বিয়ের টোপর-কাপালি গড়ে ৩০ বছর ধরে সংসার চলে মিঠুন কুমারের

ফরিদপুরের বোয়ালমারীর শোলা শিল্পী মিঠুন কুমার শীল (৩৯)। তিনি দীর্ঘ প্রায় ৩০ বছর ধরে বর-কনের টোপর-কপালি তৈরি করে সংসার চালাচ্ছেন। টোপর-কপালি ছাড়াও বছরের অন্যান্য সময়ও তাকে অর্ডার অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের জিনিস বানিয়ে দিতে হয়। সারা বছর তার তৈরি টোপর-কপালির বেশ চাহিদা থাকে। শুধু জেলা নয়, আশপাশের বেশ কয়েকটি জেলা-উপজেলার বিভিন্ন দোকানেও তার টোপর-কপালির বেশ চাহিদা রয়েছে। মোবাইলে অর্ডার করলেই তিনি পৌঁছে দেন দোকানে। আবার অনেকেই বাড়িতে এসে কিনে নিয়ে যান। নতুন প্রজন্ম এই কাজের প্রতি কম ঝুঁকছে। উপজেলার মধ্যে কেবলমাত্র তিনিই ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন। খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, উপজেলার ময়না ইউনিয়নের বিলসরাইল গ্রামের বাসিন্দা মিঠুন কুমার শীল। এটা তার পৈতৃক পেশা। একসময় তার বাবা গোপাল চন্দ্র শীল এ পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। তিনি বছর চারেক আগে মারা গেছেন। ছোটকাল থেকে বাবার হাত ধরেই এ পেশায় আসা মিঠুন কুমারের। মুকুট তৈরিতে আগে শোলার ব্যবহার ছিল। এখন শোলা পাওয়া যায় না। কর্কশিট, চুমকি, আঠা, জরি, পুথি, লেস, রং দিয়ে তৈরি করা হয় টোপর-কপালি। প্রকারভেদে একজোড়া টোপর-কপালি ২৩০ টাকা থেকে শুরু করে ১৩০০ টাকা পর্যন্ত পাইকারি দরে বিক্র

বিয়ের টোপর-কাপালি গড়ে ৩০ বছর ধরে সংসার চলে মিঠুন কুমারের

ফরিদপুরের বোয়ালমারীর শোলা শিল্পী মিঠুন কুমার শীল (৩৯)। তিনি দীর্ঘ প্রায় ৩০ বছর ধরে বর-কনের টোপর-কপালি তৈরি করে সংসার চালাচ্ছেন। টোপর-কপালি ছাড়াও বছরের অন্যান্য সময়ও তাকে অর্ডার অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের জিনিস বানিয়ে দিতে হয়। সারা বছর তার তৈরি টোপর-কপালির বেশ চাহিদা থাকে। শুধু জেলা নয়, আশপাশের বেশ কয়েকটি জেলা-উপজেলার বিভিন্ন দোকানেও তার টোপর-কপালির বেশ চাহিদা রয়েছে। মোবাইলে অর্ডার করলেই তিনি পৌঁছে দেন দোকানে। আবার অনেকেই বাড়িতে এসে কিনে নিয়ে যান।

নতুন প্রজন্ম এই কাজের প্রতি কম ঝুঁকছে। উপজেলার মধ্যে কেবলমাত্র তিনিই ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, উপজেলার ময়না ইউনিয়নের বিলসরাইল গ্রামের বাসিন্দা মিঠুন কুমার শীল। এটা তার পৈতৃক পেশা। একসময় তার বাবা গোপাল চন্দ্র শীল এ পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। তিনি বছর চারেক আগে মারা গেছেন। ছোটকাল থেকে বাবার হাত ধরেই এ পেশায় আসা মিঠুন কুমারের। মুকুট তৈরিতে আগে শোলার ব্যবহার ছিল। এখন শোলা পাওয়া যায় না। কর্কশিট, চুমকি, আঠা, জরি, পুথি, লেস, রং দিয়ে তৈরি করা হয় টোপর-কপালি। প্রকারভেদে একজোড়া টোপর-কপালি ২৩০ টাকা থেকে শুরু করে ১৩০০ টাকা পর্যন্ত পাইকারি দরে বিক্রি হয়। ফরিদপুর ছাড়াও পার্শ্ববর্তী রাজবাড়ী, মাগুরা, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুরসহ বিভিন্ন জেলায় তার তৈরি এসব জিনিসপত্রের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, বাড়ির ওপর একটি টিনের ঘরে তার কারখানা। কাজ করছেন ৫-৬ জন শ্রমিক। মিঠুন কুমার শীল নিজের হাতে সূক্ষ্ম করে কর্কশিট কেটে মুকুট তৈরির কাজ করছেন। এ কাজে বেশিরভাগই সূক্ষ্ম হাতের কাজ। শ্রমিকরা কেউ রং করছেন, কেউ আঠা লাগিয়ে জোড়া দিচ্ছেন আবার কেউ জরি-রঙের কাজে ব্যস্ত। সারা বছর চলে এ কর্মযজ্ঞ। ভালোমানের একটি টোপর-কপালি তৈরি করতে দুই দিনের মতো সময় লাগে।

