ঈশ্বরদী ও আটঘরিয়া এ দুই উপজেলা নিয়ে গঠিত পাবনা-৪ আসন। এ আসনে বিএনপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও দলের একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী থাকায় জামায়াতে ইসলামী এ আসনে বিজয়ী হওয়ায় প্রত্যাশা করছে। এরইমধ্যে দলটি এ আসনের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে আটঘাট বেঁধে মাঠে নেমেছে। তারা বিএনপির বিভাজনের সুযোগ কাজে লাগাতে চায়।
এ আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পাওয়ার আশা করছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হাবিব, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য সিরাজুল ইসলাম সরদার, পাবনা জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঈশ্বরদী পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টু।
ঈশ্বরদী-আটঘরিয়ায় বিএনপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ১৯৯৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত চলমান। এ দ্বন্দ্বের কারণে ১৯৯৬ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। এই আসনে বিএনপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এতটাই প্রকট যে, ২০১৮ সালের সেই বিতর্কিত নির্বাচনেও বিএনপি মনোনীত প্রার্থী বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিএনপির আরেকটি পক্ষ জনসভা করে তাকে বয়কট করে এবং তাকে ভোট না দেওয়ার জন্য ঈশ্বরদী-আটঘরিয়াবাসীর কাছে অনুরোধ করে। ফলে ওই নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী বিপুল ভোটে পরাজিত হন।
জামায়াত থেকে দলীয়ভাবে মনোনয়ন পেয়েছেন পাবনা জেলা জামায়াতের আমির ও কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য অধ্যাপক আবু তালেব মন্ডল।
বিএনপিকে সুসংগঠিত রাখতে ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া উপজেলায় নির্বাচনী সভা-সমাবেশ ও কর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হাবিব এবং পাবনা জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঈশ্বরদী পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টু।
মাত্র ১০ মাসে অনেকের আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে। তারাই এখন আমাকে অবমূল্যায়ন করে কথা বলছে। অন্যায়ভাবে কারও গায়ে কালিমা দিলে সেই কালিমা বেশিদিন থাকে না। তাই অযথা দলের মধ্যে কেউ বিভ্রান্ত সৃষ্টি করবেন না। দলের দুর্দিনে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত দলের সব সভা-সমাবেশে যোগ দিয়েছি। জেল-জুলুম, শারীরিক নিযাতন সহ্য করেছি। আমাকে যদি কলঙ্কিত করেন তাহলে বিএনপিকে কলঙ্কিত করা হবে।
বিএনপি মনোনয়নপ্রত্যাশীরা একে অপরের বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ করছেন। সভা-সমাবেশে তারা প্রকাশ্যেই পাল্টাপাল্টি সমালোচনা করছেন। এনিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে দল ও মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ব্যক্তিগত ইমেজ ক্ষুণ্ন হচ্ছে।
- আরও পড়ুন
- প্রার্থী নিয়ে কোন্দল মিটেছে বিএনপির, সুযোগ খুঁজছে জামায়াত
- নিজামীর ছেলে দাঁড়িপাল্লার প্রার্থী, ধানের শীষ চান অনেকেই
ঈশ্বরদী-আটঘরিয়ায় বিএনপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ১৯৯৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত চলমান। এ দ্বন্দ্বের কারণে ১৯৯৬ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। এই আসনে বিএনপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এতটাই প্রকট যে, ২০১৮ সালের সেই বিতর্কিত নির্বাচনেও বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিএনপির আরেকটি পক্ষ জনসভা করে তাকে বয়কট করে এবং তাকে ভোট না দেওয়ার জন্য ঈশ্বরদী-আটঘরিয়াবাসীর কাছে অনুরোধ করে। ফলে ওই নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী বিপুল ভোটে পরাজিত হন।
ঈশ্বরদী পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টু গত ৫ জুলাই আটঘরিয়ায় এক পথসভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিবের সমালোচনা করে বলেন, তিনি আওয়ামী লীগ থেকে বিএনপিতে এসেছেন। আমি স্কুল জীবন থেকে বিএনপির আদর্শ ধারণ করে রাজনীতি করছি। হাবিবের দলের প্রতি দরদ নেই। তিনি চাঁদাবাজি করে দলের বিএনপির ভোট করছেন। ভোট নষ্ট হলে তার তো কষ্ট লাগবে না। কষ্ট লাগবে আমাদের। কারণ আগামীতে নির্বাচনের জন্য জনগণের কাছে আমাদের ভোট চাইতে যেতে হবে। তিনি দুর্নীতিবাজ, অসৎ ও দলের কমিটি বিক্রি করেন। তার এসব অপকর্মের বিরুদ্ধেই আমি সবসময় সোচ্চার। তাছাড়া ৫ আগস্টের পর ঈশ্বরদী-আটঘরিয়ায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হাবিবুর রহমান হাবিব আশ্রয় প্রশ্রয় দিচ্ছেন। এতে প্রকৃত বিএনপির নেতাকর্মীরা হতাশ।
- আরও পড়ুন
- ১৮ বছর পর ফেরা তুহিনের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াত
- লাখের বেশি হিন্দু ভোটারের মন জয়ে তৎপর বিএনপি-জামায়াত
