তিনি বিসিবিতে থাকবেন এবং ক্রিকেট ফেডারেশনগুলোর অভিভাবক সংগঠন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কোটায় পরিচালক হবেন। পরে পরিচালকদের মধ্যে ভোটাভুটিতে সভাপতিও বনে যেতে পারেন। এমন একটি সম্ভাবনার কথা শোনা যাচ্ছিল দুই মাসের বেশি সময় ধরে।
জাগোনিউজে এমন সম্ভাবনার কথা ইঙ্গিত করে বেশ কিছু প্রতিবেদনও প্রকাশ করা হয়েছে; কিন্তু আমিনুল ইসলাম বুলবুল বারবার তা এড়িয়েও গেছেন এবং একটি প্রতিষ্ঠিত বাংলা দৈনিকে কয়েক সপ্তাহ আগে এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেছিলেন, ‘আমার নির্বাচন করার কোনই ইচ্ছে নেই। আমি বিসিবিতে নির্বাচন করবো না।’
অবশেষে সেই অবস্থান বদল বুলবুলের। আজ বিকেলে তিনি জানিয়ে দিলেন, ‘আমি বিসিবিতে নির্বাচন করবো।’
বর্তমানে সিলেটে অবস্থানরত বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল সাংবাদিকদের জানান, ‘আমার সাথে এখনও এনএসসির কোন আলোচনা হয়নি। আমি জাস্ট ওইটা প্রকাশ করেছি যে, সম্ভব হলে আমি নির্বাচন করব। এখন আমি জানি না কোথা থেকে করব বা কী করব। আমার একটাই কারণ হচ্ছে, যে কাজগুলো শুরু করেছিলাম, সেই কাজগুলো ভালোভাবে এগিয়ে চলছে এবং মনে হচ্ছে যে এই কাজগুলো হাফ ডান হিসেবে না ফেলে রেখে সামনে কাজটা যেন আগে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি। সেটা একটা মূল কারণ এখানে কন্টিনিউ করার। নেক্সট স্টেজে নিয়ে যাওয়ার জন্য যে কাজগুলো করতে হয়, সে কাজগুলো করার জন্য আমি মনস্থির করেছি যে, আমি কন্টিনিউ করতে চাই।’
কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে সেই ঘোষণাটা এত দেরিতে কেন দিলেন বুলবুল? এমন নয়, বিসিবিতে পরিচালক পদে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়ে বুলবুল কোনো দোষ করে ফেলেছেন? আগেই বলা হয়েছে, দক্ষতা ও যোগ্যতায় বুলবুল অনেক সমৃদ্ধ। বিসিবির ভবিষ্যত সভাপতি হিসেবে তার ক্যালিবারকে কেউ খাট করে দেখার কোনোই অবকাশ নেই। বরং সব হিসেবে তিনি অনেকের চেয়ে এগিয়ে।
কিন্তু তারপরও প্রশ্নটা উঠছে। কারণ, আমিনুল ইসলাম বুলবুলই বারবার বিসিবিতে নির্বাচন করার বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন। অবশেষে তিনিও ঘোষণা দিলেন নির্বাচন করার।
বুলবুলের এই ঘোষণার সাথে সাথে একটি প্রশ্ন উঠেছে জোরেসোরে। তিনি কোথা থেকে নির্বাচন করবেন? বলে রাখা ভাল, বিসিবিতে নির্বাচনের ক্রাইটেরিয়া হলো তিনটি। এক ঢাকার ক্লাব, জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা আর তিন হলো সার্ভিসেস, বিশ্ববিদ্যালয় ও সাবেক ক্রিকেটারদের ভোটে। এই তিন ক্যাটাগরির মধ্যে বুলবুল কোন ক্যাটাগরিতে নির্বাচন করবেন?