বিয়ের টোপর-কাপালি গড়ে ৩০ বছর ধরে সংসার চলে মিঠুন কুমারের

টোপর তৈরির কারখানার শ্রমিক মাজেদা খাতুন (৬৫) জাগো নিউজকে বলেন, দীর্ঘ প্রায় ১৭ বছর ধরে এখানে কাজ করছি। বয়স হয়েছে। অন্যকাজ করতে পারি না, তাই এ পেশায় আছি। প্রতিদিন কাজ করি, যা বেতন পাই তাই দিয়ে সংসার চলে।

পারভিন বেগম (৪০) বলেন, এই গ্রামেই আমাদের বাড়ি। রোজগারের পাশাপাশি এ কাজ করতে ভালো লাগে। আমার বিয়ের আগের থেকেই এ কাজ করি। এখনও করে যাচ্ছি।

আরেক শ্রমিক উর্মি পারভিন (৩৯) বলেন, আমাদের হাতে তৈরি টোপর মাথায় দিয়ে যখন বিয়ে হয়, তখন দেখে ভালো লাগে। দীর্ঘদিন ধরে এখানে কাজ করছি।

কাজের ফাঁকে কথা হয় কারখানার মালিক মিঠুন কুমারের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার বাবা এ পেশায় জড়িত ছিলেন। তার কাছ থেকেই শেখা। পৈতৃক পেশা আর ঐতিহ্য ধরে রাখতে দীর্ঘ প্রায় ৩০ বছর ধরে এই কাজ করছি। এই পেশা দিয়েই সংসার সামলাচ্ছি। সারা বছরই কাজ থাকে। তবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিয়ের মৌসুমে কাজের চাপ বেশি থাকে। প্রতিমাসে গড়ে কমপক্ষে ৪০০ পিস টোপর-কপালি তৈরি করে থাকি। সমস্ত খরচ মিলিয়ে প্রকারভেদে গড়ে প্রতি পিসে ৭০-৮০ টাকা লাভ থাকে।’

তিনি আরও জানান, একটা সময় ছিল যখন প্রচুর শোলা পাওয়া যেত। তবে এখন শোলা পাওয়া যায় না। যাও পাওয়া যায় তাতে শোলার দাম পড়ে যায় অনেক বেশি। সেজন্য শোলা দিয়ে টোপর বানাতে অনেক খরচ হয়। তাই কর্কশিট, আর্ট পেপার এবং জরি, রং, চুমকি ও আঠা ব্যবহার করে থাকেন। মোবাইলে অর্ডার পেয়ে দোকানে পৌঁছে দেন। আবার অনেকে অর্ডার দিয়ে বাড়িতে এসে নিয়ে যান। বিয়ের জিনিসপত্র বিক্রয়ের এমন কোনো দোকান নেই, যেখানে আমার তৈরি টোপর-কপালি পাওয়া যাবে না। তবে তিনি দাবি করেন, অত্র অঞ্চলে কেবলমাত্র তিনিই এ পেশাটি ধরে রেখেছেন। অল্প সুদে সরকারি-বেসরকারি ঋণ পেলে আরও বড় পরিসরে কাজটি করতে পারতেন।

বিয়ের টোপর-কাপালি গড়ে ৩০ বছর ধরে সংসার চলে মিঠুন কুমারের

স্থানীয় এক নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য (মেম্বার) শেখ হারুন-অর-রশিদ জাগো নিউজকে বলেন, মিঠুন কুমার এই টোপর তৈরির কাজ দীর্ঘ বছর ধরে করেন। তার বাপ-দাদার আমালের পেশা। এই অঞ্চলের মধ্যে মিঠুন কুমার একাই এই ব্যবসা ধরে রেখেছেন। ফরিদপুর জেলা ছাড়াও বিভিন্ন জেলায় তার তৈরি টোপর যায়।

বোয়ালমারী বাজারের নিউমার্কেটের পুরোনো কসমেটিকস ব্যবসায়ী দত্ত বিপণীর মালিক দেবু দত্ত বলেন, মিঠুনের কারখানায় তৈরি টোপরের খুব সুনাম আছে। মান ও নকশা খুব ভালো। ঢাকার জিনিসের চেয়ে তার তৈরি টোপরের গুণগতমান ও দামের কারণে কয়েকটি জেলায় সুনামের সঙ্গে চলে। আমরাও ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে ক্রেতাদের মুখে সুনাম শুনতে পাই।

বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানভীর হাসান চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ঐতিহ্যবাহী পেশাটি ধরে রাখায় তাকে ধন্যবাদ জানাই। এ কাজ টিকিয়ে রাখতে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তার চাহিদা, সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতাগুলো জেনে-শুনে নিয়ম অনুযায়ী সমাধানের চেষ্টা করা হবে। সেক্ষেত্রে সমবায়, সমাজসেবা ও যুব উন্নয়ন অফিসের মাধ্যমে নিয়ম অনুযায়ী বিভিন্ন সহায়তা করা যেতে পারে।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুঠির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) ফরিদপুরের উপমহাব্যবস্থাপক আহসান কবির জাগো নিউজকে বলেন, তিনি (মিঠুন কুমার) যদি আমাদের অফিসে এসে ক্ষুদ্র ঋণের জন্য যোগাযোগ করেন তাহলে তার বিষয়ে নিয়ম অনুযায়ী সহযোগিতা করা হবে।

এফএ/এমএস

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow