কালীগঞ্জ উপজেলা এবং গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৪০, ৪১ ও ৪২ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত গাজীপুর-৫ আসন। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে আসনটিতে শুরু হয়েছে নির্বাচনি আমেজ। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলনসহ বিভিন্ন দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরেশোরে চালিয়ে যাচ্ছেন। সামাজিক ও ধর্মীয় নানা অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার পাশাপাশি প্রার্থীদের অনেকে এখন সক্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও।
তবে এ আসনে এবার আলোচনায় আছেন জনতার দলের (নিবন্ধনহীন) কেন্দ্রীয় মহাসচিব মোহাম্মদ আজম খান। তিনি জাতীয় পার্টির সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা। ভোটাররা বলছেন, জয়ের পথে বিএনপি-জামায়াতের চিন্তার কারণ হতে পারেন আজম খান। কেননা এ আসনে বেশ জনসমর্থন রয়েছে তার।
আসনটিতে এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বেশির ভাগ সময়ই জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে সাংগঠনিক কার্যক্রমে গতি বাড়িয়েছে বিএনপি। দলের প্রতিটি কর্মসূচি পালন করছেন নেতাকর্মীরা। প্রতিটি ইউনিয়নে কর্মী সম্মেলন করে কর্মীদের চাঙা করা হচ্ছে। আগামী নির্বাচনে প্রার্থীদের অবস্থান নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। তবে বসে নেই অন্য দলের প্রার্থীরাও।
১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনের এমপি হন আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ময়েজ উদ্দিন আহমেদ। ১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের প্রয়াত ডাক্তার আসফার হোসেন মোল্লা।
১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বিজয়ী হন গাজীপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও দলের কেন্দ্রীয় সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম ফজলুল হক মিলন। পরে ১৯৯৬ সালের জুনের নির্বাচনে বিজয়ী হন গাজীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ডাকসুর সাবেক ভিপি আওয়ামী লীগের আখতারউজ্জামান। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি থেকে জয়ী হন একেএম ফজলুল হক মিলন।
২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হন শহীদ ময়েজ উদ্দিনের মেয়ে মেহের আফরোজ চুমকি। পরবর্তী সময়ে তিনি ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি হন। ২০১৮ সালেও এমপি হন তিনি। ২০২৪ সালের নির্বাচনে চুমকিকে হারিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন ডাকসুর সাবেক ভিপি আওয়ামী লীগের প্রার্থী আখতারউজ্জামান।
এ আসনে মোট ভোটার তিন লাখ ১৮ হাজার ৪৩০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ৬০ হাজার ৪৩৬ জন। নারী ভোটার এক লাখ ৫৭ হাজার ৯৯২ জন। আর তৃতীয় লিঙ্গের দুজন।
এবার এ আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন গাজীপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফজলুল হক মিলন। নির্বাচনের বিষয়ে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘সাংগঠনিকভাবে আমরা কালীগঞ্জে অনেক সুসংগঠিত। যে কোনো মুহূর্তে নির্বাচন দিলে আমরা প্রস্তুত। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এ আসনে জনগণ বিএনপিকে বিপুল ভোটে জয়ী করবে।’
জনতার দলের প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন দলটির কেন্দ্রীয় মহাসচিব মোহাম্মদ আজম খান। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘জনগণের দল হিসেবে জনতার দলের প্রার্থীকে জনগণ ভোট দেবে, এটা আমার প্রত্যাশা। কালীগঞ্জকে একটি পরিকল্পিত উন্নয়নের আওতায় আনতে চাই।’
এ আসনে জামায়াতে ইসলামীর মনোনয়ন পেয়েছেন গাজীপুর মহানগর সেক্রেটারি মো. খায়রুল হাসান। দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে এলাকায় জনসংযোগ করে যাচ্ছেন তিনি।
আরও পড়ুন:
৪ ভাগে বিভক্ত বিএনপি, নির্ভার জামায়াত
আসন পুনরুদ্ধারে মরিয়া বিএনপি, বসে নেই জামায়াত
খায়রুল হাসান জাগো নিউজকে বলেন, ‘মানুষ জামায়াতে ইসলামীর দিকে ঝুঁকছে। জামায়াত পরিচ্ছন্ন রাজনীতি করে। আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ঘুস-দুনীতির অভিযোগ নেই। আশা করি, আগামী নির্বাচনে জামায়াত ভালো অবস্থানে থাকবে।’
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমানকে এ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তিনি একজন সুবক্তা হিসেবে পরিচিত। ২০২৩ সালে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তৃতীয় অবস্থানে ছিলেন। জানালেন জয়ের ব্যাপারে তিনি আশাবাদী।
আসনটিতে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন দলটির কেন্দ্রীয় সংগঠক এসএম শোয়াইব। তিনি বলেন, ‘জনগণ পরিবর্তনের পক্ষে, জুলাই অভ্যুত্থানের পক্ষে এনসিপিকেই বেছে নেবে বলে আশা করছি। এলাকার মানুষ তরুণ প্রজন্মকে নেতৃত্বে দেখতে চায়। আশা করছি জনগণ আমাকে বিমুখ করবে না।’
আরও পড়ুন:
তৃতীয়বারের মতো বিএনপি জিতবে নাকি জামায়াতের অভিষেক?
রিয়াজুল হান্নান-সালাউদ্দিন আইয়ুবীর মধ্যে লড়াইয়ের আভাস
তানিয়া রবের জন্য আসন ছেড়ে দিলে মানবেন না বিএনপির নিজান
আসন্ন নির্বাচনকে নিয়ে এ আসনের ভোটাররা নানা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। কালীগঞ্জ উপজেলার উলুখোলা এলাকার ব্যবসায়ী আমিন উদ্দিন বলেন, ‘গত ১৫টি বছর ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারিনি। এবার ভোট দেওয়ার সুযোগ থাকলে অবশ্যই কেন্দ্রে গিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেবো।’
আওড়াখালী এলাকার ব্যবসায়ী মো. নোমান বলেন, ‘জনগণ এবার ভোট দেওয়ার অপেক্ষায়। যিনি উন্নয়ন করতে পারবেন, যোগ্য বলে বিবেচিত হবে, তাকেই আমরা বেছে নেবো।’
ভোট দেওয়ার জন্য নিরাপত্তা চাইলেন কালীগঞ্জ বাজার এলাকার গৃহিণী জুলেখা আক্তার। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা সুষ্ঠু ভোট চাই। কেন্দ্রে গিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে চাই। এজন্য ভোটদানের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। ভোটারদের নিরাপত্তা দিয়ে কেন্দ্র পর্যন্ত যেতে দিতে হবে।’
এমএআই/এসআর/এমএমএআর/এমএস

1 hour ago
4









English (US) ·