বিএনপিপন্থি ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নতুন কমিটি নিয়ে নানা অভিযোগ

1 day ago 9
বিএনপিপন্থি ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের সংগঠন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিইএব) নবগঠিত কমিটি নিয়ে নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন সংগঠনটির পদবঞ্চিতরা। অবশ্য কমিটি ঘোষণার খবর জানতে পেরে তা স্থগিতের দাবিতে কিছুদিন আগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।  পদবঞ্চিতদের দাবি, ডিইএব’র নতুন কমিটির ৩৩ সদস্যের কমিটির মধ্যে অন্তত ২৭ জন নেতা নতুন কমিটিকে ভালোভাবে নেননি। ৩১ নং সদস্য কাজী মো. ইলিয়াছ ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তিনি কমিটি সম্পর্কে অবগত নন। এ বিষয়ে তাকে নিয়ে কেউ যাতে ফেসবুকে পোস্ট না করে।’ কয়েকজন পদত্যাগ করবেন বলে জানিয়েছেন। পদবঞ্চিতরা বলেন, কেবলমাত্র বিশেষ কয়েকজন নেতার অনুসারীদের সমন্বয়ে এই কমিটি করা হয়েছে। তারা বলেন, এই কমিটি যেকোনো সময় বাতিল হতে পারে। একদিনও নতুন কমিটির কার্যক্রম চলতে দেওয়া হবে না। যাদেরকে দিয়ে নতুন কমিটি করা হয়েছে তারা বিগত ১৫ বছরে রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় ছিলেন। বেশিরভাগই বিগত কমিটিতে ছিলেন না এবং বিগত কমিটির কয়েকজনকে পদাবনতি করা হয়েছে।  অন্যদিকে ছাত্রদলের সাবেক নেতা এবং বিগত কমিটির সক্রিয় নেতাদেরকে নতুন কমিটিতে কোনো পদ দেওয়া হয়নি। এটি ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে প্রকৌশলীদের চলমান আন্দোলনে এই কমিটি আরও অস্থিরতা তৈরি করবে। কেননা ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের সংগঠনে ডিগ্রিধারীদেরও পদ দেওয়া হয়েছে। সভাপতি নিজেই বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার। জানা গেছে, শনিবার (৩০ আগস্ট) রাতে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ডিইএব’র ৩৩ সদস্যের নতুন কমিটি গঠন করা হয়। এতে প্রকৌশলী মো. হানিফকে আহ্বায়ক এবং প্রকৌশলী কাজী সাখাওয়াত হোসেনকে সদস্যসচিব করা হয়েছে। এছাড়া ৮ জনকে যুগ্ম আহ্বায়ক এবং ২৩ জনকে সদস্য করা হয়েছে। এই কমিটি ঘোষণার পরপরই বিএনপিপন্থি ডিপ্লোমা প্রকৌশলী ও ডিইএব’র বিগত কমিটির নেতাদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।  নতুন কমিটিতে পদবঞ্চিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন নেতা অভিযোগ করে বলেন, তারা বিগত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের দু:শাসনে হামলা-মামলা মোকাবিলা করে রাজপথে সক্রিয় ছিলেন। ছাত্রজীবনে ছাত্রদল করেছেন। অথচ তাদেরকে বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগের দোসরদের সমন্বয়ে ডিইএব’র নতুন কমিটি করা হয়েছে। যা ত্যাগী ও কারা নির্যাতিত নেতাকর্মী এবং শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি বলে তারা জানান।  একেবারে নতুন ৮ জনকে ডিইএব’র কমিটিতে পদ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এরা হলেন- যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সাইফুল ইসলাম রনি, যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সোহেল রানা স্বপন, সদস্য মো. হুমায়ুন কবির শামিম, সদস্য গাজী মো. সেলিম, সদস্য মো. আশরাফুল হোসেন শাকিল, সদস্য কাজী মো. ইলিয়াস, সদস্য মো. শফিউল আজম সোহেল এবং সদস্য মো. মিজানুজ্জামান রুবেল।  পদবঞ্চিত নেতা ও বিগত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া রুবেল বলেন, নতুন কমিটিতে অনেক নতুন লোককে পদ দেওয়া হয়েছে। এখানে একটি গ্রুপের লোকদের পদায়ন করা হয়েছে। অনেকেই বিগত দিনে আন্দোলনে নিষ্ক্রিয় ছিল। অথচ আমি আওয়ামী লীগ আমলে চাকরি হারিয়েছি, জেল খেটেছি, রাজপথের আন্দোলনে ছিলাম তবুও আমাকে কমিটিতেই রাখা হয়নি। এসব ঘটনায় জাতীয়তাবাদী আদর্শে বিশ্বাসী ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। এদিকে ডিইএব’র কমিটি স্থগিত করার দাবিতে তারেক রহমানের কাছে আবেদন আগেই দিয়েছেন জাতীয়তাবাদী আদর্শের ডিপ্লোমা প্রকৌশলীবৃন্দ। আবেদনে বলা হয়েছে, ডিইএব’র স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে সরাসরি অংশগ্রহণকারী রাজপথের ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে ৫ আগস্ট ২০২৪ পরবর্তী অনুপ্রবেশকারী স্বৈরাচারের দোসরদের