বিআরটির ১৩৭ এসি বাস কিনতে বাধা নেই

3 months ago 48

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গাজীপুরের শিববাড়ি পর্যন্ত বিআরটি করিডরের জন্য বিশেষায়িত শীতাতপনিয়ন্ত্রিত (এসি) গণপরিবহন সেবা দিতে বাস কেনার জন্য দরপত্র আহ্বান নিয়ে করা রিট খারিজ করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।

আইনি জটিলতা কেটে যাওয়ার ফলে দেশে প্রথম শীতাতপনিয়ন্ত্রিত (এসি) র‌্যাপিড ট্রানজিটের (বিআরটি) জন্য ১৩৭টি বাস কিনতে আর কোনো বাধা নেই বলে জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন আইনজীবীরা।

ঢাকা বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে জারি করা রুল যথাযথ এবং চীনা প্রতিষ্ঠান ঝোং টং বাস হোল্ডিং কোম্পানি লিমিটেডের করা অন্য রিট খারিজ করে এ রায় দেওয়া হয়।

বাসগুলো কেনার জন্য দরপত্রকে কেন্দ্র করে পৃথক দুটি রিটের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে বৃহস্পতিবার (৩০ মে) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ারের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় দেন।

আদালতে ওইদিন ঢাকা বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানির পক্ষে শুনানিতে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী আবু মোহাম্মদ (এ এম) আমিন উদ্দিন ও আইনজীবী এস এম জহুরুল ইসলাম। ঝোং টং বাস হোল্ডিংয়ের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী নূরুল ইসলাম সুজন ও আইনজীবী সাখাওয়াত হোসেন।

রায়ের বিষয়টি শনিবার (১ জুন) জাগো নিউকে নিশ্চিত করেন ঝোং টং বাস হোল্ডিংয়ের সিনিয়র আইনজীবী নূরুল ইসলাম সুজন ও ঢাকা বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানির আইনজীবী এস এম জহুরুল ইসলাম।

তারা বলেন, ২৭ ফেব্রুয়ারি রিভিউ প্যানেলের দেওয়া সিদ্ধান্ত বাতিল করেছেন হাইকোর্ট। নতুন করে আহ্বান করা দরপত্র কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে ঝোং টং বাস হোল্ডিংয়ের করা রিট খারিজ করে রায় দিয়েছেন। ফলে ১৩৭টি এসি বাস কেনার জন্য ১৮ এপ্রিল দেওয়া নতুন দরপত্রের কার্যক্রম চালাতে ও এ অনুসারে কাজ শেষ করতে আইনগত কোনো বাধা নেই। আগামী ১০ জুন দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ। ভারত, চীন, ব্রাজিল, ইউরোপসহ বিদেশি বহু প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে দরপত্র কিনেছে। নাগরিকেরা শিগগির বিশেষায়িত এ গণপরিবহন সেবা পাবেন বলে আশা করেন তিনি।

‘গ্রেটার ঢাকা সাসটেইনেবল আরবান ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্ট’ শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়নাধীন। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, ফরাসি উন্নয়ন সংস্থা ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে বিআরটি লাইন-৩-এর সম্প্রসারিত উত্তর অংশটি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গাজীপুরের শিববাড়ি পর্যন্ত ২০ দশমিক ৫ কিলোমিটার করিডর বিস্তৃত। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীনে ঢাকা বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিবিআরটিসিএল)। বিমানবন্দর-গাজীপুর বিআরটি করিডরে বিশেষায়িত বাসসেবা পরিচালিত হবে ‘ঢাকা লাইন’ নামে।

ডিবিআরটিসিএলের আইনজীবীর তথ্য অনুযায়ী, ডিবিআরটিসিএল ১৩৭টি ডিজেলচালিত এসি বাস কেনার জন্য গত ১৪ জানুয়ারি দরপত্র আহ্বান করে। দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি চারটি প্রতিষ্ঠানকে রেসপনসিভ (কারিগরিভাবে যোগ্য) ঘোষণা করে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে হাইগার বাস কোম্পানি লিমিটেডকে সুপারিশ করে। তবে তদন্তে দরপত্র দাখিল করা অন্য একটি প্রতিষ্ঠান জিয়ামেন গোল্ডেন ড্রাগন বাস কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে ওই কোম্পানির স্বার্থের সংঘাতের প্রমাণ পাওয়ায় দুই কোম্পানিরই দরপত্র বাতিল হয়। কার্যকর প্রতিযোগিতার অভাব দেখা দেওয়ায় ঢাকা বিআরটি পরিচালনা পর্ষদ এক সভায় সব দরপত্র বাতিল করে। পাশাপাশি দাপ্তরিক প্রাক্কলন, বাজেট পুনর্র্নিধারণ, দরপত্র দলিলের শর্ত, পণ্যের নকশা ও পরিধি সংশোধন করার নির্দেশনা দেয়।

নথিপত্র থেকে জানা যায়, ওই দরপত্র বাতিলের বিরুদ্ধে দরপত্র দাখিল করা চীনা প্রতিষ্ঠান ঝোং টং বাস হোল্ডিং কোম্পানি লিমিটেড পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় ক্রয়সংক্রান্ত কারিগরি ইউনিটে (সিপিটিইউ) আবেদন (রিভিউ) করে। সিপিটিইউর পর্যালোচনা দল (রিভিউ প্যানেল) ২৭ ফেব্রুয়ারি সিদ্ধান্ত দেন। ঢাকা বিআরটি পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক দরপত্র বাতিল সমীচীন হয়নি উল্লেখ করে রিভিউ প্যানেল দরপত্র পুনর্মূল্যায়নের আদেশ দেয়।

রিভিউ প্যানেলের ওই সিদ্ধান্তের বৈধতা নিয়ে হাইকোর্টে রিট করে ঢাকা বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড। এ রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট গত ১১ মার্চ রুল জারির পাশাপাশি রিভিউ প্যানেলের সিদ্ধান্ত স্থগিত করেন। রুলে রিভিউ প্যানেলের ২৭ ফেব্রুয়ারির সিদ্ধান্ত কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয় রুলে।

এরপর ঢাকা বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড ১৩৭টি বাস কেনার জন্য গত ১৮ এপ্রিল নতুন করে দরপত্র আহ্বান করে। এ দরপত্রের কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে ঝোং টং বাস হোল্ডিং কোম্পানি লিমিটেড হাইকোর্টে একটি রিট করে।

ঢাকা বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে দেওয়া রুল এবং চীনা প্রতিষ্ঠান ঝোং টং বাস হোল্ডিং কোম্পানির করা পৃথক রিটের ওপর একসঙ্গে শুনানি হয়। সেই রিটের শুনানি শেষে রায় ঘোষণা করেন।

এফএইচ/এমআইএইচএস/জেআইএম

Read Entire Article