কিছুদিন আগে মহাদেবপুরে ওয়ার্ড বিএনপির এক কর্মী সমাবেশে হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, মাত্র ১০ মাসে অনেকের আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে। তারাই এখন আমাকে অবমূল্যায়ন করে কথা বলছে। অন্যায়ভাবে কারও গায়ে কালিমা দিলে সেই কালিমা বেশিদিন থাকে না। তাই অযথা দলের মধ্যে কেউ বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবেন না। দলের দুর্দিনে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত দলের সব সভা-সমাবেশে যোগ দিয়েছি। জেল-জুলুম, শারীরিক নিযাতন সহ্য করেছি। আমাকে যদি কলঙ্কিত করেন তাহলে বিএনপিকে কলঙ্কিত করা হবে।
এদিকে, বিএনপি নেতাদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব নিরসনের দাবিতে সম্প্রতি প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও পৌরসভার সাবেক মেয়র মোখলেছুর রহমান বাবলু। তিনি বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পাবনা-৪ আসনের বিজয় নিশ্চিত করতে বিএনপির নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। অতি সম্প্রতি অপ্রত্যাশিতভাবে আমাদের অনাকাঙ্ক্ষিত কর্মকাণ্ড বা কিছু নেতার আচরণ ঈশ্বরদীর মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে। আশাকরি দলের নেতাকর্মীরা ধৈর্য ও সহনশীল আচরণের মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে ঐক্য বজায় রাখবেন।
এদিকে, ৪ জুলাই বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএনপি নেতা আব্দুস সালাম পাবনার ভাঙ্গুড়ায় পাবনার ৫টি নির্বাচনী আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। সেখানে তিনি পাবনা-৪ আসনের প্রার্থী হিসেবে হাবিবুর রহমান হাবিবের নাম ঘোষণা করেন। এরপর থেকে হাবিুবর রহমান হাবিব বিরোধীরা নড়েচড়ে বসেন। তারা ঈশ্বরদী-আটঘরিয়ায় একের পর এক সভা-সমাবেশ করে এ আসনের প্রার্থিতার ক্ষেত্রে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যেন যাচাই-বাছাই করে যোগ্য প্রার্থীকে মনোনয়ন দেন এ দাবি জানিয়ে আসছেন।
এ আসনে বিজয়ী হতে দলের একক প্রার্থী হিসেবে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী অধ্যাপক আবু তালেব মন্ডল। প্রায় তিন মাস আগে দলীয় সভায় প্রার্থী হিসেবে তার নাম ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে ঈশ্বরদী-আটঘরিয়ায় শুরু হয় তার গণসংযোগ। হাট-বাজার, পাড়া-মহল্লায় প্রতিদিন জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী ও তার সমর্থকরা গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি এরইমধ্যে নির্বাচনের সেন্টার কমিটি, ওয়ার্ড কমিটি, ইউনিয়ন কমিটি, উপজেলা কমিটি গঠন করে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন।
জামায়াতের প্রার্থী অধ্যাপক আবু তালেব মন্ডল জাগো নিউজকে বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে দলের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদিনই ঈশ্বরদী-আটঘরিয়ার বিভিন্ন্ এলাকায় গণসংযোগ, পথসভা ও সমাবেশ চালিয়ে যাচ্ছি। একবছর আগ থেকেই শহর ও গ্রামের প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টার টাঙ্গিয়ে প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছি। গণসংযোগে সাধারণ মানুষের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। সবাই একই কথা বলছেন, এ আসনে এবার দাঁড়িপাল্লার বিজয় হবে ইনশাআল্লাহ। তাছাড়া আমি নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার আগেই ঈশ্বরদী-আটঘরিয়ার নানান সমস্যা সমাধানে কাজ করে যাচ্ছি। বিশেষ করে ঈশ্বরদী রেলগেটে ফ্লাইওভার নির্মাণের জন্য সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ফ্লাইওভার নির্মাণের লিখিত আবেদন করেছি।
এ আসনের ১৯৯১ থেকে ২০২৪ সাল পযন্ত ৮টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৯৯১ সালে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম সরদার জয়লাভ করেন। ১৯৯৬ থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের নির্বাচনে সিরাজুল ইসলাম সরদার পুনরায় নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের জুন মাসের নির্বাচন থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এ আসনে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা। এরমধ্যে ১৯৯৬ থেকে ২০১৮ সাল পযন্ত টানা পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন প্রয়াত ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ ডিলু। শামসুর রহমান শরীফের মৃত্যুর পর ২০২০ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর উপ-নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ প্রার্থী নুরুজ্জামান বিশ্বাস। ২০২৪ সালের নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন প্রয়াত ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফের ছেলে গালিবুর রহমান শরীফ।
পাবনা জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, পাবনা-৪ আসনে ভোটার ৪ লাখ ৩০ হাজার ১১১। এরমধ্যে ঈশ্বরদী উপজেলায় ভোটার ২ লাখ ৯১ হাজার ২৪০ ও আটঘরিয়া উপজেলায় ভোটার ১ লাখ ৩৮ হাজার ৮৭১।
এদিকে নির্বাচনে এগিয়ে এলেও বিএনপি ও জামায়াত ইসলামী বাদে অন্য কোনো দলের প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে না। বিশেষ করে এনসিপি, জাতীয় পাটি, ইসলামী আন্দোলন ও বামপন্থি কোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থীর প্রচার-প্রচারণা এখন পর্যন্ত চোখে পড়েনি।
এসকেএম/এসএইচএস/এমএফএ/জিকেএস