আয়োডিন অভাবজনিত সমস্যা একটি জনস্বাস্থ্য সমস্যা। এ সমস্যা নিরসণকল্পে এবং জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ২১ অক্টোবর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিশ্ব আয়োডিন দিবস উদযাপিত হয়। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) উদ্যোগে মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) তেজগাঁওয়ে বিসিক ভবনে বিশ্ব আয়োডিন দিবস উদযাপন ও সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ওবায়দুর রহমান। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বিসিক চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. নাজমুল হোসেন। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গেইন বাংলাদেশের লার্জ স্কেল ফুড ফর্টিফিকেশন পোর্টফোলিও লিড ড. আশেক মাহফুজ। সেমিনারে আলোচক হিসেবে আলোচনা করেন বিসিকের পরিচালক (শিল্প উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ) মুহ. খায়রুজ্জামান, লবণ সেল প্রধান সরোয়ার হোসেন, টেকনো সার্ভ বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার মো. গুলজার আহম্মেদ এবং বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতির সভাপতি নুরুল কবির।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা নিউট্রিশন ইন্টারন্যাশনালের (এনআই) ও গেইনের প্রতিনিধিবৃন্দ। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতি, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিবৃন্দ, লবণ মিল মালিক, সাধারণ ভোক্তা, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনে আশেক মাহফুজ বলেন, প্রথম দেশ হিসেবে কানাডা লবণ ফর্টিফিকেশন শুরু করে। আমরা অনেক পরে লবণে আয়োডিন যুক্ত করি। আমাদের দেশে লবণে পটাশিয়াম আয়োডেট দেই। তাই তা টেকসই। খোলা রাখলে বা চুলার পাশে রাখলে নষ্ট হয়ে যায় না।
তিনি আরও বলেন, আয়োডিন শরীরে স্টোর হয় না। প্রতিদিনেরটা প্রতিদিন শেষ হয়ে যায়। তাই প্রতিদিন আয়োডিন প্রয়োজন। প্রধান সমস্যা হিসেবে গলগণ্ড রোগের কথা বলা হলেও আয়োডিন সঠিকভাবে না পেলে বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নতি হবে না।
প্রধান অতিথি মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘আয়োডিন একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান। আয়োডিন মানুষের স্বাভাবিক, মানসিক ও শারীরিক বৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য। দেশে অনুপুষ্টির অভাবজনিত সমস্যাগুলোর মধ্যে আয়োডিন ঘাটতিজনিত সমস্যা অন্যতম। এই সমস্যা মোকাবেলায় আমাদের সকলকে এই বিষয়ে সচেতন হতে হবে, সচেতনতাই পারে আয়োডিন জনিত সকল রোগ নির্মূল করতে।’
সেমিনারের আগে অতিথিরা বিসিক ভবনে লবণ সেলের উদ্বোধন করেন। এ সময় সাংবাদিকসহ উপস্থিত বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা সেলটি ঘুরে দেখেন।
আয়োডিন একটি অত্যাবশ্যকীয় অনুপুষ্টি। আয়োডিন মানুষের স্বাভাবিক, মানসিক ও শারীরিক বৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য। দেশে অনুপুষ্টির অভাবজনিত সমস্যাগুলোর মধ্যে আয়োডিন ঘাটতিজনিত সমস্যা অন্যতম। আয়োডিনের অভাবে গলগণ্ড, বামনত্ব, অকাল গর্ভপাত, শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধিত্বসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। ৯০ দশকের পূর্বে বাংলাদেশে আয়োডিন ঘাটতিজনিত সমস্যাসমূহ প্রকট আকার ধারণ করেছিল। দেশের বেশকিছু স্থানে বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলতে আয়োডিন ঘাটতিজনিত সমস্যা ব্যাপক আকারে দেখা দেয়। সে সময় পথেঘাটে গলগণ্ড রোগী দেখা যেত। এসকল সমস্যা থেকে উত্তোরণের লক্ষ্যে সরকার একটি পদক্ষেপ গ্রহণ করে। পদক্ষেপের অংশ হিসেবেই ৯০ দশক হতে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) আয়োডিন ঘাটতিজনিত সমস্যা নিরসনকল্পে সর্বজনীন আয়োডিনযুক্ত লবণ উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। কার্যক্রমের অংশ হিসেবে লবণ মিলের নিবন্ধন প্রদান, মিলসমূহকে পটাশিয়াম আয়োডেট সরবরাহ ও কারিগরি সহায়তা প্রদান, লবণমিল ও বাজার পর্যায়ে মনিটরিং এবং আয়োডিনযুক্ত লবণ ব্যবহারে সচেতনতামূলক বিভিন্ন কর্মকান্ড পরিচালনা করা হয়। এ কার্যক্রমের ফলে বর্তমানে ৭৬% পরিবার আয়োডিনযুক্ত প্যাকেট লবণ ব্যবহার করছে। ফলশ্রুতিতে বর্তমানে দৃশ্যমান গলগণ্ড এবং বামনত্ব দেশ থেকে সমূলে নির্মূল হয়েছে। জাতীয় পুষ্টি জরিপ ১৯৯৩ অনুযায়ী ৮.৮% মানুষের মাঝে দৃশ্যমান গলগণ্ড এবং ০.৬% মানুষের মাঝে বামনত্ব ছিল। দীর্ঘ তিন দশকের পরিশ্রমের ফলে দেশ দৃশ্যমান গলগণ্ড এবং বামনত্বের অভিশাপ থেকে মুক্ত হয়েছে।
বিসিকের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম জানান, কোনো দেশের ৯০%মানুষ আয়োডিনযুক্ত লবণ ব্যবহার করলে সে দেশ আন্তর্জাতিকভাবে আয়োডিনযুক্ত লবণ ব্যবহারে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে। সে স্বীকৃতি পেতে আমাদের আর বেশি দেরি নেই। আর মাত্র ১৪% মানুষকে আয়োডিনযুক্ত লবণ ব্যবহারের আওতায় নিয়ে আসতে পারলেই আমরাও সে স্বীকৃতি অর্জন করব। সে উদ্দেশ্যেই আমাদের আজকের এই সেমিনার আয়োজন। দেশের মানুষকে আয়োডিনযুক্ত লবণ ব্যবহারের আওতায় নিয়ে আসতে আমাদের সচেতনতা আরও বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। আয়োডিন সম্পর্কে সচেতনতা তৈরিতে বিশ্বব্যাপী ২১ অক্টোবর দিবসটি উদযাপিত হয়। বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে বাংলাদেশেও এবছর আয়োডিন দিবসের গুরুত্বের উপর সেমিনার আয়োজন করা হয়েছে।
বিসিকের লবণ সেলের প্রধান সরোয়ার হোসেন বলেন, শিশুদের সবচেয়ে বেশি আয়োডিনের প্রয়োজন। তাই সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। অপরদিকে লবণ বেশি খাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ, কিডনি রোগসহ নানা সমস্যার পেছনে অতিরিক্ত লবণ দায়ী। এ ব্যাপারে আমাদের সচেতনতা জরুরি।