বিদেশি শক্তির ইন্ধনে ড. ইউনূসকে সরকারপ্রধান করা প্রস্তাব সত্য নয় বলে জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের বিরুদ্ধে সাক্ষগ্রহণ শেষে রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) নাহিদ ইসলামকে জেরা করেন আসামিদের পক্ষে রাষ্ট্রীয় খরচে নিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। জেরার জবাবে নাহিদ ইসলাম এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামালের পাশাপাশি মামলার আসামি হলেন- পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। এর মধ্যে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে এই মামলায় ‘অ্যাপ্রুভার’ (রাজসাক্ষী) হয়ে জবানবন্দি দিয়েছেন। সাক্ষ্য জবানবন্দি ও জেরার সময় তাকে আগের মতো আজও ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
জেরার জবাবে ট্রাইব্যুনালে নাহিদ ইসলাম জানান, এটা সত্য নয় যে ৩ আগস্ট সরকার পতনের এক দফা কর্মসূচি তাদের দীর্ঘদিনের পরিকল্পনার ফলশ্রুতি। এও সত্য নয় যে তাদের আন্দোলনের পেছনে দেশি-বিদেশি শক্তির হাত ছিল। দেশি-বিদেশি শক্তির ইন্ধন ছিল বিধায় তারা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন, এ কথাও সত্য নয়।
এ সময় প্রসিকিউশনের (রাষ্ট্রপক্ষ) পক্ষ থেকে আপত্তি জানানো হয়। প্রসিকিউশনের পক্ষে প্রসিকিউটর মো. মিজানুল ইসলাম বলেন, সরকার পরিবর্তনকে কোনো চ্যালেঞ্জ করা যাবে না। তখন ট্রাইব্যুনাল বলেন, এর সঙ্গে এটা প্রাসঙ্গিক।
পরে জেরার জবাবে নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট পদত্যাগ করেননি এটা সত্য নয়। শেখ হাসিনা বাধ্য হয়ে ভারতে চলে যাননি এটাও সত্য নয়।
আরও পড়ুন
দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে বিচারের আওতায় আনা উচিত: নাহিদ ইসলাম
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জবানবন্দি দিচ্ছেন আপ বাংলাদেশের জুনায়েদ
এর আগে জবানবন্দিতে নাহিদ ইসলাম বলেছেন, পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে তারা নতুন সরকার গঠনের জন্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন। গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পতনের আগেই তারা তাকে নতুন সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন।
ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম। সঙ্গে ছিলেন- প্রসিকিউটর সহিদুল ইসলাম, আবদুস সাত্তার পালোয়ান, মামুনুর রশীদসহ অন্যরা।
এদিকে আজ সকালেও ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয় মানবতাবিরোধী অপরাধের এ মামলার অন্যতম আসামি থেকে রাজসাক্ষী হয়ে জবানবন্দি দেওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে যান। গত বছরের ৮ আগস্ট ফ্রান্স থেকে দেশে ফেরেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সেদিনই তার নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়।
এদিকে ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও মন্ত্রী পরিষদের অন্যান্য সদস্য এবং প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এবং পুলিশের মহাপরিচালক (আইজিপি) ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার মধ্যে বেশ কয়েকটি মামলায় সাক্ষ্য ও বেশ কিছু মামলায় তদন্ত চলছে।
এফএইচ/এনএইচআর/জিকেএস