ফুল পছন্দ করেন না এমন মানুষ কমই আছেন। প্রেমিকাকে প্রেমের প্রস্তাব দিতে কিংবা অভিমান ভাঙাতে এক তোড়া ফুলই যথেষ্ট। ফুলের ঘ্রাণ মনকে প্রফুল্ল করে। তবে এমন এক ফুল আছে যার গন্ধ নয় দুর্গন্ধ আপনাকে কাছে ঘেঁষতে দেবে না। ফুলের শরীর থেকে পচা মাংসের গন্ধ বের হয়। কোনো কীটপতঙ্গ পর্যন্ত কাছে যায় না।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় ফুল র্যাফ্লেসিয়া আর্নল্ডি বা ‘মৃতদেহের ফুল’। দক্ষিণ এশিয়ার বেশ কিছু অঞ্চল, যেমন ফিলিপাইন, জাভা, ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়ার রেইনফরেস্টে পাওয়া যায় এই ফুল। পৃথিবীতে প্রায় ৩০ প্রজাতির র্যাফ্লেসিয়া পাওয়া যায়। যার মধ্যে র্যাফ্লেসিয়া আর্নেল্ডি অন্যতম।
র্যাফ্লেসিয়া আর্নেল্ডিকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ফুল বলা হয়। ফুলটি চওড়ায় ৩ ফুট এবং ওজনে প্রায় ১১ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। মানে ছোটখাটো এক টেবিলই বলা চলে। এই ফুলে থাকে পাঁচটি বিশাল পাপড়ি। যার রং লালচে বা বেগুনি-বাদামি হতে পারে। রঙের মধ্যে গাঢ় লাল এবং সাদা দাগ থাকে। দেখতেও এক দানব আকৃতির ফুলটি।
এই অদ্ভুত বিশালাকায় ফুলটি মাংসল। হঠাৎ দেখলে মনে হবে, কোনো ভিনগ্রহের প্রাণী বসে আছে জঙ্গলে। র্যাফ্লেসিয়া ফুলে স্ত্রী ও পুরুষ ফুল আলাদা থাকে। প্রতিটি র্যাফ্লেসিয়া উদ্ভিদে একটি ফুল হয়। পাপড়ি সহ ফুলটি বেরিয়ে আসে। ফুলের কেন্দ্রে একধরনের আঠালো পরাগ থাকে। এই পরাগ আকৃষ্ট হয়ে আসা মাছি ও পোকাদের শরীরে লেগে যায়। পোকাগুলো যখন পুরুষ ফুল থেকে পরাগ নিয়ে এসে স্ত্রী ফুলে পৌঁছায়, তখন সেখানে পরাগায়ন ঘটে।
পরাগায়ন সফল হলে ফুলের ভেতরে ফল ও বীজ তৈরি হয়। এই ফল মাটিতে পড়ে এবং এ থেকে বীজ তৈরি হয়ে পরের প্রজন্মের র্যাফ্লেসিয়া উদ্ভিদ (আসলে পরগাছার) জন্ম হয়।
বছরের পর বছর অপেক্ষা করার পর র্যাফ্লেসিয়ার ছোট্ট কুঁড়ি আসে। যা ফোটাতে লেগে যায় ৯ থেকে ১২ মাস। আর যখন এই ফুল ফোটে, তখন মাত্র পাঁচ-সাত দিন টিকে থাকে। এর পরপরই পচে যায়। ফুল থেকে উৎপন্ন বীজগুলো ছড়িয়ে যায়।
র্যাফ্লেসিয়ার বিশেষ এক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। বিশেষ এই ফুলের কোনও লতাপাতা বা শিকড়, কিচ্ছু নেই। অর্থাৎ এটি কেবলই একটি পরগাছা ফুল, কোনও উদ্ভিদ নয়। কাজেই এর বেঁচে থাকার জন্য শুধু রেইনফরেস্টে জন্ম হয়।
মাংসল এই অদ্ভুত ফুলের পচা গন্ধ পোকামাকড়, বিশেষ করে মাংসখেকো মাছি, গুবরে পোকা ও কেঁচোর মতো পোকাগুলোকে আকর্ষণ করে। র্যাফ্লেসিয়া আর্নেল্ডি কিন্তু কেবল পচা গন্ধ নয়, তাপও উৎপন্ন করে। ফলে ফুলটি একটি পচা শবদেহ বা শরীরের মতো অনুভূতি তৈরি করে। ফলে পোকামাকড় আরও আকৃষ্ট হয়। এখান থেকেই এসেছে ‘মৃতদেহের ফুল’ নাম।
বর্তমানে র্যাফ্লেসিয়ার বাসযোগ্য পরিবেশের অভাবে ও পর্যটকদের আনাগোনা বেড়ে যাওয়ায় ধীরে ধীরে ফুলটি বিলুপ্তির দিকে এগোচ্ছে। এই বিরল ফুলকে রক্ষা করতে হলে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে।
সূত্র: ব্রিটানিকা
কেএসকে/জেআইএম