আধুনিক প্রযুক্তির এই যুগে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও আইনের শাসন শক্তিশালীকরণে বিচার প্রক্রিয়ায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) অন্তর্ভুক্তিকরণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
ব্রাজিলের হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি অ্যান্টোনিও হারম্যান বেঞ্জামিনের সঙ্গে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের মতবিনিময় সভায় এমন বিষয় উঠে আসে।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) এক বার্তায় সুপ্রিম কোর্ট জানায়, প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ ব্রাজিলের জাতীয় হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি এন্টেনিও হারম্যান বেঞ্জামিনের আমন্ত্রণে বিচার বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার, পরিবেশ সংক্রান্ত বিচার, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও বিচার প্রশাসনে প্রযুক্তির উদ্ভাবনবিষয়ক এক প্রোগ্রামে অংশ নিতে ১০ সেপ্টেম্বর ব্রাজিল সফরে যান।
আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্রাজিলে অবস্থান করবেন প্রধান বিচারপতি। এ সফরের অংশ হিসেবে প্রধান বিচারপতি গত ১৫ সেপ্টেম্বর দিনব্যাপী বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নেন।
এদিন তিনি ব্রাজিলের রাজধানী ব্রাসিলিয়াতে অবস্থিত ব্রাজিলের জাতীয় হাইকোর্টের পরিদর্শন করেন। ব্রাজিলের সংবিধানের ১০৫ অনুচ্ছেদ অনুসারে দেশের সর্বোচ্চ আপিল আদালত হিসেবে ব্রাজিলের ফেডারেল আইনসমূহ প্রয়োগ করে থাকে জাতীয় হাইকোর্ট। ওই আদালত পরিদর্শনকালে প্রধান বিচারপতি রেফাত আহমেদ ব্রাজিলের জাতীয় হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি অ্যান্টোনিও হারম্যান বেঞ্জামিনের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় মিলিত হন।
বৈঠকে উভয় দেশের বিচার বিভাগের মধ্যে পারস্পরিক জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের সম্ভাবনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বিশেষত, উভয় দেশের বিচার বিভাগের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি, বিচার প্রক্রিয়া সংক্রান্ত প্রযুক্তি বিনিময়, বিচারব্যবস্থায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ ও স্ব স্ব দেশের আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বিচার বিভাগের ভূমিকা জোরদারকরণের বিষয়ে সভায় ফলপ্রসূ আলোচনা হয়।
আলোচনায় বিচারপতিরা একমত পোষণ করেন যে, একবিংশ শতাব্দিতে বিশ্বজুড়ে যখন বাণিজ্য, যোগাযোগ এবং মানুষের চলাচল দেশের সীমানা অতিক্রম করে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিরাজমান, তখন বৈচিত্র্যপূর্ণ নানা আইনি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিভিন্ন জাতির মধ্যে বিচার বিভাগীয় আন্তঃসম্পর্ক অতীতের চেয়ে অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিল ও বাংলাদেশের মধ্যে কার্যকর বিচার বিভাগীয় সহযোগিতা নিশ্চিত করবে যে, ন্যায়বিচার শুধু একটি দেশের ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং একটি সর্বজনীন অধিকার।
আলোচনায় উভয় দেশের মধ্যে বিচারপ্রক্রিয়া সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি বিনিময়ের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে।
আলোচনায় বিচারপতিরা বলেন, আধুনিক বিশ্বে বিচারব্যবস্থার ডিজিটাল রূপান্তর ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় গভীর প্রভাব রাখছে। ফলে, ব্রাজিলের সঙ্গে বিচার বিভাগ সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তিগত দক্ষতা, উদ্ভাবন ও ডিজিটাল অবকাঠামো ভাগাভাগির মাধ্যমে বাংলাদেশের আদালত ব্যবস্থাপনার ডিজিটালাইজেশনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি আনয়ন সম্ভব।
এ বিষয়ে ব্রাজিলের বিচার বিভাগ বাংলাদেশকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা দেবে বলে অ্যান্টোনিও হারম্যান বেঞ্জামিন প্রধান বিচারপতিকে আশ্বস্ত করেন।
বাংলাদেশের বিচার বিভাগে ই-ফাইলিং, ডিজিটাল কেস ম্যানেজমেন্ট, ভিডিও কনফারেন্সিং এবং অনলাইন বিরোধ নিষ্পত্তির মতো প্রযুক্তিনির্ভর বিষয়সমূহ প্রবর্তনে ব্রাজিলের অভিজ্ঞতা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে আলোচনায় আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়। এক্ষেত্রে ব্রাজিলের পরীক্ষিত অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের বিচার বিভাগের ডিজিটাইশনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে মর্মে প্রধান বিচারপতি মতপ্রকাশ করেন।
দুই বিচারপতি তাদের আলোচনায় উল্লেখ করেন যে, আধুনিক প্রযুক্তির এই যুগে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও আইনের শাসন শক্তিশালীকরণে বিচার প্রক্রিয়ায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) অন্তর্ভুক্তিকরণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
বিশেষ করে এআইয়ের সফল প্রয়োগের মাধ্যমে বিচারব্যবস্থাকে আরও কার্যকর, স্বচ্ছ এবং ন্যায়সঙ্গত করা সম্ভব বিধায় তারা নিজ নিজ অধিক্ষেত্রে এইআই চালিত কেস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম চালুকরণের মাধ্যমে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তিসহ এআইয়ের সহায়তায় আইনজীবী ও বিচারকদের জন্য দ্রুত, নির্ভুল ও প্রাসঙ্গিক নজির অনুসন্ধান টুলস, আইন ও রায় বিশ্লেষণ ইত্যাদি বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি সম্পর্কে আলোচনা করেন।
আলোচনায় বিচার প্রক্রিয়ায় দায়িত্বশীলতার সঙ্গে এআইয়ের ব্যবহার নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে বিচারব্যবস্থাকে আরও ন্যায়সঙ্গত, দক্ষ এবং সবার জন্য সহজলভ্য করতে উভয় বিচারপতি আইনের শাসন শক্তিশালীকরণে বিচার প্রক্রিয়ায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অন্তর্ভুক্তিকরণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
সুপ্রিম কোর্ট আরও জানায়, ব্রাজিলের বিচারব্যবস্থায় নাগরিকের অধিকার সুরক্ষায় বিচারপ্রক্রিয়া সংক্রান্ত অভিযোগ নিষ্পত্তিকরণে বা এ সংক্রান্ত সুপারিশ বাস্তবায়নে যে ধরনের বিচারিক ন্যায়পালরা রয়েছেন, সেই আদলে বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থায় গণকেন্দ্রিক কোনো ‘অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থাপনা’ চালু করা যায় কি না, সে বিষয়ে আলোচনা করেন দুই বিচারপতি।
এফএইচ/এমকেআর/এএসএম