বিষণ্ন সন্ধ্যা কিংবা বিভ্রম: জীবনের কথা বলে

2 months ago 6

উম্মে হাবিবা কনা

কবি, কথাশিল্পী ও সাংবাদিক সালাহ উদ্দিন মাহমুদের পঞ্চম গল্পের বই ‘বিষণ্ণ সন্ধ্যা কিংবা বিভ্রম’। ২০২৫ সালের বইমেলায় প্রকাশিত বইটিতে মোট ১৩টি গল্প স্থান পেয়েছে। তার গল্প বরাবরই জীবনের কথা বলে। নানাবিধ সংকট উঠে আসে তাতে। তার গল্পে ভালোবাসা, হিংসা, মানবিকতা, জীবনযুদ্ধ, রহস্য, নিম্নবিত্ত, স্বপ্ন, সম্ভাবনা, প্রবৃত্তি, সংকট, হতাশা এবং জীবন স্মৃতি মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। ফলে তার গল্পগুলো পাঠকের হৃদয়কে স্পর্শ করতে পেরেছে।

‘বিষণ্ণ সন্ধ্যা কিংবা বিভ্রম’ বইয়ের প্রথম গল্প। মানুষের জীবন প্রিয়জনের অযত্ন-অবহেলায় ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়, নিঃশ্বাস নিতেও অস্বস্তি হয়। বিষণ্ণতা-বিভ্রমে বোধ বিবেচনা হ্রাস পেয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে চাওয়া হতাশাগ্রস্ত যুবককে নিয়ে লেখা হয়েছে গল্পটি। ‘হালিমে আঙুলের হদিস’ গল্পে একজন দরিদ্র স্বামী তার স্ত্রীর ধর্ষণের শাস্তি দেয় নিজহাতে। স্ত্রীকে স্বাভাবিক করার চেষ্টায় অবিচল থাকে শেষ পর্যন্ত। অশিক্ষিত, গরিব হলেও যে স্ত্রীকে ভালোবাসা, সম্মান দেখানোর মানসিকতা পাহাড়সম হতে পারে, এ গল্পে তা-ই শেখার আছে।

‘জলের ভেতর অনল’ মূলত একটি গরিব পরিবারকে ঘিরে। বাবা তার মেয়েকে নিয়ে বিষণ্ণ থাকেন। এদিকে অসুস্থ স্ত্রীর চিকিৎসার খরচ জোগাতে হবে। তবে সব জোগালেও তাদের শেষ রক্ষাই আর হয় না। লঞ্চের অগ্নিকাণ্ডে তাদের সব স্বপ্ন শেষ হয়ে যায়। ‘রবিতনের অন্তিম সংযম’ গল্পটিতে মা তার করা ভুলে ছেলের ও নিজের ভবিষ্যৎ নষ্ট করে ফেলেছেন। পুরুষ মানুষের প্ররোচনায় আর লোভ দুয়ে মিলে জীবন নরক হয়ে যায়।

মানুষ গরিব হলে, সেই সাথে কপাল খারাপ হলে সৎ থেকেও লাভ হয় না। একটার পর একটা বিপদ যেন ছায়ার মতো পিঁছু ছাড়ে না। ‘নুন আনতে জীবন ফুরায়’ গল্পটিতে এমনই এক চিত্র উপস্থাপন করা হয়েছে। ‘একটি মসজিদের ইতিবৃত্ত’ গল্পটিতে গ্রামের মুসল্লিদের ধর্মের প্রতি ভালোবাসা, বিশ্বাস, পবিত্রতা ও সেই সাথে একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করার মানসিকতার সুন্দর ছবি ফুটিয়ে তুলেছেন লেখক।

একজন লেখক কতটা ত্যাগী হন, কতটা ডেডিকেশন থাকে তাদের লেখায়। স্বপ্ন দেখেন, তাদের লেখা একদিন স্বীকৃতি পাবে। ‘কাঁচ ভাঙা স্বপ্ন’ গল্পের মাধ্যমে পাঠকসমাজে সেটাই তুলে ধরেছেন লেখক। ‘আঁচলে বাঁধা চিরকুট’ গল্পে ধনী-গরিবের ভালোবাসা ও পরিবার-সমাজ তাদের না মেনে নিয়ে যন্ত্রণায় আচ্ছন্ন করে ফেলার বিষয়টি তুলে ধরেছেন লেখক। যেখানে প্রেমিক হেরে যায় বাস্তবতার কাছে। প্রেমিকার শেষ পরিণতি হয় আত্মহত্যা।

‘আদিম লালসার খদ্দের’ গল্পে যুবক তার প্রেমিকার কাছে প্রতারিত হয়ে খারাপ পথে পা বাড়ায়। অপরদিকে তেমনই কোনো যুবকের প্রতারণার শিকার হয়ে খারাপ পথের বাসিন্দা হন এক সুন্দরী তরুণী। ‘কলেরাকালের দিনলিপি’ গল্পে কলেরায় আক্রান্ত সন্তানের শিয়রে জেগে সেবা শুশ্রূষায় রাত্রিযাপন করেন মা। নাড়িছেঁড়া ধনকে হারানোর ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত হন। গ্রামে এখনো যে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থার বেহাল দশা, সেটি তুলে ধরেছেন লেখক। ‘অন্ধকারের শেষ সীমান্তে’ গল্পে প্রভাবশালীর নষ্ট সন্তানের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয় হতদরিদ্র পরিবারের মেয়ে। বাবা-মায়ের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বনের এমন অবস্থায় আহাজারি আর স্রষ্টার কাছে বিচার দেওয়া ছাড়া কিছুই করার থাকে না তাদের।

অভাবের সংসারেও বাবা-মা চেষ্টা করেন যতটা সম্ভব সন্তানদের আবদার মেটাতে। ‘মায়ের হাতের মলিদা’ গল্পে লেখক সেসব অতীত স্মৃতি ভেবে ব্যথিত হৃদয়ের কান্না তুলে ধরেছেন। মায়েরা সব সময় মমতাময়ীই হন। জমানো টাকা-পয়সা থেকে আদর-ভালোবাসা সবই থাকে সন্তানদের ঘিরে। লেখক মায়ের ভালোবাসার দিকটি তুলে ধরেছেন ‘মুঠোফোন এবং মমতাময়ী মা’ গল্পে।

‘বিষণ্ণ সন্ধ্যা কিংবা বিভ্রম’ বইটিতে লেখক সমাজের খুঁটিনাটি সমস্যা, হতাশা ও জীবন-জীবিকার বিষদ বর্ণনা দিয়েছেন। বইটি পড়ে মনে হলো লেখক গরিব ও দুঃখী মানুষের কষ্ট বোঝেন। তাদের সমস্যাগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। এ ধরনের লেখা সমাজ বিনির্মাণে সহায়ক হবে বলে আশা রাখছি। পাঠকসমাজ উপকৃত হবেন এ ধরনের শিক্ষণীয় হৃদয়স্পর্শী গল্প পড়ে। আমি বইটির বহুল পাঠ ও প্রচার কামনা করছি।

বইয়ের নাম: বিষণ্ণ সন্ধ্যা কিংবা বিভ্রম
লেখক: সালাহ উদ্দিন মাহমুদ
জনরা: গল্পগ্রন্থ
প্রকাশনী: কিংবদন্তী পাবলিকেশন
প্রচ্ছদ: সাদিয়া তারান্নুম
মূল্য: ২৫০ টাকা।

এসইউ/এএসএম

Read Entire Article