ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকা ও দীর্ঘদিন সড়ক সংস্কারের অভাবে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে রাজবাড়ী পৌরসভার হাসপাতাল সড়ক। সড়কটির পাশে হাসপাতাল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থাকায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে চলাচলকারীদের।
সরেজমিনে দেখা যায়, পাবলিক হেলথ থেকে দুই নম্বর রেলগেট পর্যন্ত সড়কে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য খানাখন্দ। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় বিটুমিন ও খোয়া উঠে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে এ সড়ক। সামান্য বৃষ্টিতে সৃষ্টি হয় হাঁটু সমান জলাবদ্ধতা। দেখে বোঝার উপায় নাই এটি সড়ক নাকি খাল। উপায়ন্ত না পেয়ে ও বিকল্প সড়ক না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন পথচারী, শিক্ষার্থী, রোগীসহ বিভিন্ন যানবাহন। এতে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। এছাড়া একই অবস্থা এতিমখানা ও ভবানীপুর সড়কেরও। জনদুর্ভোগ লাগবে দ্রুত এই সড়ক সংস্কারের দাবি স্থানীয়দের।
জানা যায়, ১৯১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত রাজবাড়ী পৌরসভা ১৯৯১ সালে ‘ক’ শ্রেণির তালিকাভুক্ত হয়। রাজবাড়ী সদর হাসপাতাল সড়ক একটি জনগুরুত্বপূর্ণ ও পৌরসভার প্রধান সড়কের মূল বিকল্প সড়ক। রাস্তাটি প্রায় ৮ বছর সংস্কার না হওয়ায় বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে।
সড়কটির পাশে রয়েছে রাজবাড়ী সদর হাসপাতাল, সিভিল সার্জন কার্যালয়, জেলা মৎস্য অধিদপ্তর, সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ, ওজোপাডিকো (বিদ্যুৎ অফিস), জেলা আনসার কমান্ডন্টের কার্যালয়, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, একাধিক ক্লিনিক, ডায়াগোনেস্টিক সেন্টার, বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বসতবাড়িসহ নানা স্থাপনা। রাস্তা দিয়ে সার্বক্ষণিক রোগীদের আসা-যাওয়ার পাশাপাশি জেলা শহরের বড় বাজারের চাল, ডাল, চিনি, রড, সিমেন্টসহ সব ধরনের পণ্য পরিবহন করাসহ দিন-রাত চলাচল করে ছোট বড় বিভিন্ন যানবাহন। ফলে সড়কের বেহাল দশায় এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরাসহ স্থানীয়দের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
আরও পড়ুন:
- মাথা গোঁজার ঠাঁইয়ের কাছে তুচ্ছ প্রাণের মায়া
- বকেয়া-ঋণের চাপে ধুকছে শুঁটকি ব্যবসা
- সুপেয় পানির তীব্র সংকট, অকেজো হাজারও নলকূপ
পথচারী মো. জাহিদ বলেন, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। এই সড়কের পাশে সরকারি হাসপাতালসহ অনেকগুলো সরকারি-বেসরকারি অফিস, স্কুল-কলেজ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে। এছাড়া এ সড়কের পাশে সার ও খাদ্য গোডাউনও আছে। যার কারণে সব মালামালের গাড়ি এ সড়ক দিয়ে চলাচল করে। বর্তমানে সড়কের অবস্থা খুবই খারাপ। অনেকবার অভিযোগ দিয়েও কোনো কাজ হয় নাই। মাঝে মধ্যেই ট্রাক উল্টে, রিকশার চাকা ভেঙে দুর্ঘটনা ঘটে। কোনোরকম সংস্কার করা হলেও চলাচল করা যেতো। রাস্তা খারাপের কারণে জরুরি রোগীর জন্য রিকশা পাওয়া যায় না।
স্থানীয় আবুল কালাম আজাদ ও বজলুর রহমান বলেন, এই সড়কটি জেলা শহরের প্রধান সড়কের বিকল্প সড়ক। বড় যানবাহন চলাচলের কারণে ও দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় বিটুমিন-খোয়া উঠে খালে পরিনত হয়েছে। যার কারণে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এতে সড়কের পাশের বসবাসকারী, ব্যবসায়ী ও হাসপাতালে যাতায়াতকারী রোগীরা বেশি দুর্ভোগে পড়ছেন। এই সমস্যার সমাধান হওয়া জরুরি।
সেহাগুজ্জামান নামে এক রোগী বলেন, এটা সদর হাসপাতালের সড়ক। সামান্য বৃষ্টিতে এই অবস্থা হয়েছে, এরমধ্যে আসতে হলো। পানির মধ্যে ভাঙা দেখা যায় না। গর্তে চাকা পড়ে পানির মধ্যে পড়ে গেলে ব্যাগে থাকা ওষুধসহ বউ-বাচ্চা ভিজে যেতো এবং বড় ধরনের কোন দুর্ঘটনাও ঘটতে পারতো। কয়েকবছর ধরে এই সড়কের অবস্থা এরকম। কিন্তু দেখার কেউ নাই। দ্রুত সড়কটি সংস্কার করে চলাচলের উপযোগী করা হলে সবার জন্যই ভালো হবে।
ব্যবসায়ী মিঠু শেখ বলেন, প্রায় ৭ বছর ধরে এই সড়কের কোনো কাজ হয় নাই। এখন জনদূর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। পানির মধ্য দিয়ে যেতে গিয়ে গাড়ি যেমন ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে, তেমনি রোগী, পথচারী ও শিক্ষার্থীসহ সবার চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। দোকানের সামনে পানি জমে থাকায় কাস্টমার আসতে না পারায় ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি। শুধু আমি না, আশপাশের সব ব্যবসায়ী এই রাস্তার কারণে ক্ষতি হচ্ছে।
শিক্ষার্থী ইকরামুল হাসান বলেন, রাস্তায় জলাবদ্ধতায় আমাদের চলাচলে খুব সমস্যা হয়। সামনে টেকিনিক্যাল কলেজ ও সদর হাসপাতাল। খুব কষ্ট করে আসা-যাওয়া করতে হচ্ছে। দিনের পরদিন এই সমস্যা থাকলেও কারও চোখে পড়ছে না।
ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাচালক আবু দাউদ শেখ, জাহিদ মিজি, শাহ আলম বলেন, পাবলিক হেলথ থেকে দুই নম্বর রেলগেট পর্যন্ত সড়কের বেহাল অবস্থা প্রায় ৫-৬ বছর ধরে। এ সড়কের পাশে এমপি, মন্ত্রী, মেয়রসহ অনেকের বাড়ি ছিল। কিন্তু কেউ সংস্কার করেননি। তাই অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে অনুরোধ এই সড়কটি যেন দ্রুত সংস্কার করা হয়। বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা থাকে। কোথায় পানি কম, কোথায় বেশি বোঝা যায় না। ফলে গাড়ি চালাতে খুব সমস্যা হয় ও খুব ধীরে চালাতে হয়। দ্রুত রোগী নিয়ে যাওয়া যায় না। তারপরও মাঝে মাঝে গাড়ি উল্টে যায়।
রাজবাড়ী পৌরসভার পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তায়েব আলী বলেন, জনদুর্ভোগ লাঘবে চেষ্টা করা হচ্ছে। তারপরও প্রকল্পের অনুমোদনের অক্ষোয় রয়েছি। অর্থ বরাদ্দ পেলে ভালোভাবে উন্নয়ন কাজ করতে পারবো।
এমএন/এমএস