এশিয়া কাপে ব্যর্থতার পর আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে যাচ্ছেতাই পারফরম্যান্স করেছে বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো আফগানদের কাছে হয়েছে হোয়াইটওয়াশ। শেষ ম্যাচে তো মাত্র ৯৩ রানে অলআউট হয়ে ২০০ রানের বড় ব্যবধানে হারে মেহেদী হাসান মিরাজের দল।
সমর্থকদের ধৈর্যের বাধ ভেঙেছে তাতেই। বুধবার দেশে ফিরে বাংলাদেশ দল পড়েছে সমর্থকদের তোপের মুখে। বিমানবন্দরে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের দুয়োধ্বনি দিতে থাকেন ক্ষুব্ধ সমর্থকরা। নাইম শেখ, তাওহিদ হৃদয়দের গাড়ির ওপর হামলেও পড়েছিলেন কয়েকজন।
ক্রিকেটারদের ওপর এমন আক্রমণ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে নানা আলোচনা হচ্ছে। দেশের জন্য খেলতে যাওয়া ক্রিকেটারদের সঙ্গে এমন আচরণ ঠিক হয়নি মনে করেন অনেকে। আবার অনেকে সমর্থকদের এরই ক্ষোভকে স্বাভাবিকই বলছেন।
বিমাবন্দরে হেনস্তা হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্ট দিয়েছেন নাইম শেখ। নাইম শেখ তার পোস্টে যা লিখেছেন জাগো নিউজের পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো-
‘আসসালামু আলাইকুম।
আমরা যারা মাঠে নামি, আমরা শুধু খেলি না-আমরা দেশের নামটা বুকে নিয়ে নামি। লাল-সবুজ পতাকাটা শুধু শরীরে নয়, রক্তে মিশে থাকে। প্রতিটা বল, প্রতিটা রান, প্রতিটা শ্বাসে চেষ্টা করি সেই পতাকাটাকে গর্বিত করতে।
হ্যাঁ, কখনো পারি, কখনো পারি না। জয় আসে, পরাজয়ও আসে-এটাই খেলাধুলার বাস্তবতা। জানি, আমরা যখন হেরে যাই, তখন আপনাদের কষ্ট হয়, রাগ হয়-কারণ আপনারাও এই দেশটাকে আমাদের মতোই ভালোবাসেন।
কিন্তু আজ যেভাবে আমাদের প্রতি ঘৃণা, গাড়ীতে আক্রমণ করা হয়েছে, তা সত্যিই কষ্ট দেয়। আমরা মানুষ, ভুল করি, কিন্তু কখনো দেশের প্রতি ভালোবাসা-চেষ্টার ঘাটতি রাখিনা। প্রতিটা মুহূর্তে চেষ্টা করি দেশের জন্য,মানুষের জন্য, আপনাদের মুখে হাসি ফোটাতে।
ভালোবাসা চাই, ঘৃণা নয়। সমালোচনা হোক যুক্তিতে, রাগে নয়। কারণ আমরা সবাই একই পতাকার সন্তান। জয় হোক, পরাজয় হোক- লালসবুজ যেন আমাদের সবার গর্ব থাকে, ক্ষোভের নয়।
আমরা লড়বো, আবার উঠবো-দেশের জন্য, আপনাদের জন্য, এই পতাকার জন্য।
ইনশাআল্লাহ।’
সহানুভূতি চেয়ে পোস্ট করে ফের তোপের মুখে পড়েছেন নাইম শেখ। তার পোস্টে প্রায় ৯৯ হাজার রিয়েক্ট পড়েছে, তার মধ্যে ৮৪ হাজারের মতো হাসির ব্যঙ্গাত্মক ইমোজি। বেশিরভাগ কমেন্টই ছিল নেতিবাচক।
এদিকে ক্রিকেটারদের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে পোস্ট করে সমর্থকদের তোপের মুখে পড়েছেন দীর্ঘদিন জাতীয় দলের বাইরে থাকা নাসির হোসেনও। নাসির তার পোস্টে লিখেছেন,
‘আমরা ক্রিকেট প্লেয়ার,
তার থেকেও বড় পরিচয় আমরা মানুষ , রক্তে মাংসে গড়া মানুষ কোনো রোবট নই যে অনুভূতি নেই ।
* জিতে গেলে ১৭ কোটি মানুষ আনন্দ পায় উল্লাস করে তাহলে হেরে গেলে কেনো শুধু ১১জন কষ্টের দায়ভার বহন করবে ?
* আমার প্রশ্ন জাতির কাছে কেউ কি ইচ্ছে করে হেরে যায় বা হারতে চায় ?
* আনন্দ যদি ভাগাভাগি করে নেওয়া যায় তবে কষ্টের সময় একটু সহানুভূতি কি দেখানো যেতে পারে না ?
* কটুকথা না শুনিয়ে , আত্মবিশ্বাসে আঘাত না করে ,মনবল বৃদ্ধি করা বা জয়ের পথে এগোতে একটু কি উৎসাহ দেওয়া যায় না ?
* ইনশাআল্লাহ আল্লাহ চাইলে আগামীতে আমরাও ভালো করবো,হার জিত তোহ থাকবেই এতে করে ভেঙ্গে পরা যাবে না, আমরা আরও শক্তিশালি হয়ে মোকাবেলা করে দেখিয়ে দিতে চাই , আর চাই ১৭ কোটি মানুষের ভালোবাসা,দোআ আর সমর্থন।’
নাসিরের সেই পোস্টেও ৪৪ হাজার রিয়েক্টের মধ্যে ৩২ হাজারই হাসির ইমোজি। সেখানেও ক্ষুব্ধ সমর্থকরা ধুয়ে দিয়েছেন ক্রিকেটারদের।
এমএমআর/এএসএম