ সড়কের ডিজাইন, বিল্ড, ফিন্যান্স, অপারেট এবং মেইনটেন্যান্স DBFOT মডেল অনুসরণে বাস্তবায়িত হচ্ছে। সড়কটি ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা-ময়মনসিংহ এবং ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের সঙ্গে সংযুক্ত করে। প্রকল্পের আওতায় রোববার ১৮ কিলোমিটার অংশ যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হলো। প্রকল্পের নির্মাণকাজ আগামী বছরের জুন মাসে সম্পন্ন হবে বলে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন।
প্রকল্পের ফলে ঢাকা শহরে প্রবেশ ব্যতিরেকেই পণ্যবাহী যানবাহন কম সময়ে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ময়মনসিংহ, রংপুর ও রাজশাহী বিভাগে যাতায়াত করতে পারবে। এতে একই সঙ্গে ঢাকা শহরের যানজট ও দুর্ঘটনার ঝুঁকি হ্রাস পাবে বলে জানিয়েছেন সড়ক ব্যবহারকারী ও প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
আয়োজকরা জানান, এরই মধ্যে গাজীপুর অংশের ভোগড়া হতে পূর্বাচল পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার টোল সড়ক নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। একই সঙ্গে, গাজীপুরের ভোগড়া থেকে নারায়ণগঞ্জের বস্তুল পর্যন্ত প্রায় ৪০ কিলোমিটার সার্ভিস সড়কের অধিকাংশের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। সড়কের বিভিন্ন অংশে দুটি রেলওয়ে ওভারপাস এবং কাঞ্চন, নাগদা, উলুখোলাসহ ৮টি সেতু নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। কাঞ্চন থেকে ভুলতা পর্যন্ত অংশে টোল সড়কের নির্মাণকাজ চলমান। ভুলতা থেকে মদনপুর পর্যন্ত অংশে মাটি ভরাটসহ অন্যান্য কাজ চলছে। প্রকল্পের বর্তমান অগ্রগতি ৭০ ভাগ এবং নারায়ণগঞ্জ অংশে ভূমি অধিগ্রহণ ও ইউটিলিটি শিফটিং ডিসেম্বরের মধ্যে সমাপ্ত হবে।
বর্তমানে ঢাকা বাইপাস সড়কে প্রতিদিন গড়ে ১০ হাজার যানবাহন চলাচল করে, যার মধ্যে পণ্যবাহী ট্রাক ও ট্রেইলার প্রায় ৬০ শতাংশ, যা প্রকল্পটি পুরোপুরি চালু হলে বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকা বাইপাস সড়কে যানবাহনের ভ্রমণ সময় ও পরিচালন ব্যয় কমে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটবে এবং জীবনযাত্রার মানও উন্নত হবে।