চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ হচ্ছে জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সদরের আসনটি। এই আসনে বিএনপির রাজনীতি চোখে পড়ার মতো। কারণ জেলায় বিএনপির ভোট সবচেয়ে বেশি সদরেই। তবে সাংগঠনিকভাবে নড়বড়ে অবস্থায় জেলা বিএনপি। গ্রুপিং, অন্তর্কোন্দল প্রকট আকার ধারণ করেছে দলটিতে। বিভিন্ন ঘটনায় টালমাটাল নেতাকর্মীরা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের রাজনৈতিক ইতিহাস বলছে, ১৯৯০ সালে এরশাদের পতনের পর থেকে বিএনপির শক্ত ঘাঁটি হয়ে ওঠে চাঁপাইনবাবগঞ্জ। টানা কয়েকটি জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জের রাজনীতিতে দলটির শেকড় কতটা গভীরে তা প্রমাণ করেছে ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনী ফল।
এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন চাইবেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হারুনুর রশীদ। তিনি এর আগে পাঁচবার এ আসনে দলের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছেন। ২০১৮ সালের বিতর্কিত রাতের ভোটের নির্বাচনে এমপি হন তিনি। যদিও এ আসনে সে সময়ও ভোট ভালো হয়েছে বলে দাবি করেন অনেকেই। হারুনুর রশীদ ছাড়াও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম জাকারিয়া, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল ইসলাম (চাইনিজ রফিক) ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আব্দুল ওয়াহেদও মনোনয়ন চাইবেন। তারা প্রত্যেকেই নানাভাবে গণসংযোগ ও লবিং-তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন।
তবে বর্তমানে বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা নড়বড়ে। এ আসনের সাবেক এমপি ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হারুনুর রশীদের মতামত ও তার অনুসারীদের না নিয়েই ২০২১ সালের ডিসেম্বরে জেলা শাখার আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্র।
এর মধ্যদিয়ে স্থানীয় রাজনীতিতে হারুনুর রশীদের প্রায় দুই দশকের আধিপত্যের অবসান ঘটে। সব মিলিয়ে এ আসনে বিএনপির এখন তিনটি গ্রুপ। অভ্যন্তরীণ কোন্দল বিএনপির ভিত্তিকে দুর্বল করে দিচ্ছে বলে মনে করেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা।
এ আসনে জামায়াতের প্রার্থী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল। জামায়াত ও বিএনপির কেন্দ্রীয় দুই হেভিওয়েট নেতার হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের কথা বলছেন সাধারণ ভোটাররা। বিএনপি নেতা হারুনুর রশীদ মনোনায়ন না পেলে ফলাফল জামায়াতের পক্ষে যাওয়ার কথাও বলছেন অনেকে। কারণ নূরুল ইসলাম বুলবুল জামায়াতের একক প্রার্থী হিসেবে দীর্ঘদিন মাঠে রয়েছেন। কাজ করছেন দিন-রাত এক করেই। এছাড়া ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির হিসেবে ইমেজ বেড়েছে বিগত দিনের চেয়ে কয়েকগুণ। এমনকি বুলবুল সারাদিন মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। কিন্তু বিএনপি নেতাদের সেভাবে মাঠে দেখা যাচ্ছে না।
দলের ভেতরে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা, একাধিক গ্রুপের আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা এবং কিছু নেতার ‘নিজস্ব বলয়’ গড়ে তোলার প্রবণতা জটিল করে তুলেছে বিএনপির রাজনীতি।
- আরও পড়ুন
- বিএনপির ঘাঁটিতেও প্রভাব বেড়েছে জামায়াতের
- বিএনপি-জামায়াত দুই দলই আশাবাদী
- বিএনপির চ্যালেঞ্জ জামায়াত-ইসলামী আন্দোলন
এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন চাইবেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হারুনুর রশীদ। তিনি এর আগে পাঁচবার এ আসনে দলের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন। ২০১৮ সালের বিতর্কিত রাতের ভোটের নির্বাচনে এমপি হন তিনি। যদিও এ আসনে সে সময়ও ভোট ভালো হয়েছে বলে দাবি করেন অনেকেই। হারুনুর রশীদ ছাড়াও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম জাকারিয়া, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল ইসলাম (চাইনিজ রফিক) ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আব্দুল ওয়াহেদও মনোনয়ন চাইবেন। তারা প্রত্যেকেই নানাভাবে গণসংযোগ ও লবিং-তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন।
আমাদের বাড়ির সামনে পাঁচ বছর বছর ধরে পানি জমে থাকে। বৃষ্টি হলে তো জমে থাকেই, দুপুরের গোসলের পানিও জমে যায়। কারণ অকার্যকর ড্রেনেজ ব্যবস্থা। আমরা অনেক জনপ্রতিনিধির কাছে গিয়েছি, কোনো লাভ হয়নি। জনপ্রতিনিধিদের ওপর আমাদের আস্থা হারিয়ে গেছে। তাই নির্বাচন নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই।
জানা গেছে, ১৯৯১ সালে এ আসনে জয়ী হন জামায়াতের লতিফুর রহমান। এরপর ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে পরপর দুবার এমপি হন বিএনপির হারুনুর রশীদ। ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে জয়ী হন আওয়ামী লীগের আব্দুল ওদুদ। ২০১৮ সালের নির্বাচনে আবার বিএনপির দখলে যায় এ আসনটি। এমপি নির্বাচিত হন হারুনুর রশীদ।
