ইন্টারন্যাশনাল ডে অফ পার্সন উয়িথ ডিজঅ্যাবিলিটিস বা আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস ২০২৪ পালিত হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ)।
মঙ্গলবার (০৩ ডিসেম্ববর) শারীরিক পুনর্বাসন চিকিৎসার গুরুত্ব তুলে ধরতে দিবসটি উদযাপিত হয়।
বিএসএমএমইউর ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগ এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এই বছরের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে ‘একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং টেকসই ভবিষ্যতের জন্য প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নেতৃত্ব বৃদ্ধি করা’। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহত রোগীদের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা সেলের সভাপতি প্রফেসর ডা. এমএ শাকুরের নেতৃত্বে সকাল সাড়ে ৮টায় র্যালির মাধ্যমে দিবসের সূচনা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফিজিক্যাল মেডিসিন ও রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগের প্রাক্তন প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ মাইনুজ্জামান। পরে অনুষ্ঠিত বৈজ্ঞানিক সেমিনারে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহত রোগীদের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা সেলের সভাপতি প্রফেসর ডা. এমএ শাকুর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কার্যক্রম বেগবান করতে সুপার স্পেশালাইজড রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার ফর দি জুলাই ২৪ ওয়ারিয়র (Super Specialized Rehabilitation Center For The July 24 Warrior) গঠনের প্রস্তাব করেন।
সকাল ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর কামরুল ইসলাম সেমিনার হলে বৈজ্ঞানিক সেশন অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে শারীরিক পুনর্বাসন বিভিন্ন বিষয় এবং এর ভবিষ্যৎ নিয়ে দেশের শীর্ষস্থানীয় চিকিৎসক এবং বিশেষজ্ঞরা আলোচনা করেন। বৈজ্ঞানিক সেশনের সভাপতিত্ব করেন বিএসএমএমইউর ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগের চেয়ারম্যান এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত রোগীদের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা সেলের সভাপতি প্রফেসর ডা. এম এ শাকুর।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সোসাইটি অফ ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশনের সম্পাদক সহকারী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ। সেমিনারে অধ্যাপক ডা. মো. মনিরুজ্জামান খান, অধ্যাপক ড. তসলিম উদ্দিন, ডা. জিয়াউর রহমান চৌধুরী, ডা. বদরুন্নেসা আহমেদ, ডা. মো. গোলাম নবী, ডা. সাব্বির জামান রকি, ডা. ফারজানা খান সোমা প্রমুখসহ উক্ত বিভাগের শিক্ষক, চিকিৎসক, রেসিডেন্ট ছাত্রছাত্রীরা উপস্থিত ছিলেন।
সেমিনারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহত ইয়াসিন আরাফাত শোনালেন ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসাসেবায় পঙ্গুত্বের দুয়ার থেকে সুস্থ হয়ে উঠার গল্প। তিনি আগস্টে ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে কোমরে মারাত্মকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হন। পরবর্তীতে বিএসএমএমইউতে চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন হুইল চেয়ারে করে। হাঁটার কথা তো দূরের কথা কোনোদিন সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারবেন সেটাও কল্পনা করতে পারেননি। তবে বিএসএমএমইউর ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগের চেয়ারম্যান এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত রোগীদের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা সেলের সভাপতি প্রফেসর ডা. এমএ শাকুরের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাসেবা নিয়ে এখন হাঁটতে পারছেন। তিনি শোনালেন সেই বিজয়ের কথা। তিনি তার বক্তব্যে বিএসএমএমইউর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এমএ শাকুরসহ সংশ্লিষ্ট সব চিকিৎসক, ফিজিওথেরাপিস্টদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে বিভাগীয় চেয়ারম্যান এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন বিষয়ক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. এমএ শাকুর জানান, বিএসএমএমইউর বিভিন্ন বিভাগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত ২৯৬ রোগীর চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে জরুরি বিভাগে ৫৮, কেবিনে ৫৩, সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের বহির্বিভাগে ১৫২ ও অভ্যন্তরীণ বিভাগে ২৪ এবং আইসিউতে ১০ জন রোগী। অধ্যাপক ডা. এমএ শাকুর বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন করা আমাদের পেশাগতসহ সামাজিক, মানবিক, নৈতিক ও পবিত্র দায়িত্ব। তারা আন্দোলনের মাধ্যমে একটি নতুন যুগের, একটি নতুন বাংলাদেশের শুভ সূচনা করেছেন, তাদের চিকিৎসাসেবা দিতে পেরে একজন চিকিৎসক হিসেবে নিজেকে গৌরবান্বিত মনে করছি। তিনি আরও জানান, এই দিবসের মাধ্যমে শারীরিক পুনর্বাসন চিকিৎসার গুরুত্ব তুলে ধরা এবং এর আরও উন্নতির জন্য বিভিন্ন গবেষণা ও ক্লিনিক্যাল অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করা হয়, যা রোগীদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় নতুন দৃষ্টিভঙ্গি যোগ করেছে।