অন্তর্ভুক্ত করে ডিইএব কমিটি গঠন প্রক্রিয়া স্থগিত করণ প্রসঙ্গে। আমরা জানতে পারলাম প্রকৌশলী মোহাম্মদ হানিফ এবং প্রকৌশলী কাজী শাখাওয়াত হোসেন যারা এই সংগঠনের শুরু থেকে অদ্যাবধি পর্যন্ত সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে জড়িত এবং বিএনপির কর্মসূচিগুলোতে নিয়মিত অংশগ্রহণ, সাংগঠনিক জ্ঞান বুদ্ধি ও দক্ষতা সম্পন্ন যাদের মূল শিকড় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল থেকে বেড়ে ওঠা যারা আপনার ডাকে সাড়া দিয়ে জুলাই আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল তাদেরকে বাদ দিয়ে অনুপ্রবেশকারী আওয়ামী দোসরদের আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করে ইঞ্জিনিয়ার শাহরিন ইসলাম তুহিন সাহেবকে সত্য ঘটনা আড়াল করে অত্যন্ত গোপনে তৃণমূল সদস্যদের মতামতকে উপেক্ষা করে ডিইএব কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন চূড়ান্ত করেছে। অভিযোগে বলা হয়, প্রকৌশলী মো. হানিফ ও প্রকৌশলী কাজী সাখাওয়াত হোসেন সংগঠনের প্রাক্তন সদস্য হলেও তাদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য তৃণমূলে তারা এখন যথেষ্ট বিতর্কিত। মোহাম্মদ হানিফ ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ছাত্র শিবিরের সভাপতি ছিলেন এবং ১৯৮০ সালে ছাত্রশিবির থেকে ভিপি নির্বাচন করেন তখন বর্তমান ডিইএব কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি প্রকৌশলী ইবনে ফজল সাইফুজ্জামান সন্টু জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে সরাসরি ভোটে ভিপি নির্বাচিত হন। কাজী শাখাওয়াত হোসেন আইডিইবি’র সদস্যসচিব হয়ে আইডিইবিতে ব্যাপক লুটপাট ও অনিয়মের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন। যা বাংলাদেশের সকল ডিপ্লোমা প্রকৌশলীরা অবগত। উক্ত বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয় এবং তাকে আইডিবিতে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয় এবং তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে একাধিক মামলা প্রক্রিয়াধীন। আরও বলা হয়, সংগঠনটিকে একটি লিমিটেড কোম্পানির মতো ব্যবহার করার উদ্দেশ্যে ২০২৪ সালের ২৮ আগস্ট ৩০০ টাকার নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে কাজী সাখাওয়াত হোসেন এবং মোহাম্মদ হানিফ চুক্তিবদ্ধ হন। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী ত্যাগী নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় মিথ্যা প্রোপাগান্ডা চালানো হয়। সংগঠনকে একাধিক গ্রুপে বিভক্ত করে একে অপরের পিছে লাগিয়ে দেওয়াই তাদের মূল কাজ। ইতিপূর্বে কাজী সাখাওয়াত হোসেন বিভিন্ন জেলা কমিটি গঠনে বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েন। প্রকৌশলী মোহাম্মদ হানিফ বিগত আট বছর এই সংগঠন থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলেন। তিনি ২০২৩ সাল থেকে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামী অংশগ্রহণ করলেও ডিইএব এর ব্যানারে কখনো অংশগ্রহণ করেন নাই। এমনকি ডিইএব এর পরিচয় দিতেন না। শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের কথিত শ্বশুর আজিজ খানের মালিকানাধীন সামিট টেলিকমের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা আবেদুর রহমানকে ৫ আগস্টের পর কাজী সাখাওয়াত হোসেনে তার রাজনৈতিক উপদেষ্টা হিসাবে নিয়োগ দেন এবং আজিজ খান একটি গাড়িসহ সকল সুযোগ-সুবিধা দেন। সেই কর্মকর্তাকে নিয়ে কাজী শাখাওয়াত হোসেন ডিইএব’র বিভিন্ন জেলা কমিটিসহ কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। মো. হানিফ ও কাজী সাখাওয়াত হোসেনের নেতৃত্বে তথাকথিত কমিটি অনুমোদন হলে সারা জাতীয়তাবাদী আদর্শের ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ এবং বিদ্রোহ হবে। আপনি (তারেক রহমান) আমাদের অভিভাবক আপনার কাছে কমিটি স্থগিতের আবেদন করছি। জানতে চাইলে ডিইএব’র নতুন কমিটির আহ্বায়ক আবু হানিফ বলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন ও ইঞ্জিনিয়ার শাহরিন ইসলাম তুহিন সমন্বয় করে নতুন কমিটি দিয়েছেন। তারাই ভালো জানেন। দুই একজন কমিটিতে পদ পাওয়া প্রসঙ্গে অবগত নন বলে আমিও শুনেছি। তবে যারা আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে সেগুলো সঠিক নয়। আমি সামনের সারিতে থেকে আন্দোলন করেছি।  
Read Entire Article