বাণিজ্যমেলার শেষ সময়ের প্রস্তুতি, ব্যস্ত নির্মাণশ্রমিকরা

16 hours ago 6

রাজধানীর কুড়িল থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে রূপগঞ্জের পূর্বাচল উপশহরে বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে শুরু হচ্ছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার (ডিআইটিএফ) ২৯তম আসর। চতুর্থবারের মতো পূর্বাচলে আয়োজন হওয়া এ মেলা ঘিরে চলছে শেষ সময়ের প্রস্তুতি। আগামী ১ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস মাসব্যাপী এ মেলার উদ্বোধন করবেন।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে প্রতি বছর এ মেলা আয়োজন করা হয়। এবারের মেলায় দেশীয় পণ্যের পাশাপাশি ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, তুরস্ক, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, হংকং, সিঙ্গাপুর, নেপালসহ বিভিন্ন দেশ অংশ নিচ্ছে। পণ্য প্রদর্শনের পাশাপাশি দেশীয় পণ্য রপ্তানির বড় বাজার খোঁজার জন্য ইপিবি কাজ করছে।

আমরা সরাসরি মেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারি না। ফলে আমাদের ব্রোকারদের (দালাল) মাধ্যমে স্টল নিতে হয়। তারা আমাদের থেকে সবকিছুতে বেশি টাকা রাখে। আবার প্রতি বছর এই খরচ ২০-৩০ শতাংশ করে বেড়ে যায়।- ভারতীয় ব্যবসায়ী

দেশি-বিদেশি উৎপাদক-রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানসহ সাধারণ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে প্রায় ৩৫০টি বিভিন্ন প্যাভিলিয়ন ও স্টল বরাদ্দ দেওয়া হবে। দেশীয় পণ্যের প্রচার-প্রসার, বিপণন ও উৎপাদনে সহায়তা দেওয়াসহ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির উদ্দেশে ১৯৯৫ সাল থেকে ডিআইটিএফ আয়োজন করে আসছে ইপিবি।

বাণিজ্যমেলার শেষ সময়ের প্রস্তুতি, ব্যস্ত নির্মাণশ্রমিকরা

সরেজমিনে মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা গেছে, নির্ধারিত সময়ে মেলা উদ্বোধনের জন্য শ্রমিকরা কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। মেলার টিকিট কাউন্টার, দর্শনার্থীদের বিশ্রামের জন্য বেঞ্চ, বাউন্ডারির কাজ চলছে। কান পাতলেই চারদিকে হাতুড়ি, ড্রিল মেশিন, ঝালাই মেশিনের শব্দ।

পূর্বাচল ৩০০ ফুট এক্সপ্রেসওয়ের কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন হওয়ায় ঢাকা থেকে দর্শনার্থীরা ভোগান্তি ছাড়াই মেলায় আসতে পারবেন। মেলা চলাকালীন বিআরটিসির বিশেষ বাসও চলবে।

বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) সরেজমিনে দেখা যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন স্টল, প্যাভিলিয়ন নির্মাণশ্রমিকরা। কেউ স্টিলের কাঠামো ঝালাই করছেন, কেউ কাঠ কেটে কাঠামো তৈরি করছেন, কেউ আবার রঙ করছেন। তবে মেলার ৬০ শতাংশ এলাকায় এখনো স্টলের জায়গা ফাঁকা পড়ে আছে।

এখানে কোনো কিছুর নির্দিষ্ট দাম নেই। সবকিছুই দামাদামি করতে হয়। আমরা ভিনদেশি হওয়ায় আমাদের থেকে বেশি চার্জ করে। প্রতি কেজি পণ্যে ১০০০ টাকা ট্যাক্স দিতে হয়, যা গত বছরও ছিল ৮০০ টাকা। এখানেও দালাল আছে, যারা বেশি টাকা আদায় করে।- পাকিস্তানি ব্যবসায়ী

মেলার প্রধান ফটক ও প্রবেশদ্বার তৈরির কাজ চলছে। মূল অবকাঠামোর বাইরে চলছে বিভিন্ন দেশি-বিদেশি কোম্পানির প্যাভিলিয়ন নির্মাণের কাজ। মূল অবকাঠামোর ভেতরে বিভিন্ন প্রকার প্রসাধনী কোম্পানি, ইলেকট্রনিক অ্যান্ড ফার্নিচার, দেশি-বিদেশি কাপড়ের দোকান রয়েছে। মেলা উদ্বোধনের আর মাত্র দিন কয়েক বাকি থাকলেও বেশিরভাগ স্টলের কাজ এখনো শেষ হয়নি। হল ‘বি’ এর বেশিরভাগ স্টলের অবকাঠামোর কাজ শুরু হলেও হল ‘এ’ এর স্টল নির্মাণের কাজ এখনো শুরু হয়নি।

