বাংলাদেশের লজিস্টিক ও শিপিং খাতে সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইউরোপের প্রতিষ্ঠানগুলো আগ্রহী বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার। মঙ্গলবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘ব্যবসায় বিরোধ নিষ্পত্তি ও চুক্তি প্রয়োগ কার্যক্রমের অগ্রগতি’ শীর্ষক সেমিনারে এ কথা বলেন তিনি।
ইইউ রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার বলেন, আইনি প্রক্রিয়ায় সংস্কারের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ইইউ নিবিড়ভাবে কাজ করেছে, যা এদেশের মানুষের জীবনমানের উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। বাংলাদেশ এলডিসি গ্রাজুয়েশনের দিকে যাচ্ছে এবং রপ্তানি বহুমুখীকরণের জন্য জোরারোপ করছে। তবে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে কমার্শিয়াল কোর্ট স্থাপন করতে হবে, যেটি বিদেশি ও স্থানীয় বিনিয়াগে সম্প্রসারিত করবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির বৃহত্তর স্বার্থে সরকার এ বিষয়টির ওপর অগ্রাধিকার হিসেবে গুরুত্ব দেবে। বাংলাদেশের আরবিট্রেশন কার্যক্রম গতি এলে বর্তমানের বিনিয়োগ স্থবিরতা কমবে। এছাড়া বাংলাদেশের লজিস্টিক ও শিপিং খাতে সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইউরোপের প্রতিষ্ঠানগুলো আগ্রহী।
অনুষ্ঠানে বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, জনবহুল এদেশে আদালতে মামলার সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে এবং বিচারিক কার্যক্রমের দীর্ঘসূত্রতার বিষয়টিকে আরও অসহনীয় করে তোলছে, যার ফলে স্থানীয় বিনিয়োগের পাশাপাশি বৈদেশিক বিনিয়োগ ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম ক্রমাগত ব্যাহত হচ্ছে। ২০০১ সালে আরবিট্রেশন আইন করা হলেও বাণিজ্যের সহায়ক পরিবেশ তৈরি করা যায়নি।
সচিব বলেন, বাণিজ্য বিষয়ক বিরোধসমূহ যদি প্রথাগত আদলতের বাইরে গিয়ে মেটানো যায়, তাহলে একদিকে যেমন আদালতের ওপর চাপ কমবে, সেই সাথে বাণিজ্যের পরিবেশেরও উন্নয়ন হবে। তবে সাধারণ মানুষের কাছে আরবিট্রেশন বিষয়টি এখনো যেমন জনপ্রিয় নয়। এ লক্ষ্যে জনসচেতনা বাড়ানো প্রয়োজন।
তিনি জানান, কমার্শিয়াল কোর্ট স্থাপনে কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে এবং আগামী এক মাসের মধ্যে এটার খসড়া চূড়ান্ত করা হবে। তবে বাণিজ্য বিষয়ক আদালতসমূহে বিশেষজ্ঞ বিচারকদের নিয়োগ দেওয়া এবং প্রয়োজনীয় সংস্কারের ওপর তিনি জোরোরোপ করেন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহিম খান বলেন, বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রতার কারণে শুধু যে এফডিআই আকর্ষণ ব্যাহত তা নয়, বিষয়টি আমাদের রপ্তানি সম্প্রসারণেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। সার্বিকভাবে বৈশ্বিক বাণিজ্যিক কার্যক্রমে বাংলাদেশ ক্রমাগত আস্থা হারাচ্ছে। বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তিতে চলমান আদালতের কার্যক্রমের বাইরে ‘আইনি সংস্থা’ তৈরি করা যেতে পারে। যার মাধ্যমে বিবাদমান প্রতিষ্ঠানের সাথে আলোচনার ভিত্তিতে তুলনামূলক স্বল্প সময়ে বিরোধ নিষ্পত্তি করা সম্ভব হবে।
স্বাগত বক্তব্যে ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, দেশে সামগ্রিক অর্থনৈতিক কার্যক্রম বৃদ্ধির সাথে সাথে ব্যবসায়িক চুক্তি, বিনিয়োগ ও মেধাস্বত্ব বিষয়ক বিরোধ ক্রমাগত বাড়ার বিষয়টি পরিলক্ষিত হচ্ছে। দেশের নিম্ন ও উচ্চ আদালতসমূহে বর্তমানে অমীমাংসিত মামলার সংখ্যা প্রায় ৪০ লাখ। মামলা কার্যক্রম পরিচালনার দীর্ঘসূত্রতা স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগকে ব্যাহত করছে এবং ২০০১ সালে আরবিট্রেশন অ্যাক্ট হলেও তা এখনো ভালোভাবে কার্যকর হয়নি।
এ অবস্থার আলোকে অভিজ্ঞ বিচারকদের নিয়োগের মাধ্যমে তিনি একটি ‘আলাদা কমার্শিয়াল কোর্ট’ স্থাপন এবং আইনি প্রক্রিয়ার সংস্কার একান্ত অপরিহার্য বলে মত প্রকাশ করেন, যার মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগে গতি আনায়ন সম্ভব হবে।
ইএআর/বিএ/এএসএম