সে প্রশ্নটা এখন খুব বড় হয়ে উঠেছে। সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানা গেছে, আমিনুল ইসলাম বুলবুলের ঢাকার ক্লাব কোটায় নির্বাচন করার কোনোই সম্ভাবনা নেই। কারণ, এখানে প্রিমিয়ার, প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিভাগ এর ৭৬ ক্লাবের কাউন্সিলর মনোনয়ন একরকম চূড়ান্ত। বুলবুল যেহেতু আাইসিসির চাকুরির কারণে ঢাকা তথা দেশের ক্রিকেট থেকে দূরে ছিলেন, তাই তার কোন ক্লাবের সম্পৃক্ততা নেই।
এই ক্লাব কাউন্সিলরশিপের পূর্ব শর্তই হলো সংশ্লিষ্ট ক্লাবের চেয়ারম্যান, সেক্রেটারি কিংবা ক্রিকেট কমিটি চেয়ারম্যান না হয় ক্রিকেট সেক্রেটারি। এর বাইরে ক্রিকেট টিমের প্রধান ‘ডোনার’ হিসেবেও কেউ কেউ কাউন্সিলরশিপ পেয়েছেন। পাবেন।
বুলবুল সেখানে নেই। তার পরের ক্যাটাগরি হলো সার্ভিসেস, বিশ্ববিদ্যালয় ও সাবেক ক্রিকেটারদের কোটায়। সেই ক্যাটাগরিতে ক্রিকেটারদের সংগঠন কোয়াবেরও ভোট আছে। যেহেতু পূর্ব সম্পৃক্ততা নেই, তাই সেই ক্যাটাগরি থেকেও বুলবুলের জিতে আসা খুব কঠিন হবে।
তাহলে কোন ক্যাটাগরি থেকে নির্বাচন করবেন বুলবুল? একটি ক্যাটাগরিইে বাকি থাকলো, তাহলো জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা। ক্রিকেট পাড়ায় আজ মঙ্গলবার পড়ন্ত বিকেল থেকে একটি গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। তাহলো, বুলবুল ঢাকা বিভাগ থেকে নির্বাচন করতে পারেন এবং ভেতরের খবর, ঢাকা বিভাগ কাউন্সিলর হবেন বুলবুল।
বলে রাখা ভাল, ঢাকা বিভাগে মোট ১৭ জন কাউন্সিলর। তার মধ্য থেকে গঠণতন্ত্র অনুযায়ী দুইজন পরিচালক পদে নির্বাচিত হবেন। সেখানেই বুলবুলের নির্বাচন করে আসা তুলনামূলক সহজ হবে। তারপরও প্রশ্ন উঠতে পারে, ঢাকা বিভাগই কেন? অন্য কোন বিভাগ থেকে নয় কেন?
এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে একটি তথ্য বেরিয়ে এসেছে। তাহলো এখন পর্যন্ত ঢাকা বিভাগের ১৭ জেলার ১৫টিতে নতুন অ্যাডহক কমিটি হয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, এই নতুন অ্যাডহক কমিটি সরাসরি ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ মনোনীত ও অনুমোদিত। খুব স্বাভাবিকভাবেই সেই জেলাগুলোর কাউন্সিলরদের ওপর এনএসসির পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকবে। তারা যেহেতু এনএসসির মনোনীত। খুব স্বাভাবিকভাবেই তারা এনএসসির পছন্দর প্রার্থীকে ভোট দেবেন। সেই জায়গায় আমিনুল ইসলাম বুলবুল বেশ এগিয়ে। কারণ, তিনি বিসিবি প্রধানের চেয়ারে বসেছেন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের পছন্দর প্রার্থী হয়ে। খুব স্বাভাবিকভাবে নির্বাচন করলে বুলবুলের প্রতি প্রচ্ছন্ন সমর্থন থাকবেই এনএসসির।
তাই ধরে নেয়া যায় ঢাকা বিভাগ থেকে নির্বাচন করলে বুলবুল বেশ নিরাপদ অবস্থানে থাকবেন এবং তার জেতার সম্ভাবনাও খুব বেশি থাকবে। বলে রাখা ভাল, ঢাকা বিভাগ থেকে অপর পরিচালক হিসেবে বিসিবির পুরনো কর্মকর্তা ও দেশের ক্রীড়াঙ্গনের পরিচিত মুখ আব্দুল্লাহ আল ফুয়াদ রেদওয়ান-এর সম্ভাবনাও খুব বেশি শোনা যাচ্ছে।
এআরবি/আইএইচএস/