বাগেরহাটে বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি হচ্ছে গোলপাতার ফল

1 month ago 7

গোলপাতা উপকূলীয় অঞ্চলের নোনাপানিতে অযত্নে জন্মানো একটি উদ্ভিদ। এর ফল স্থানীয়দের বাড়তি আয়ের উৎস হিসেবে কাজ করছে। বাগেরহাটের ঐতিহাসিক ষাট গম্বুজ মসজিদের সামনে বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি হচ্ছে গোলপাতার ফল। মসজিদের সামনে বিভিন্ন স্থানে ডাবের পাশাপশি গোলফল বিক্রি করছেন অন্তত ১০ জন বিক্রেতা।

সরেজমিনে জানা যায়, কেউ ভ্যানের ওপর সাজিয়ে, কেউবা টং দোকানে বেঁধে বিক্রি করছেন। এসব দোকানে ভিড় করছেন দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীরা। তাদের মধ্যে সাড়া ফেলছে এই গোলফল। কথা বলে জানা যায়, কেউ এ ফল প্রথম দেখেছেন, কেউ বইয়ে পড়েছেন। অপ্রচলিত ফলটি দেখতে ও খেতে ভিড় করতে দেখা যায়। উপকূলীয় অঞ্চল ছাড়া দেশের অন্যত্র ফলটি তেমন পরিচিত না হওয়ায় অনেকেই আগ্রহ নিয়ে জানতে চাচ্ছেন ফলটির বিষয়ে।

বাগেরহাটে বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি হচ্ছে গোলপাতার ফল

গোলপাতা উপকূলীয় অঞ্চলের পাম জাতীয় উদ্ভিদ। এটি প্রায় সব ম্যানগ্রোভ অঞ্চলেই জন্মে। এর পাতা প্রায় ৩ থেকে ৯ মিটার লম্বা হয়। এটি বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, বোর্নিও, পাপুয়া নিউগিনি, কম্বোডিয়া, মায়ানমারে জন্মায়।

সুন্দরবনের পাশাপাশি বাগেরহাট সদর, মোড়েলগঞ্জ, শরণখোলা, চিতলমারি, রামপাল ও মোংলা এলাকার নদী-নালা ও খাল-বিলের পাশে গোলগাছ দেখা যায়। মূলত উপকূলীয় অঞ্চলে ঘরের ছাউনির কাজে ব্যবহার হয়। এ ছাউনির মূল বৈশিষ্ট্য হলো গরমের সময় ঠান্ডা এবং ঠান্ডার সময় তুলনামূলকভাবে উষ্ণ রাখে ঘর। এ পাতার ছাউনির স্থায়িত্ব থাকে ৩ থেকে ৪ বছরের মতো।

গোলগাছের পাতার নিচ থেকে বেশ কয়েকটি কাদি বের হয়। এ কাদিতে ৫০ থেকে ১৫০টি ফল থাকে। গোলপাতার ফল স্থানীয়ভাবে গোলফল নামে পরিচিত। শখের বশেই এ গোলফল খাওয়ার প্রচলন শুরু হয়েছিল উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর মাঝে। এটি খেতে অনেকটা তাল শাসের মতো। ফলটি ৩ থেকে ৪ ইঞ্চি লম্বা হয়।

ষাটগম্বুজ মসজিদের সামনের গোলফল বিক্রেতা আব্দুর রহমান বলেন, ‘৬ থেকে ৭ বছর ধরে গোলফল বিক্রি করছি। প্রথমদিকে বেশি আয় হলেও এখন দোকানের সংখ্যা বাড়ায় আয় কিছুটা কমেছে। তবে ডাবের পাশাপাশি এটি বাড়তি আয়ের সহায়ক হিসেবে কাজ করছে।’

রাজধানীর শনির আখড়া থেকে আসা মাইনুল ইসলাম বলেন, ‘পরিবার নিয়ে ষাটগম্বুজ মসজিদ দেখতে আসছি। এসে দেখি নতুন এই ফল বিক্রি করছেন। খেয়ে দেখি অনেকটা তাল শাঁসের মতো।’

বাগেরহাটে বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি হচ্ছে গোলপাতার ফল

গাজীপুর থেকে আসা আরেক দর্শনার্থী তানভীর সিদ্দিকী বলেন, ‘আমাদের এলাকায় এ ফল পাওয়া যায় না। সবার দেখাদেখি আমিও খেয়ে দেখলাম। ফলটি ঠান্ডা প্রকৃতির কিন্তু কেমন নোনতা নোনতা লাগলো। ভাবছি যাওয়ার সময় কিছু গোলফল কিনে নিয়ে যাবো।’

সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তন্ময় দত্ত বলেন, ‘উপকূলীয় অঞ্চল ছাড়া এই ফল না হওয়ায় দর্শনার্থীরা বেশ আগ্রহ নিয়ে কিনে থাকেন। তবে বিক্রেতারা অধিক পরিমাণে ফল কাটতে থাকলে গাছ কমে যাওয়ার ঝুঁকি আছে। প্রাকৃতিকভাবে ফল থেকে গাছটি জন্মায় বিধায় সে বিষয়েও সংশ্লিষ্টদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’

নাহিদ ফরাজী/এসইউ/জিকেএস

Read Entire Article