বিশ্ববাজারে সোনার দামে নতুন ইতিহাস, ৩৭০০ ডলার ছাড়ালো আউন্স

12 hours ago 3

বিশ্ববাজারে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সোনার দাম। হু হু করে বেড়ে বিশ্ববাজারে সোনার দামে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছে। প্রথমবারের মতো প্রতি আউন্স সোনার দাম ৩ হাজার ৭০০ ডলার ছাড়িয়ে গেছে। বিশ্ববাজারে দাম বাড়ায় দেশের বাজারেও যে কোনো সময় সোনার দাম বাড়ানো হতে পারে। এতে দেশের বাজারেও সোনার সর্বোচ্চ দামের নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হতে পারে।

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত জুলাই মাসে থেকেই বিশ্ববাজারে সোনার দাম বাড়ছে। তবে গত এক মাসে দাম বাড়ার পাল্লায় নতুন করে হাওয়া লেগেছে। এক মাসের ব্যবধানে প্রতি আউন্স সোনার দাম বেড়েছে প্রায় ৪০০ ডলার।

বিশ্ববাজারে অস্বাভাবিক দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি দেশের বাজারেও কয়েক দফায় সোনার দাম বাড়ানো হয়েছে। এতে কয়েক দফায় সর্বোচ্চ দামের নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। অবশ্য সর্বোচ্চ দামের রেকর্ড সৃষ্টি হওয়ার পর আবার কিছুটা দামও কমতে দেখা গেছে।

এখন পর্যন্ত দেশের বাজারে ভালো মানের এক ভরি সোনার সর্বোচ্চ দাম নির্ধারিত হয়েছে ১ লাখ ৮৯ হাজার ৬২২ টাকা। গত ১৭ সেপ্টেম্বর এই দাম নির্ধারণ করা হয়। সে সময় বিশ্ববাজারে এক আউন্স সোনার দাম ৩ হাজার ৬৯০ ডলারে উঠে ছিলো। এরপর বিশ্ববাজারে দাম কিছুটা কমায় দেশের বাজারে রেকর্ড দাম নির্ধারণের ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে ১৮ সেপ্টেম্বর কিছুটা দাম কমানো হয়।

অবশ্য পরবর্তীতে বিশ্ববাজারে সোনার দাম বাড়তে থাকায় ২০ সেপ্টেম্বর দেশের বাজারে আবারও সোনার দাম বাড়ানো হয়। ওইদিন সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনায় ১ হাজার ১৫৫ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ৮৯ হাজার ৩০৭ টাকা। ২১ ক্যারেটের এক ভরি সোনায় ১ হাজার ৯৭ টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ৮০ হাজার ৬৯৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

এছাড়া ১৮ ক্যারেটের এক ভরি সোনায় ৯৪৫ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম ১ লাখ ৫৪ হাজার ৮৮৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আর সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনায় ৮০৫ টাকা বাড়িয়ে দাম নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ২৮ হাজার ৪৭৯ টাকা। ২০ সেপ্টেম্বর থেকে নির্ধারণ করা দামেই বর্তমানে দেশের বাজারে সোনা বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে দেশের বাজারে সোনার দাম নির্ধারণের পর বিশ্ববাজারে আবারও সোনার দাম বাড়তে দেখা যাচ্ছে। এ প্রতিবেদন লেখার সময় প্রতি আউন্স সোনার দাম ৩৪ ডলার বেড়ে ৩ হাজার ৭১৮ ডলারে উঠেছে। বিশ্ববাজারে এর আগে কখনো এক আউন্স সোনার দাম ৩ হাজার ৭০০ ডলার হয়নি। একদিনে ৩৪ ডলার দাম বাড়ার ফলে এক মাসের ব্যবধানে বিশ্ববাজারে সোনার দাম বেড়েছে ১০ দশমিক ৩৫ ডলার।

সোনার অস্বাভাবিক দাম বাড়ার বিষয়ে সম্প্রতি বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন ট্যারিফ অ্যান্ড ট্যাক্সেশন’র চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, আমেরিকার শুল্ক নিয়ে ঝামেলা হচ্ছে। তাদের সঙ্গে চীন, রাশিয়া, ভারত এক সঙ্গে বৈঠক করছে। তার একটি প্রভাব পড়ছে ডলারে। মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলি ঝামেলার জন্য মধ্যপ্রাচ্যের লোকরাও ডলারের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলছে, মানে নিরাপদ বোধ করছে না। এ কারণে এখন চীন, ভারতসহ বিভিন্ন দেশ সোনা কিনে রিজার্ভ করছে। আর একটা হলো সরবরাহ কম। খনি থেকে ওইভাবে সোনা তোলা হচ্ছে না। এসব কারণে সোনার দাম বাড়ছে। যেভাবে দাম বাড়ছে তাতে এবার এক আউন্স সোনার দাম ৩ হাজার ৮০০ ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।

তিনি বলেন, সোনার দাম বাড়ার কারণে জুয়েলারি ব্যবসায় মন্দা চলছে। দেশের সোনার বাজারের আকারও ছোট হচ্ছে। আমাদের হিসাবে ২০২৪ সালে দেশে সোনার বাজারের আকার ছিলো ২ লাখ কোটি টাকা। এখন তার থেকে ২০ শতাংশের মতো কমে গেছে।

দাম বাড়ার ফলে ব্যবসায় কী ধরনের প্রভাব পড়ছে জানতে চাইলে আনোয়ার হোসেন বলেন, সোনার অলঙ্কার মানুষের ক্রয়-ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। অনেক আগেই এটা গেছে। শখ করে এখন আর কেউ সোনার অলঙ্কার কেনে না। হয় তো ছেলে-মেয়ে’র বিয়ের ক্ষেত্রে কিছুটা কিনছে। সোনার অলঙ্কার বিক্রি কমে গেছে ৮০ শতাংশের মতো।

তিনি বলেন, বিক্রি না থাকায় ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে হিমশিম খাচ্ছেন। অনেকেই ঠিকমত কর্মীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে পারছে না। তবে ব্যবসা মন্দা গেলেও আমাদের কোনো সদস্য ব্যবসা বন্ধ করেননি। কিন্তু অনেকেই ব্যবসার পরিসর ছোট করে ফেলেছেন। সামনে ব্যবসার পরিসর আরও ছোট হতে পারে।

এমএএস/এমআরএম/এমএস

Read Entire Article