এ আসনে জামায়াতের প্রার্থী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল। জামায়াত ও বিএনপির কেন্দ্রীয় দুই হেভিওয়েট নেতার হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের কথা বলছেন সাধারণ ভোটাররা। বিএনপি নেতা হারুনুর রশীদ মনোনায়ন না পেলে ফলাফল জামায়াতের পক্ষে যাওয়ার কথাও বলছেন অনেকে। কারণ নূরুল ইসলাম বুলবুল জামায়াতের একক প্রার্থী হিসেবে দীর্ঘদিন মাঠে রয়েছে। কাজ করছেন দিন-রাত এক করেই। এছাড়া ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির হিসেবে ইমেজ বেড়েছে বিগত দিনের চেয়ে কয়েকগুণ। এমনকি বুলবুল সারাদিন মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। কিন্তু বিএনপি নেতাদের সেভাবে মাঠে দেখা যাচ্ছে না।
- আরও পড়ুন
- ১৮ বছর পর ফেরা তুহিনের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াত
- লাখের বেশি হিন্দু ভোটারের মন জয়ে তৎপর বিএনপি-জামায়াত
- প্রার্থী নিয়ে কোন্দল মিটেছে বিএনপির, সুযোগ খুঁজছে জামায়াত
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার স্বরূপনগর এলাকার বাসিন্দা হাওয়ানূর বেগম বলেন, এতদিন আমাদের ভোটের অধিকার ছিল না। এখন নতুন করে স্বপ্ন দেখছি ভোট দিতে পারবো। বিগত দিনে যত সংসদ সদস্য হয়েছেন কেউ জনগণের জন্য কাজ করেননি। এবার আমরা নতুন করে নেতা নির্বাচন করতে চাই।
নতুন নেতা চান স্বরূপনগরের হাওয়ানূর বেগম-ছবি জাগো নিউজ
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার সোনার মোড় এলাকার বাসিন্দা ইমান হোসেন বলেন, আমাদের বাড়ির সামনে পাঁচ বছর বছর ধরে পানি জমে থাকে। বৃষ্টি হলে তো জমে থাকেই, দুপুরের গোসলের পানিও জমে যায়। কারণ অকার্যকর ড্রেনেজ ব্যবস্থা। আমরা অনেক জনপ্রতিনিধির কাছে গিয়েছি, কোনো লাভ হয়নি। জনপ্রতিনিধিদের ওপর আমাদের আস্থা হারিয়ে গেছে। তাই নির্বাচন নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই।
সদর উপজেলা বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়নের বাসিন্দা আব্দুর রাহিম বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচন ব্যবস্থা নষ্ট করে দিয়েছে। নির্বাচন কমিশনের ওপর আমাদের আর ভরসা হয় না। তবে এখন অন্তর্বর্তী সরকার আছে। নতুন করে নির্বাচন হলে হয়তো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর আসনের জামায়াতের প্রার্থী মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ১৭ বছর মানুষ সুষ্ঠু নির্বাচন দেখেনি। জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে মানুষের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা বেড়েছে। সাধারণ মানুষ বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও প্রভাবমুক্ত একটি নির্বাচন দেখতে চায়। জামায়াত মানুষের জন্য কাজ করে। আমিও মানুষের জন্যই কাজ করি। এমনকি সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত দিনে অন্তত পাঁচটি এলাকায় গিয়ে মানুষের দুঃখের কথা আমি শুনি। তাই আশা করছি আমাকে মানুষ তাদের সেবা করার সুযোগ দেবে।
বুলবুলের উঠোন বৈঠক-সংগৃহীত ছবি
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী রফিকুল ইসলাম বলেন, দলের জন্য আমার ত্যাগ চোখে পড়ার মতো। কঠিন সময়ে দলের দায়িত্ব নিয়ে পালন করে যাচ্ছি। বিগত দিনেও করেছি। করে যাব দলের জন্য সব সময়। দায়িত্ব নিয়ে দলকে সেবা দিয়ে যাচ্ছি নিঃস্বার্থভাবে। অবদান বিবেচনায় দল নিশ্চয়ই আমাকে অগ্রাধিকার দেবে।
- আরও পড়ুন
- নিজামীর ছেলে দাঁড়িপাল্লার প্রার্থী, ধানের শীষ চান অনেকেই
- বিভক্ত বিএনপি, সুযোগ নিতে চায় জামায়াত
- সাবেক চেয়ারম্যান জামায়াতের এমপি প্রার্থী, বিএনপিতে সম্ভাব্য তিন
বিএনপির আরেক মনোননপ্রত্যাশী আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রাথমিকভাবে আমাকে ও হারুন সাহেবকে (হারুনুর রশীদ) মনোনয়ন দিয়েছিল। পরে চূড়ান্ত মনোনয়ন নিয়ে হারুনুর রশীদ নির্বাচন করেন। আমরা মনে করি জনগণ নতুন নেতৃত্ব চায়। জনগণের কাছে আমার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ নির্বাচন কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, আমরা ইসির নির্দেশনা মেনে কাজ করছি। তবে কয়েকদিন থেকে লক্ষ্য করছি নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসায় সাধারণ মানুষের মধ্যে উৎসব বিরাজ করছে। কারণ মানুষ নতুন করে ভোটার হচ্ছেন। জাতীয় পরিচয়পত্রের ভুলত্রুটি সংশোধন করছেন। আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।
ভোটের পরিসংখ্যান
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) আসনের মোট ভোটার ৪ লাখ ৪৯ হাজার ৯৬৮। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ২৭ হাজার ২৬৩ ও নারী ভোটার ২ লাখ ২২ হাজার ৭০৫।
এসওএম/এসএইচএস/এমএফএ/জিকেএস