বিজেপির আধিপত্য, ভারতে নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিয়ে বিতর্ক

3 weeks ago 5

ভারতের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সুষ্ঠুতা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে। ব্যাঙ্গালুরুর উপশহর মহাদেবপুরায় বাড়ির নম্বর শূন্য, একটি পরিবারে ৮০ জন ভোটার কিংবা ‘ডিএফওজেজিএআইডিএফ’ নামে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিকে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির মতো উদাহরণ তুলে ধরে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী অভিযোগ করেছেন- এসবই ছিল বিজেপির ‘ভোট চুরি’র একটি পরিকল্পিত অংশ। তার দাবি, এ ধরনের হাজারো অনিয়মের মাধ্যমে বিজেপি গত জাতীয় নির্বাচন জিতেছে।

রাহুলের এই উপস্থাপনা ভারতের নির্বাচন কমিশনকে (ইসিআই) অস্বস্তিতে ফেলেছে। আগে থেকেই চাপের মুখে থাকা কমিশন ২৪ জুন ঘোষণা করে বিহারে বিশেষ ভোটার তালিকা সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। নভেম্বরের মধ্যে সেখানে নির্বাচন হওয়ার কথা। তবে ১৩ কোটি মানুষের এই রাজ্যে আকস্মিকভাবে শুরু হওয়া এই প্রক্রিয়া নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা উঠেছে।

২০০৩ সালের পর এত বড় পরিসরে সংশোধন আর হয়নি। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই শেষ করতে হবে এই কাজ। এর মধ্যেই ভোটার তালিকা থেকে ৬৫ লাখ নাম মুছে ফেলার ঘটনায় (মোট ভোটারের প্রায় ৮ দশমিক ৩ শতাংশ) প্রশ্ন উঠেছে।

ইসিআই বলছে, মুছে ফেলা নামগুলো মৃত ব্যক্তি, ডুপ্লিকেট বা অন্যত্র চলে যাওয়া ভোটারের। কমিশনের প্রধান জ্ঞানেশ কুমার রোববার (১৭ আগস্ট) রাহুল গান্ধীকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেছেন, আদালতে শপথপত্র দিয়ে অভিযোগ প্রমাণ করতে হবে, নইলে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। তৃতীয় কোনো বিকল্প নেই।

ভারতের নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিয়ে ক্রমবর্ধমান সংশয় এখন আন্তর্জাতিক গবেষণাতেও প্রতিফলিত হচ্ছে। সুইডেনের ভি-ডেম ইনস্টিটিউটের সূচকে একসময় দক্ষিণ এশিয়ার তুলনায় ভারতের নির্বাচন প্রক্রিয়া অনেক এগিয়ে থাকলেও গত এক দশকে তা ক্রমেই নিচে নামছে। ভোটার অনিয়ম ও রাজনৈতিক দলের স্বাধীনতা কমে আসাকে এর মূল কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

সমালোচকরা বলছেন, ২০১৪ সাল থেকে বিজেপির একক আধিপত্যের কারণে ভারসাম্য রক্ষার যে ভূমিকা ইসিআই পালন করত, তা আর কার্যকর হচ্ছে না। কমিশনের প্রধান নিয়োগের প্রক্রিয়াও পক্ষপাতদুষ্ট। প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলের নেতা ও আরেক মন্ত্রীর সমন্বয়ে গঠিত প্যানেল থেকেই নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ হয়, ফলে নির্বাহী ক্ষমতার প্রভাব প্রবল হয়ে পড়ে। সুপ্রিম কোর্টের প্রস্তাব ছিল-তৃতীয় সদস্য হিসেবে ভারতের প্রধান বিচারপতিকে অন্তর্ভুক্ত করা হোক। কিন্তু সরকার তা মানেনি।

একইভাবে নির্বাচনী আচরণবিধি প্রয়োগেও পক্ষপাতের অভিযোগ আছে। বিজেপি নেতাদের, এমনকি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উসকানিমূলক ভাষণ আচরণবিধি লঙ্ঘণ হলেও, নির্বাচন কমিশন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ বিরোধীদের। মার্কিন গবেষক মিলান বৈষ্ণব সাম্প্রতিক এক গবেষণায় লিখেছেন- ভারতের নির্বাচন এখনো মুক্ত হলেও সবসময় সুষ্ঠু নয়।

এদিকে, বিরোধী শিবির বিষয়টি কেন্দ্র করে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। রাহুল গান্ধী ১৭ আগস্ট বিহারে ‘ভোটার অধিকারের যাত্রা’ শুরু করেছেন। বিরোধীরা এমনকি, নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারকে অপসারণের কথাও তুলছে। তবে এ জন্য সংসদে আইন পাশ করতে হবে, যেখানে বিজেপি ও মিত্রদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে।

বিজেপি অবশ্য সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। উলটো এক সপ্তাহ পর দলের সাংসদ অনুরাগ ঠাকুর কংগ্রেসকেই ‘ভোট চুরি’র অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন। তার দাবি, কংগ্রেসেরও বিপুল সংখ্যক ‘সন্দেহজনক ভোটার’ রয়েছে।

সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট

এসএএইচ

Read Entire Article