বিনা টিকিটে ট্রেনে ভ্রমণ, সমন্বয়ক পরিচয় দেওয়া ৮ শিক্ষার্থীকে জরিমানা

5 days ago 9

সিলেট থেকে ছেড়ে আসা আন্তঃনগর জয়ন্তিকা ট্রেনে বিনা টিকিটে ভ্রমণ করায় জরিমানা গুনেছেন সমন্বয়ক পরিচয় দেওয়া আট শিক্ষার্থী। শনিবার (১৬ নভেম্বর) কুলাউড়া জাংশন স্টেশনের কাছাকাছি এলে এই জরিমানা করেন ট্রেনের দায়িত্বপ্রাপ্ত টিকিট পরীক্ষক টিটিই মোশাররফ আলী।

প্রত্যক্ষদর্শী সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্টে লেখেন, ছাত্র সমন্বয়করা কী নিজেদের সম্মান নষ্ট করার তালে আছে? কুলাউড়ায় ঢাকাগামী জয়ন্তিকা আধা ঘণ্টার ওপরে আটক। ঢাকার উদ্দেশে সিলেট থেকে ছেড়ে আসা জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেনে বিনা টিকেটে উঠে ১৭ জন ছেলে। তারা সবাই ঢাকায় যাবে। ট্রেনের কর্তব্যরত টিটিই তাদের কাছে টিকেট চাইলে তারা নিজেদের ছাত্র সমন্বয়ক বলে পরিচয় দেয়। 

টিটিই সবিনয়ে অনুরোধ করেন, স্ট্যান্ডিং টিকেট নেওয়ার জন্য। চলতি ট্রেনে এ নিয়ে বাদানুবাদ চলতে থাকে। টিটিই নাছোড়বান্দা, টিকেট করতেই হবে আর ছাত্র সমন্বয়ক নামধারীরা টিকেট করবে না বলে অটল থাকে। ট্রেন এসে কুলাউড়া রেলস্টেশনে থামে। আমরা যথারীতি ট্রেনে উঠে নিজের আসনে বসে ট্রেন ছাড়ার অপেক্ষায় থাকি, কিন্তু ট্রেন তো ছাড়ে না। লোকজনের মুখে শুনি ট্রেন ছাত্র সমন্বয়করা আটকে দিয়েছে। 

ট্রেন থেকে নেমে গিয়ে দেখি সামনের বগির সামনে প্ল্যাটফর্মে বিশাল জটলা। বিষয়টি বোঝার জন্য আমরা কজন জটলার মধ্যে যাই। গিয়ে দেখি, রেলওয়ের গার্ড, টিটিই, স্টেশন মাস্টারসহ প্রায় শ’খানেক লোক। রেলওয়ের গার্ড ও টিটিই কঠোর অবস্থানে যায়। তারা বলে ১৭ জনের মধ্যে অন্তত ৮টা টিকেট করতেই হবে বিনা টিকেটের ১৭ জনকে। কিন্তু তাতেও সমন্বয়করা রাজি না। তারা ট্রেন আটক রাখে রেলের কর্তৃপক্ষের সবাইকে দেখে নেবার হুমকি দেয়। পরে ট্রেন কর্তৃপক্ষ রেল পুলিশ কল করে, পুলিশ আসে। 

রেলওয়ে গার্ড সিদ্ধান্ত নেয় আর কোনো ছাড় নয়, ঢাকায় যেতে হলে পুরো ১৭টি স্ট্যান্ডিং টিকেট করতে হবে, না হয় এখান থেকে ট্রেন ছাড়বে না। বিনা টিকেটের যাত্রীদের বিরুদ্ধে রেলওয়ে আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরে অবস্থা বেগতিক দেখে সমন্বয়ক পরিচয়দানকারীরা স্ট্যান্ডিং টিকেট করতে বাধ্য হয়। পরে ট্রেনটি প্রায় ৪০ মিনিট বিলম্ব করে ঢাকার উদ্দেশ্যে কুলাউড়া স্টেশন ত্যাগ করে।

কুলাউড়া রেলওয়ের স্টেশন মাস্টার মো. রোমান আহমদ বলেন, সিলেট থেকে ১৭জন যাত্রী বিনা টিকেটে ট্রেনে ওঠেন। এ সময় কর্তব্যরত টিকেট পরীক্ষক তাদের কাছে টিকেট আছে কিনা জানতে চাইলে বাকবিতণ্ডা হয়। এ সময় তারা নিজেদের কখনও ছাত্র সমন্বয়ক, শিক্ষক, সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে টিকেট না করে ট্রেন ভ্রমণের চেষ্টা করেন। পরবর্তীতে কুলাউড়া স্টেশনে ট্রেন থামলে তাদের জরিমানাসহ টিকেট করে ছেড়ে দেওয়া হয়। এতে ট্রেন কুলাউড়া স্টেশন থেকে ছেড়ে যেতে কিছুটা বিলম্ব হয়। 

জয়ন্তিকা ট্রেনের দায়িত্বপ্রাপ্ত টিকিট পরীক্ষক টিটিই মোশাররফ আলী বলেন, যাত্রীদের টিকেট চেকিংকালে ছাত্র সমন্বয়ক পরিচয় দেওয়া ১৭জন যাত্রী, দুজন শিক্ষকসহ মোট ১৯ জন যাত্রীর কাছে কোনো টিকেট ছিল না। এ সময় একজন যাত্রী নিজেকে বরিশালে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক পরিচয় দেন। ওই শিক্ষকের বাড়ি নরসিংদী জেলায়। তারা নাকি শ্রীমঙ্গলে ঘুরতে এসেছেন। জরিমানাসহ টিকেট করতে বলায় তারা নিজেদের ছাত্র সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে অনেক কষ্ট করে তারা নাকি দেশ স্বাধীন করেছে। তারা কোনো অবস্থায় টিকেট করবে না। 

তিনি আরও বলেন, তখন আমি তাদের বলি, দেশ স্বাধীনের সঙ্গে টিকেট না করার কোনো সম্পর্ক নেই। রাষ্ট্রীয় সম্পদ ট্রেন চড়লে টিকেট অবশ্যই করতে হবে বলায় তারা তর্কে জড়ায় এবং আমাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার চেষ্টা করে। এ সময় ওই ঘটনার প্রমাণ ভিডিও ধারণ করতে চাইলে তারা আমার মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। বিষয়টি আমি রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, স্টেশন মাস্টার, রেলপুলিশকে অবগত করার পর ট্রেনটি কুলাউড়ায় থামে। পরে ওই ১৯জন যাত্রীকে টিকেট করার জন্য বলা হয়। বিবেচনা করে আট যাত্রীকে টিকেটসহ জরিমানা করলে ট্রেনটি ছেড়ে যায়।

Read Entire Article