বিয়েতে গান বাজিয়ে শাস্তির মুখে বর

2 hours ago 6

রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নের দাওকান্দি মধ্যপাড়া গ্রামের যুবক সোহানুর রহমান সোহান (২৫)। গত ১৯ নভেম্বর তিনি উপজেলা সদরের তরিকতপুর গ্রামের সোহরাব হোসেনের মেয়ে সুরাইয়া পারভিনকে (২২) বিয়ে করেন। পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ে হয়।

বাঙালি রীতি-রেওয়াজ অনুযায়ী বরের বাড়িতে ধুমধাম করে বিয়ের আয়োজন করা হয়। পাড়াপ্রতিবেশী আত্মীয়পরিজন ও বন্ধুস্বজনদের আপ্যায়ন করা হয়। বিয়ের আগের রাতে সোহানের বন্ধুরা বিয়েবাড়িতে সাউন্ড বক্সের মাধ্যমে গান বাজান। বিয়ে উপলক্ষে নিজেরাও নেচে-গেয়ে আনন্দ করেন।

এদিকে এ বিষয়টিকে সহজভাবে নিতে পারেননি গ্রামের প্রভাবশালী আব্দুস সামাদ ও তার সহযোগীরা। গত ২২ নভেম্বর স্থানীয় মসজিদে জুমার নামাজ শেষে সোহানুর রহমান সোহানকে ডেকে একদফা ভর্ৎসনা করা হয় বিয়েবাড়িতে গান বাজানো ও নাচ-গান করার জন্য। ওইদিন তাকে ভর্ৎসনা করে ছেড়ে দেওয়া হলেও প্রভাবশালী ও মসজিদের উপদেষ্টা আব্দুস সামাদ ওরফে সামাদ দারোগা ও তার সহযোগীরা জানিয়ে দেন এই গর্হিত কাজের জন্য সোহান ও তার বন্ধুদের আগামীকাল বুধবার সমাজের ডাকা সালিশে উপস্থিত থাকতে হবে। সমাজ বিচার করে তাদের শাস্তি দেবে। এ ঘটনা জানার পর সোহান ও তার বন্ধুরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।

তাদের আশঙ্কা ওইদিন সালিশে তাদের গলায় জুতার মালা পরিয়ে এলাকা পরিভ্রমণ করা হবে। সোহানদের করা হতে পারে মোটা অঙ্কের অর্থ জরিমানাও। নববধূও চরম বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর সোহানুর রহমান সোহান দাওকান্দি মধ্যপাড়া এলাকার মৃত আহসান হাবীবের ছেলে। রাজশাহীর নাবিল গ্রুপের পবা এলাকায় চাকরি করেন।

সোহানের অভিযোগ, বিয়েবাড়িতে তার বন্ধুরা সাউন্ড বক্স আনেন এবং কিছু সময় বাজানো হয়। এটা জানতে পেরে বড় মসজিদের উপদেষ্টা সামাদ দারোগা লোক পাঠিয়ে সাউন্ড বক্স বন্ধ করতে নির্দেশ দেন। তারা সেই অনুযায়ী সাউন্ড বক্স বন্ধ রাখেন। তবে বিয়ের দিন কিছু সময় কম শব্দে সাউন্ড বক্স বাজানো হয়।
সোহানের মতে, এটাই আমাদের অপরাধ। বিয়েবাড়িতে বন্ধু-স্বজনরা একটু আনন্দ করেছেন মাত্র। আমরা সমাজের কোনো রীতিনীতি লঙ্ঘন করিনি। দেশের অনেক জায়গায় এখনো বিয়েবাড়িতে বা ছোটখাটো অনুষ্ঠানে তরুণ যুবকরা একটু আনন্দ করে। আমাদের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।

এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে আরও জানা গেছে, এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি আব্দুস সামাদ ওরফে সামাদ দারোগা একসময় পুলিশে চাকরি করতেন। এখন অবসর নিয়ে গ্রামে বসবাস করেন এবং গ্রামের সব বিষয়ে মাতব্বরি করেন। তিনি দাউকান্দি মধ্যপাড়া বড় জামে মসজিদের উপদেষ্টাও।

সামাদ দারোগা ও তার সহযোগীরা কিছুদিন আগে গ্রামে একটা লিখিত নিয়ম চালু করেছেন। কারও বিয়েশাদি বা সন্তানের সুন্নতে খাতনায় সাউন্ড বক্সে গান বাজানো যাবে না। এটা গ্রামের অনেকেই মেনে চলেন। সোহান বিয়েতে গান বাজিয়ে সমাজের নিয়ম লঙ্ঘন করে সামাজিক অপরাধ করেছেন। এজন্য সামাদ দারোগার নেতৃত্বে গ্রামবাসী তাকে শাস্তি দিতে চায়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মসজিদ কমিটির উপদেষ্টা সামাদ দারোগা ওরফে আব্দুস সামাদ বলেন, তাদের গ্রামে বিয়ে বা এই জাতীয় সামাজিক অনুষ্ঠানে কোনো গানবাজনা করা যাবে না—এমন একটা নিয়ম গ্রামের সব মানুষের মতামতের মাধ্যমে চালু রয়েছে। সোহান সমাজের সেই নিয়ম ভেঙেছেন। তাকে সতর্ক করার পরও সাউন্ড বক্স বন্ধ করে আবার চালু করেছেন। এটাকে সমাজ অপরাধ হিসেবে দেখছেন। গত শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে তাকে ডেকে গ্রামের নিয়মের কথা এক দফা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। 

আমি বলেছি, সমাজ যদি মনে করে সেক্ষেত্রে তিনি আগামী ২৭ নভেম্বর বা আগে-পরে সালিশ ডেকে সবার মতামত অনুযায়ী তাকে সামাজিক শাস্তি দেওয়া হবে। সমাজের লোকরা যে শাস্তি ঠিক করবেন, সেটাই সোহানকে মানতে হবে। কারণ সে এই গ্রামে বসবাস করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুর্গাপুর থানার ওসি দুরুল হোদা বলেন, বিয়েবাড়িতে গান বাজানোর জন্য এভাবে সালিশ করে শাস্তি দেওয়ার কোনো বিধান নেই। এ ধরনের কোনো ঘটনার অভিযোগ পুলিশের কাছে আসেনি। ভুক্তভোগী কেউ অভিযোগ করলে তদন্ত করে আইনানুগ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

Read Entire Article