বিয়ে জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। সুখী ও শান্তিপূর্ণ জীবনের জন্য নির্ঝঞ্ঝাট ও সুখী দাম্পত্য জীবন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ তাআলা বলেন, আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের থেকেই সঙ্গীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও। আর তিনি তোমাদের মধ্যে ভালবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এর মধ্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে সে কওমের জন্য, যারা চিন্তা করে। (সুরা রুম: ২১)
বিয়ের ব্যাপারে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি বুঝতে বিয়ে প্রসঙ্গে মহানবী (সা.) থেকে বর্ণিত হাদিসগুলোও গুরুত্বপূর্ণ। এখানে আমরা বিয়ের ব্যাপারে মহানবীর (সা.) ৬টি হাদিস উল্লেখ করছি।
১. সামর্থ্য থাকলে বিয়ে করা উচিত
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, হে যুবক সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যে বিয়ের সামর্থ্য রাখে সে যেন অবশ্যই বিয়ে করে। কেননা বিয়ে দৃষ্টি অবনত করে ও লজ্জাস্থানের অধিক হেফাজত করে। আর যার সামর্থ্য নেই, সে যেন রোজা রাখে। রোজা তার জন্য ঢালস্বরূপ (অর্থাৎ রোজা তার যৌনচাহিদা দমন করে রাখবে)।
(সহিহ বুখারি: ৫০৬৬, সহিহ মুসলিম ১৪০০)
২. বিয়ে অর্ধেক দ্বীন
আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, মানুষ যখন বিয়ে করে তখন সে তার ইমানের অর্ধেক পূর্ণ করে, অবশিষ্টাংশ লাভের জন্য সে যেন আল্লাহভীতি অর্জন করে।
(শুআবুল ইমান: ৫১০০)
৩. আল্লাহ তাআলা বিয়ের ব্যাপারে সাহায্য করেন
আবু হোরায়রাহ (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, তিন ব্যক্তিকে আল্লাহ তাআলা অবশ্যই সাহায্য করেন। এক. ক্রীতদাস যে তার মুক্তিপণ পরিশোধ করে স্বাধীন হতে চায়। দুই. যে নিজের চারিত্রিক পবিত্রতা রক্ষার উদ্দেশ্যে বিয়ে করতে চায়। তিন. যে আল্লাহর পথে জিহাদ করে।
(সুনানে তিরমিজি: ১৬৫৫)
৪. জীবনসঙ্গী নির্বাচনে দ্বীনদারিকে প্রধান্য দিন
আবু হোরায়রাহ (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, কোনো নারীকে বিয়ের জন্য পছন্দ করার সময় চারটি গুণ দেখা হয়; নারীর ধন-সম্পদ, বংশ-মর্যাদা, রূপ-সৌন্দর্য, অথবা দ্বীনদারি। তুমি দ্বীনদারিকে প্রাধান্য দিয়ে সাফল্য লাভ কর; তা না হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
(সহিহ বুখারি: ৫০৯০, সহিহ মুসলিম ১৪৬৬)
৫. বিয়ের আগে পাত্র-পাত্রী দেখে পছন্দ করা উচিত
আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, একদিন জনৈক সাহাবি নবীজির (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কাছে উপস্থিত হয়ে বলল যে, আমি একজন আনসারী নারীকে বিয়ে করতে চাচ্ছি। (আপনার কী অভিমত?)। নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, বিয়ের আগে তাকে দেখে নিন।
(সহিহ মুসলিম: ১৪২৪)
৬. পাত্র-পাত্রীকে যে কারণে দেখে নেওয়া উচিত
মুগীরাহ ইবনে শু’বা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি একজন নারীকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলাম, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে জিজ্ঞেস করলেন যে, আপনি কি তাকে দেখেছেন? আমি বললাম, না, দেখিনি। তখন তিনি বললেন, তাকে দেখে নিন; এটি আপনাদের মধ্যে অনুরাগ ও সৌহার্দ্য সৃষ্টিতে সহায়ক হবে।
(সুনানে নাসাঈ: ৩২৩৫)
৭. উত্তম স্ত্রী দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, দুনিয়ার সমস্ত কিছুই তুচ্ছ ও ক্ষণস্থায়ী ধন-সম্পদ। এর মধ্যে মুসলমান সতীসাধ্বী স্ত্রী সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ।
(সহিহ মুসলিম: ১৪৬৭)
ওএফএফ