বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে

4 hours ago 2

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছেন, জনগণকে আশ্বস্ত করতে হবে বাংলাদেশের বিচার বিভাগ তার স্বাধীনতা, শৃঙ্খলা ও উদ্দেশ্য পুনরুদ্ধারের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে।

রোববার (৩১ আগস্ট) সন্ধ্যায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির উদ্যোগে শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তন আয়োজিত ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান: বিচার বিভাগের সংস্কার’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, সরকারের কাছে পাঠানো সংস্কার প্রস্তাব, বিচার বিভাগীয় নিয়োগ পরিষদ গঠন, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পুনর্বহাল, সবকিছুই প্রমাণ করে যে, আমরা কথায় নয়, কাজে সংস্কার বেছে নিয়েছি।

প্রধান বিচরপতি বলেন, আমাদের পরিপূর্ণ স্বায়ত্তশাসিত প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে নিয়োগ স্বচ্ছ রাখতে হবে। প্রতিটি আদালতকে স্বচ্ছ এবং নিয়ম শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে হবে।

আমি জনগণকে আশ্বস্ত করতে চাই, বাংলাদেশের বিচার বিভাগ চেষ্টা করছে তাদের পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা, নিয়ম শৃঙ্খলা এবং তার উদ্দেশ্য পুনরুদ্ধার করতে। আমরা সাহস ও স্বচ্ছতার সঙ্গে জনগণকে সেবা দেওয়ার অঙ্গীকার করছি।

সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি বলেন, ২০২৪ সালের জুলাইয়ের অভ্যুত্থান আমাদের সামনে একটি আয়না স্থাপন করেছে। সেই স্বাধীনতার সঙ্গে আমরা ন্যায্যতা, সাহস ও জনগণের প্রাপ্য সততা নিয়ে সেবা করার অঙ্গীকার রক্ষা করে চলছি।

তিনি আরও বলেন, জনগণকে আশ্বস্ত করতে হবে যে বাংলাদেশের বিচার বিভাগ তার স্বাধীনতা, শৃঙ্খলা ও উদ্দেশ্য পুনরুদ্ধারের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে।

তিনি বলেন, গত বছর ২১ সেপ্টেম্বর আমি বিচার বিভাগের সংস্কার রোডম্যাপ ঘোষণা করেছিলাম। সেই ঘোষণা ছিল আত্মসমালোচনার অঙ্গীকার, যা বিচারব্যবস্থা নিজেকেই ভেতর থেকে সংস্কার করবে। এরপর থেকে আমি দৃঢ়ভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছি আমাদের স্বায়ত্তশাসনকে শক্তিশালী করতে, সেবাকে গতিশীল করতে। বিচার বিভাগের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার চেষ্টাও অব্যাহত রয়েছে।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বারের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহফুজুর রহমান মিলন। এতে সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতি ও আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন। সেমিনারে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, আমাকে বিভিন্ন সময় সাংবাদিকরা শেখ হাসিনার বিচারের বিষয়ে প্রশ্ন করেছেন। আমি তাদের বলেছি, শেখ হাসিনা এখানে গৌণ। আমরা বিচার করছি অপরাধের। আমরা ব্যক্তির বিচারের থেকে অপরাধের বিচারের ওপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি।

তিনি বলেন, আমরা জুলাই বিপ্লবকে যদি হালকাভাবে দেখি, দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব আবার মুখ থুবড়ে পড়বে, আমার মানচিত্র খাবলে খাবে। আমর যদি জুলাই বিপ্লবের শহীদদের যথাযত সম্মান দেখাতে না পারি তাহলে এই বাংলাদেশ বিপন্ন হবে। আরও অজস্র মায়ের বুক খালি হবে, আরও রক্ত ঝরবে। হয়তো রক্ত ঝরতে ঝরতে এক সময় আমরা আবার ঘুরে দাঁড়াবো। কিন্তু আমরা সেই পথ আর চাই না। আর চাই না বলেই আমরা কোনো ব্যর্থতার দায়ভার নিতে চাই না।

সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, জুলাইয়ের এক বছর হলো কিন্তু কী পরিবর্তন হলো? এই প্রশ্ন শুধু আমার নয়, এই প্রশ্ন সারা দেশবাসীর। কোনো পরিবর্তন নেই। আমরা হতাশ। যে যখন ক্ষমতায় আসে তখন বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে ক্ষমতায় থাকার জন্য।

তিনি বলেন, দলমত নির্বিশেষে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষায় সবাইকে মাঠে নামতে অনুরোধ করছি। যদি বিচার বিভাগ স্বাধীন করতে না পারি, পৃথক সচিবালয় না করতে পারি তাহলে বারবার আমরা ব্যর্থ হবো। বারবার বিভিন্ন সরকার এসে বিচার বিভাগকে ব্যবহার করবে। স্বাধীন বিচার বিভাগ না থাকলে গণতন্ত্র শক্তিশালী হবে না, মানুষ গুম হবে, মানবতা হুমকির মুখে পড়বে, ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হবে।

সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকনের সভাপতিত্বে এবং সম্পাদক মো. মাহফুজুর রহমান মিলনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, গণফোরামের কার্যকরি সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, বিএনপির আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতির সংবিধান সংরক্ষণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দ মামুন মাহবুব প্রমুখ।

এফএইচ/এসএনআর/এমএস

Read Entire Article