ভারতের তামিলনাড়ুর অভিনেতা থেকে রাজনীতিবিদ হয়ে ওঠা থালাপতি বিজয়ের সমাবেশে পদদলিত হয়ে মৃত্যু ঘিরে শুরু হয়েছে আলোচনা-বিতর্ক। জনসভায় পদদলিত হয়ে নারী-শিশুসহ ৩৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। সংবাদমাধ্যমের দাবি, তামিলনারুর কারুরের ওই জনসভায় মাত্রাতিরিক্ত ভিড়ের কারণে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় তামিলনাড়ুর কারুর জেলায় পদদলিত হয়ে মৃত্যুর এই ঘটনা ঘটে। এই সভায় প্রায় ১ লক্ষ মানুষ হাজির ছিলেন বলে মনে করা হচ্ছে।
ভারতীয় দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ভোটমুখী তামিলভূমে জোর প্রচারে নেমেছেন অভিনেতা তথা রাজনীতিবিদ বিজয়। শনিবার কারুরে একটি র্যালি ও জনসভার আয়োজন করেছিল তামিলাগা ভেট্ট্রি কাজগম (টিভিকে)। সেই জনসভার মূল বক্তা ছিলেন বিজয়। জানা গিয়েছে, ওই সভায় ডিএমকে-র প্রাক্তন মন্ত্রী সেন্থিল বালাজীকে নিয়ে একাধিক বাক্যবাণ ছুড়ছিলেন তিনি। আচমকাই সেই সময় উপস্থিত দর্শকদের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। মাঝপথেই বক্তৃতা থামিয়ে দেন বিজয়। বিভিন্ন প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, অভিনেতাকে ছুঁয়ে দেখার জন্য হুড়োহুড়ি পড়ে যায় উপস্থিত জনতার মধ্যে।
প্রাথমিক অনুমান, জনসভায় অনেক বেশি ভিড় হয়েছিল। উদ্যোক্তারা আশা করেননি এত লোকের জমায়েত হবে। বিজয় বক্তৃতা দিতে উঠতেই ভিড় ক্রমশ বাড়তে থাকে। তার ফলেই জনতার মধ্যে হুড়োহুড়ি শুরু হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে কয়েক জন দলীয় কর্মী অসুস্থ হয়ে পড়েন। কয়েকটি শিশু জ্ঞান হারায়। দ্রুত অসুস্থদের উদ্ধার করে অ্যাম্বুলেন্সে চাপিয়ে হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এদিকে ওই জনসভায় কী কারণে পদপিষ্ট হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হলো? এখন পর্যন্ত যা জানা যাচ্ছে—
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, তামিলনাড়ুর কারুরের এই সভায় দুপুরের মধ্যেই পৌঁছানোর কথা ছিল অভিনেতা-রাজনীতিক বিজয়ের। প্রায় ছয় ঘণ্টা দেরিতে পৌঁছান বিজয়। ততক্ষণে বিপুল জনসমাগম হয় এই সভায়। বিজয় যতক্ষণে সভায় পৌঁছান, ততক্ষণে লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হয়েছিল বলে মনে করা হচ্ছে। অতিরিক্ত ভিড় এবং গরমের কারণে বেশ কয়েকজন অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলেন।
জানা গেছে, একটি বাসের ছাদে উঠে ভাষণ দিচ্ছিলেন বিজয়। কয়েকজন অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার খবর শুনে সেখান থেকে পানির বোতল ছুড়তে শুরু করেন বিজয়। এসময় পানির বোতল নেওয়ার জন্য হুড়োহুড়ি আরম্ভ হয়ে যায়। সভার মাঝেই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। বিজয় ততক্ষণে বক্তৃতা বন্ধ করে দেন।
এদিকে বিজয়ের এই সভার জন্য পুলিশের কাছে যে অনুমতি চাওয়া হয়েছিল, তাতে ১০ হাজার লোকের সমাগম হতে পারে বলে জানানো হয়েছিল পার্টির তরফে। অতিরিক্ত ভিড় হওয়ার কারণেই পুলিশ ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি বলে মনে করা হচ্ছে।
কীভাবে রাজনীতিতে বিজয়?
তামিল সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির ‘সুপারস্টার’ বিজয় চন্দ্রশেখর ৫০টিরও বেশি সিনেমায় কাজ করেছেন। ১৯৮৪ সালে ‘ভেটরি’ নামে একটি সিনেমা শিশুশিল্পী হিসেবে প্রথম কাজ করেন তিনি। ২০০৯ সালে বিজয় তার ফ্যান ক্লাব ‘বিজয় মাক্কাল ইয়াক্কাম’ চালু করেন। এই ফ্যান ক্লাব মূলত এআইএডিএমকে জোটকে সমর্থন করে। ২০২৪ সালে সিনেমা ছেড়ে সরাসরি রাজনীতিতে নামেন বিজয়। এক সময়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের (CAA) বিরোধিতায় সরব হতে দেখা গিয়েছিল বিজয়কে। ২০২৬ সালে তামিলনাড়ুর বিধানসভা নির্বাচনে বেশিরভাগ আসনেই লড়াইয়ের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে সমাবেশ শুরু করেছেন বিজয়।
এর আগে, গত ২০ সেপ্টেম্বর দলের কর্মী-সমর্থকদের জন্য কঠোর নিরাপত্তা ও আচরণবিধি জারি করে টিভিকে। এতে বলা হয়েছিল, বিজয়ের সমর্থকরা যেন তার গাড়ি বা গাড়িবহর অনুসরণ এবং প্রকাশ্যে তাকে বরণের আয়োজন না করেন। পাশাপাশি গর্ভবতী নারী, শিশু, প্রবীণ ব্যক্তি, শারীরিকভাবে অক্ষম এবং অসুস্থদের সমাবেশে না এসে অনলাইনে অনুষ্ঠান দেখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।