চীনে প্রথমবারের মতো মানুষের শরীরে শূকরের ফুসফুস প্রতিস্থাপন করে আলোচনায় এসেছে দেশটির চিকিৎসাবিজ্ঞান। প্রাণীর অঙ্গ মানবদেহে প্রতিস্থাপনের স্বপ্ন বহু পুরোনো হলেও এবার সেটি নতুন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে।
সোমবার (২৫ আগস্ট) চীনের গুয়াংজু মেডিকেল ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা জানান, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের পর ‘ব্রেইন ডেড’ ঘোষিত ৩৯ বছর বয়সী এক পুরুষের শরীরে পরীক্ষামূলকভাবে জিনগতভাবে পরিবর্তিত শূকরের ফুসফুস প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। পরিবারের সম্মতিতে পরিচালিত এই অস্ত্রোপচারের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন জার্নাল নেচার মেডিসিনে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিস্থাপনের পর প্রথমদিকে অঙ্গটি আংশিকভাবে কাজ করলেও দ্রুত জটিলতা দেখা দেয়। রোগীর শরীরে ফোলাভাব, টিস্যুতে তরল জমা এবং রক্ত প্রবাহে সমস্যার মতো লক্ষণ দেখা যায়। নয় দিন পর পরিবারের অনুরোধে অঙ্গটি সরিয়ে ফেলা হয়।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মানুষের মধ্যে ফুসফুস প্রতিস্থাপন এমনিতেই অত্যন্ত জটিল এবং উচ্চ মৃত্যুহারযুক্ত একটি প্রক্রিয়া। প্রাণীর ফুসফুস প্রতিস্থাপন তাই আরও কঠিন। তবুও এই প্রচেষ্টা ভবিষ্যতে অঙ্গ সংকটে ভোগা রোগীদের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলতে পারে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তারা।
অঙ্গ সংকটের বিষয়টি বিশ্বজুড়ে গুরুতর আকার ধারণ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে শুধু ২০২৩ সালেই ৪৮ হাজার প্রতিস্থাপন হলেও অপেক্ষমাণ তালিকায় ছিলেন আরও এক লাখের বেশি মানুষ। ফলে প্রতিদিন গড়ে ১৩ জন আমেরিকান অঙ্গের অভাবে মারা গেছেন।
গত কয়েক দশক ধরে শূকরের হৃদযন্ত্রের ভালভ সফলভাবে মানুষের শরীরে প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে শূকরের হৃদপিণ্ড ও কিডনি বসানোতেও কিছুটা সাফল্য এসেছে। ম্যাসাচুসেটসে টিম অ্যান্ড্রুজ নামে এক রোগী শূকরের কিডনি প্রতিস্থাপনের পর বর্তমানে সুস্থ জীবনযাপন করছেন। তবে ফুসফুস প্রতিস্থাপন এখনও সবচেয়ে জটিল ধাপ হিসেবে রয়ে গেছে।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, এই প্রক্রিয়া কার্যকর চিকিৎসা হিসেবে ব্যবহৃত হতে এখনও দীর্ঘ সময় বাকি। নর্থওয়েস্টার্ন মেডিসিন ক্যানিং থোরাসিক ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা. অঙ্কিত ভরত বলেন, ফুসফুস প্রতিস্থাপন কিডনি বা হৃদযন্ত্রের চেয়ে অনেক বেশি জটিল। এর বিপাকীয়, অন্তঃক্ষরা ও রোগ প্রতিরোধক্ষমতাসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ কার্যকারিতা রয়েছে। শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় এটি সরাসরি বাইরের জীবাণুর সংস্পর্শেও আসে।
তিনি আরও যোগ করেন, গবেষকরা তাৎক্ষণিক প্রত্যাখ্যান হয়নি দাবি করলেও, প্রকাশিত এক্স-রে ও সিটি স্ক্যানের ছবিতে স্পষ্ট ক্ষতির চিহ্ন রয়েছে। তাই শূকরের ফুসফুস প্রতিস্থাপনের চেয়ে মানুষের নিজস্ব স্টেম সেল ব্যবহার করে নতুন ফুসফুস গড়ে তোলার গবেষণা অনেক বেশি আশাব্যঞ্জক বলে মনে করেন তিনি।
তবুও চীনা গবেষকদের এই উদ্যোগ বিশেষজ্ঞদের মতে ‘একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ’। কারণ এটি প্রমাণ করেছে যে, জিনগতভাবে পরিবর্তিত প্রাণীর অঙ্গ অন্তত সীমিত সময়ের জন্য হলেও মানুষের শরীরে কার্যকর হতে পারে।
সূত্র: ন্যাচার জার্নাল
এসএএইচ