বিয়ের আসরেই ১৫ লাখ টাকা খোয়ালেন বর

8 hours ago 3
বরের বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার সড়ক সাজানো হয়, শেষ হয় হলুদের অনুষ্ঠান। বিয়ের দিন দুপুরে কনের বাড়ির গেটে বরকে ফুলের মালা পরিয়ে মিষ্টি খাইয়ে বরণও করা হয়। ঠিক সেই সময় স্থানীয় এক ব্যক্তি দাবি করেন, বর আগে বিয়ে করেছিল।  এ অভিযোগ ওঠার সাথে সাথে বর ও তার স্বজনদের পাশের একটি ঘরে আটকে মারধর করে কনের পরিবার। এরপর টাকা, সোনা, মোবাইলফোন, চেক রেখে ১৫ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। শুক্রবার (২২ আগস্ট) বিকেলে কুমিল্লার লালমাইয়ে বাকই উত্তর ইউনিয়নের ছোট বিজরা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।  পরে শনিবার (২৩ আগস্ট) রাত থেকে ঘটনা সংশ্লিষ্ট একাধিক ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও উভয় পরিবারের সাথে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার পেরুল উত্তর ইউনিয়নের ছোট হাড়গিলা গ্রামের ওলিউর রহমানের ছেলে কাতার প্রবাসী শেখ রাসেল (২৬) ও ছোট বিজরা গ্রামের মহি উদ্দিনের মেয়ে মাদ্রাসা ছাত্রী ফারহানা আক্তার মুন্নীর (১৫) বিয়ের সব আয়োজন সম্পন্ন হয়েছিল।  কনের দাদা আলী আক্কাস জানান, আমার নাতিন এ বছর বিজরা মাদ্রাসা থেকে দাখিলে জিপিএ ৫ পেয়ে পাস করেছে। প্রবাসী ও সফল বর দেখে বিয়েতে রাজি হয়েছি। বিয়ে করতে আসার পর আমরা জানতে পারি বর আগে একটি বিয়ে করেছে। তখন বরকে গেট থেকে ভাতিজা ফারুকের ঘরে নিয়ে আটক করি। পরে স্থানীয় নেতা ও গ্রামের মুরব্বিরা বসে বরকে ১৫ লাখ টাকা জরিমানা করেছেন। জরিমানার টাকা, চেক, স্ট্যাম্প ও সোনা বিএনপির ইউনিয়ন সভাপতি হাফেজ আনোয়ারের কাছেই আছে। জরিমানার কোনো কিছু আমাদের দেওয়া হয়নি। বর শেখ রাসেল জানান, আমি একজন প্রবাসী। টানা ৮ বছর কাতারে ব্যবসা করি। আগে থেকেই আমি একটি পরিকল্পিত প্রতারণার শিকার হয়েছি। আইনজীবীর মাধ্যমে এটির সমঝোতাও হয়েছে। তবু মিথ্যা অপবাদ দিয়ে কনের বাড়িতে আমাকে আটকিয়ে চাঁদাবাজির মতো জরিমানা আদায় করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, আগের প্রতারণার ও বিয়ে বাড়িতে কনের পরিবারের জরিমানা আদায়ের ভিডিওসহ সব ডকুমেন্ট রয়েছে। আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বরের ছোট ভাই মাহদী হাসান হৃদয় জানান, কনের পরিবারের দাবি অনুযায়ী ১৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আমরা নগদ ২ লাখ টাকা পরিশোধ করি। জরিমানার অবশিষ্ট টাকার জন্য আমার নামীয় ৮ লাখ টাকার একটি ও ৫ লাখ টাকার একটি চেক নেয়। এ ছাড়া কনের জন্য আমাদের নেওয়া প্রায় ৪ ভরি সোনাসহ ট্রলি ভর্তি পোশাক ও সাজ সরঞ্জাম, একটি আইফোন ও একটি অ্যানড্রয়েড ফোন রেখে দেয়। শালিসের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তারা ৫০ টাকা মূল্যের ৫টি খালি স্ট্যাম্পে আমার স্বাক্ষর রাখে। এ বিষয়ে জানতে সালিশ বৈঠকে সভাপতিত্বকারী বাকই উত্তর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হাফেজ আনোয়ারের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলেও ফোন রিসিভ হয়নি। লালমাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শহীদুল ইসলাম কালবেলাকে জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। তবে ততক্ষণে স্থানীয়রা বিষয়টি ‘মীমাংসা’ করেছে বলে জানায়। পুলিশের উপস্থিতিতে বর ও তার স্বজনদের নিরাপদে নিজ বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
Read Entire Article