ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনা-২ (সদর-সোনাডাঙ্গা) আসনে বিএনপির মনোনয়ন ঘিরে দেখা দিয়েছে তীব্র বিরোধ। সম্ভাব্য মনোনয়ন ঘোষণার ১ সপ্তাহ পার হলেও এখনও প্রচার শুরু করতে পারেনি খুলনা সদর আসনের মনোনীত প্রার্থী। ফলে মহানগর বিএনপির দীর্ঘদিনের দুই গ্রুপের দ্বিধাবিভক্তি কাটছে না এখনই।
সাবেক সংসদ সদস্য ও মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলামকে মঞ্জুকে সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণা করা হলেও নগর বিএনপির বর্তমান নেতৃত্ব ও তাদের অনুসারীরা তা মেনে নিতে পারছেন না। মহানগরের বর্তমান নেতৃত্ব ও তৃণমূল পর্যায়ের অনেক নেতা প্রার্থী পরিবর্তনের দাবি তুলেছেন। এমন অবস্থায় প্রার্থী ঘোষণার পরও খুলনা নগর বিএনপির নির্বাচনী মাঠে ঐক্যের বদলে বইছে শীতলতা ও সন্দেহের বাতাস।
খুলনা-২ আসনে (খুলনা সিটি করপোরেশনের ১৬-৩১ নম্বর ওয়ার্ড) মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন নজরুল ইসলাম, খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি শফিকুল আলম মনা ও সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিন। এমনকি মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ধারাবাহিক বৈঠকে ঢাকায় আমন্ত্রণ পান মনা ও তুহিন। তবে সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে নজরুল ইসলাম মঞ্জুর নাম ঘোষণা করা হয়। সেই থেকে উচ্ছ্বাস বিরাজ করছে মঞ্জু শিবিরে। আর এতেই হতাশ মহানগর বিএনপির বর্তমান নেতারা।
জানা গেছে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রার্থীদের বিরোধ মিটিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ শুরু করার নির্দেশ দিলেও খুলনা-২ আসনে তা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। নগর বিএনপির শীর্ষ দুই নেতার সঙ্গে নজরুল ইসলামের এখনো সরাসরি কথা হয়নি। এমনকি প্রাথমিক মনোনয়ন ঘোষণার পরও ৭ নভেম্বর বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে দুই পক্ষই আলাদা কর্মসূচি পালন করেছে।
মহানগর বিএনপির এই বিরোধ মেটাতে জাতীয় নির্বাহী কমিটির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল দুই পক্ষের মধ্যে সমন্বয়ের চেষ্টা করছেন। গত শুক্রবার রাত আটটা থেকে কেডি ঘোষ রোডে দলীয় কার্যালয়ে তিনি বর্তমান নেতৃত্বের সঙ্গে প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা বৈঠক করেন। সেখানে মহানগরের থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতারা অংশ নেন। বৈঠকে নজরুল ইসলামের প্রার্থিতা নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেন মহানগর কমিটির বর্তমান নেতারা।
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা জানান, বকুল কেন্দ্রীয় নির্দেশনা ও নির্বাচনী কৌশল তুলে ধরেন এবং ঐক্যের আহ্বান জানান। এ সময় নেতারা অভিযোগ করেন, নজরুল ইসলাম দীর্ঘদিন দল থেকে দূরে ছিলেন, তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেননি এবং একাধিকবার কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করেছেন। বৈঠকে নেতারা খুলনা-২ আসনে জিয়া পরিবারের কাউকে বা রকিবুল ইসলাম বকুলকেই প্রার্থী করার দাবি জানিয়েছেন।
জাতীয় নির্বাহী কমিটির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম মহানগরীর বর্তমান নেতৃত্ব ও তাদের অনুসারীদের করা অভিযোগ শোনেন। বিষয়গুলো কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে তিনি তুলে ধরবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
খুলনা সদর থানা বিএনপির সভাপতি হুমায়ূন কবির জানান, দীর্ঘ সময়ের ওই বৈঠকে খুলনার সদর ও সোনাডাঙ্গা থানা বিএনপি, ১৬ থেকে ৩১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি এবং সব অঙ্গসংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। প্রত্যেক নেতাই খুলনা-২ আসনের দলীয় মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থী নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন। দলের কেন্দ্রীয় নেতা রকিবুল ইসলাম তৃণমূলের এই মত কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে পৌঁছে দেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
সূত্র বলছে, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে রাজনৈতিক জীবনে ছন্দপতন ঘটে নজরুল ইসলাম মঞ্জুর। ওই বছর ৯ ডিসেম্বর মহানগর বিএনপির তিন সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটি থেকে বাদ পড়েন মঞ্জু ও তার অনুসারীরা। ১২ ডিসেম্বর দলের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। এর প্রেক্ষিতে ১৪ ডিসেম্বর শোকজ করা হয় তাকে। পরে ২৫ ডিসেম্বর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ থেকেও অব্যাহতি দেওয়া হয়।
জানা গেছে, ৯ ডিসেম্বর কমিটি বিলুপ্তির পর থেকে পাল্টাপাল্টি অবস্থান নিয়ে রয়েছেন মহানগর বিএনপির দুপক্ষ। একপক্ষের নেতৃত্বে রয়েছেন শফিকুল আলম মনা ও শফিকুল আলম তুহিন। অন্য পক্ষে রয়েছেন নজরুল ইসলাম মঞ্জুর নেতৃত্বে নগর ও থানা বিএনপির সাবেক নেতাকর্মীরা। গত ৩ বছর ধরে কেন্দ্রীয় ও দিবসভিত্তিক কর্মসূচি পৃথকভাবে পালন করছেন তারা।

2 hours ago
5









English (US) ·