আজ ৫ আগস্ট, দেশের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় দিন। ২০২৪ সালের এই দিনে ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার দীর্ঘমেয়াদি স্বৈরশাসনের অবসান ঘটে। দিনটিকে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ হিসেবে পালন করা হচ্ছে আজ। দিবসটি পালনে সরকারিভাবে নেওয়া হয়েছে নানা কর্মসূচি। সাধারণ মানুষও দিবসটি উদযাপনে নেমে এসেছেন রাজপথে।
শুধু বড়রা নন, শিশুরাও শামিল হয়েছে দিবসটি উদযাপনে। বাবার হাত ধরে পতাকা হাতে শিশুরাও দিবসটি স্মরণীয় করে রাখতে বের হয়েছে বাইরে।
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউসহ বিভিন্ন স্থানে এমন চিত্র দেখা যায়।
এদিন দেশের নানা প্রান্ত থেকে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মানুষ ছুটে এসেছেন। বিশেষ করে আগারগাঁও ও মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে মানুষের উল্লেখযোগ্য ভিড় দেখা যায়। এর মধ্যে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে নানা কর্মসূচি পালিত হবে। বিকেলে সেখানেই ঘোষণা করা হবে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’।
দিনটিকে অনেকেই বলছেন ‘৩৬ জুলাই’। কারণ ২০২৪ সালের জুলাইয়ে শুরু হওয়া আন্দোলনের ৩৬তম দিনেই পতন ঘটে শেখ হাসিনার দীর্ঘ স্বৈরাচারী শাসনের। ছাত্র-জনতার দুর্বার আন্দোলনে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশত্যাগে বাধ্য হন এবং আওয়ামী লীগের দেড় দশকেরও বেশি সময়ের একনায়কতন্ত্রের অবসান ঘটে।
স্মরণীয় এই দিনে দুই কন্যাকে সঙ্গে নিয়ে আগারগাঁও এসেছেন সোনালী ব্যাংকের সিনিয়র কর্মকর্তা মেজবাহ হাবিব। তিনি বলেন, ‘আমার মেয়ে নুসাইবা ও সুয়াইবাকে নিয়ে এসেছি যেন তারা জানে কীভাবে একটি গণআন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচারের পতন ঘটে। ছোট থেকেই তাদের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতে চাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত বছরের জুলাইয়ে মিরপুর ১০ রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল। গুলিবর্ষণে প্রাণ হারিয়েছেন অনেক শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ। তাই দিনটি শুধুই স্মরণ নয়, এটি বাকস্বাধীনতা ফিরে পাওয়ার দিন, গণতন্ত্রের পথে বিজয়ের দিন।’
মোহাম্মদপুর থেকে মাথায় পতাকা বেঁধে আসা আব্দুস সুবহান বলেন, ‘গত বছরের এই দিনে পুলিশের কিছু অংশ, বিজিবি ও আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মী বোমা ও গুলি চালিয়ে হত্যাযজ্ঞ চালায়। অথচ তখন শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। আজকের এই দিন রক্তের বিনিময়ে অর্জিত। তাই এখানে এসে উদযাপন করছি নতুন বাংলাদেশের জন্মক্ষণ।’
নয়াটোলা বড় মাদরাসার শিক্ষার্থী আল মামুন বলেন, আমাদের শিক্ষকরা বলেছিলেন ‘হয় স্বাধীনতা, নয় মৃত্যু’। সেই বিশ্বাস নিয়েই রাজপথে নেমেছিলাম। আজ সেই বিজয়ের দিন উদযাপন করতে এসেছি মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে। শুনেছি ড. ইউনূস আজ ‘জুলাই সনদ’ ঘোষণা করবেন—যা আমাদের ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা দেবে।
ফিল্ম ডিরেক্টর সোহেল রাজ বলেন, ‘স্বৈরাচার পতনের এক বছর পর জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবসের এই উদযাপন যেন শুধু একটি স্মরণ নয়, বরং ভবিষ্যতের বাংলাদেশ গঠনের এক নতুন শপথ। দিনটি স্মরণীয়, তাই উদযাপনে এসেছি।’
ইএআর/ইএ/এমএস