হল ‘এ’ এর একজন নির্মাণশ্রমিক সোহরাব জাগো নিউজকে জানান, তারা দুদিন আগে কাজ শুরু করেছেন। দিনরাত একাধারে কাজ করছেন। আশা করছেন নির্ধারিত সময়ের আগেই কাজ শেষ করতে পারবেন।

বাণিজ্যমেলার শেষ সময়ের প্রস্তুতি, ব্যস্ত নির্মাণশ্রমিকরা

২০২২ সাল থেকে পূর্বাচলের বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রে বাণিজ্যমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর আগে তা হতো ঢাকার শেরেবাংলা নগরে। জনদুর্ভোগ এড়াতে বাণিজ্যমেলা মূল শহর থেকে পূর্বাচলে স্থানান্তর করা হয়েছে।

গত বছর মেলায় দেশ-বিদেশের মোট ৩৩০টি স্টল, প্যাভিলিয়ন ও মিনি প্যাভিলিয়ন ছিল। যার মধ্যে ১৫-১৮টি বিদেশি স্টল। বরাবরের মতো ভারত, পাকিস্তান, ইরান, তুরস্ক, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ব্যবসায়ীরা এবারের মেলায় অংশ নিচ্ছেন।

নাবিস্কো প্যাভিলিয়নের কনস্ট্রাকশন ইনচার্জ বিশ্বজিৎ জাগো নিউজকে বলেন, আমরা ৯ ডিসেম্বর থেকে প্যাভিলিয়ন নির্মাণ শুরু করি। আমরাই সবার আগে স্টল বুঝিয়ে দেই। কাজ প্রায় শেষের দিকে। এখানে সব মিলিয়ে প্রায় ১২ জন শ্রমিক কাজ করছেন। প্রায় ১৩০০ বর্গফুটের স্টলটি একতলা।

বাণিজ্যমেলার শেষ সময়ের প্রস্তুতি, ব্যস্ত নির্মাণশ্রমিকরা

আমানত শাহ লুঙ্গি স্টল ঘুরে দেখা যায় নির্মাণকাজ প্রায় শেষ। প্যাভিলিয়নের ইন্টেরিয়র ইনচার্জ পারভেজ বলেন, আমরা ২২ ডিসেম্বর কাজ শুরু করেছি। এবার জায়গা পেতে একটু দেরি হয়েছে। তবে কাজ ৭৫ ভাগ শেষ।

প্রতি বছরের মতো এবারও বেশকিছু বিদেশি স্টল দেখা গিয়েছে। প্রধান ফটকের বাম দিকে প্রায় ১০টি দেশের সম্মিলিত একটি প্যাভিলিয়ন ঘুরে দেখা যায়, নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। কয়েকটি স্টলের রঙের কাজ চলছে।

ভারতের কেন্দ্রশাসিত এলাকা কাশ্মীরের ব্যবসায়ী আদিল ভাট জাগো নিউজকে বলেন, আমি গত সাত বছর ধরে এখানে আসছি। গত বছর আমরা তিন ভাই মিলে পাঁচটি স্টল নিয়েছিলাম। কিন্তু সবকিছুর খরচ বেড়ে যাওয়ায় এবছর মাত্র দুটি স্টল নিয়েছি।

তিনি বলেন, আমরা সরাসরি মেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারি না। ফলে আমাদের ব্রোকারদের (দালাল) মাধ্যমে স্টল নিতে হয়। তারা আমাদের থেকে সবকিছুতে বেশি টাকা রাখে। আবার প্রতি বছর এই খরচ ২০-৩০ শতাংশ করে বেড়ে যায়।

বাণিজ্যমেলার শেষ সময়ের প্রস্তুতি, ব্যস্ত নির্মাণশ্রমিকরা

ইরফান আলী নামে পাকিস্তানের একজন ব্যবসায়ী জাগো নিউজকে বলেন, কোনো কিছুর এখানে নির্দিষ্ট দাম নেই। পরিবহন খরচ, স্টল নির্মাণ খরচ, যাতায়াত খরচ, বাসা ভাড়া সবকিছুই দামাদামি করতে হয়। আমরা ভিনদেশি হওয়ায় আমাদের থেকে বেশি চার্জ করে। প্রতি কেজি পণ্যে ১০০০ টাকা ট্যাক্স দিতে হয়, যা গত বছরও ছিল ৮০০ টাকা। এখানেও দালাল আছে, যারা বেশি টাকা আদায় করে।

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আমরা এখানে ব্যবসা করতে এসেছি। এভাবে সবকিছুর খরচ বাড়তে থাকলে আমরা তো চালান উঠাতে পারবো না। এবছর আমার ৫-৭ জন ব্যবসায়ী বন্ধু আসেনি। এরকম হলে পরের বছর আমিও আসতে পারবো না। আমরা সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই, যেন এখানে কোনো দালাল না থাকে।

এসআরএস/এমকেআর/জিকেএস

Read Entire Article