যুক্তরাজ্যের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর পড়তে ইরান থেকে এসেছেন ইয়াসমিন (ছদ্মনাম)। তিনি যখন তার সহপাঠীদের সঙ্গে আলোচনা করেন, তখন অবাক হয়ে দেখেন যে, অনেকেই ইংরেজি ভাষায় দুর্বল।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেখানে স্থানীয় ব্রিটিশ শিক্ষার্থীর সংখ্যা অল্প, সেখানে বিদেশি শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই ইংরেজিতে দক্ষ নয়। ইয়াসমিন বিবিসিকে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘এভাবে ইংরেজি সঠিকভাবে না বুঝে এবং ব্রিটিশ উচ্চারণের বাইরে কোর্সওয়ার্ক করা সম্ভব নয়।’
ইয়াসমিন আরও জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী কোর্সওয়ার্ক সম্পন্ন করতে অন্যদের অর্থ দিয়ে সহায়তা নেন, এমনকি ক্লাসে উপস্থিতি নিশ্চিত করতে অন্যদের অর্থ দিয়ে থাকেন। উচ্চ শিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলোতে এমন অভিজ্ঞতাগুলো যুক্তরাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থায় ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ইউনিভার্সিটি অ্যান্ড কলেজ ইউনিয়ন (ইউসিইউ) বলছে, কিছু বিশ্ববিদ্যালয় বিদেশি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে উচ্চ ফি নিয়ে ভাষা দক্ষতার বিষয়টি উপেক্ষা করছে। এক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জানিয়েছেন, তার মাস্টার্স কোর্সের ৭০% শিক্ষার্থীর ইংরেজি দক্ষতা পর্যাপ্ত নয়।
অভিযোগের বিষয়টি ইউনিভার্সিটি ইউকে অস্বীকার করেছে, তারা দাবি করছে যে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ভালো ভাষাগত দক্ষতা অপরিহার্য। ইউনিভার্সিটির এক কর্মকর্তা, জো গ্র্যাডি বলেন, বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে শিক্ষার্থীরা ভাষাগত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় এবং কোর্সে ভর্তি হয়ে যায়। পাশাপাশি, হায়ার এডুকেশন পলিসি ইনস্টিটিউটের রোজ স্টিফেনসন জানান, ইংল্যান্ডে মাস্টার্স কোর্সে অধ্যয়নরত ১০ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৭ জনই আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী।
এছাড়া, স্থানীয় শিক্ষার্থীদের জন্য স্নাতক পর্যায়ের টিউশন ফি ৯,২৫০ পাউন্ড, কিন্তু বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য এই ফি কোনো সীমায় বাঁধা নেই। ফলে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বেশি ফি নিয়ে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি করছে। স্টিফেনসন আরও বলেন, অন্যান্য দেশের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পর্যাপ্ত ফি আদায় করতে পারছে, যার ফলে স্থানীয় শিক্ষার্থীদের খরচ ভর্তুকি করা সম্ভব হচ্ছে।
তবে, এসব এজেন্টের মাধ্যমে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি নিয়ে কিছু অভিযোগ উঠেছে। স্টাডি গ্রুপের একজন ব্যক্তি জানান, তারা এমন পরিবার টার্গেট করেন যারা বেশি অর্থ ব্যয় করতে ইচ্ছুক। তবে, তারা এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং দাবি করেছে যে, বিদেশি শিক্ষার্থীরা তাদের মেধার ভিত্তিতেই সুযোগ পাচ্ছে।
ইয়াসমিন জানান, তিনি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন, সেখানে ১৬ হাজার পাউন্ড ফি দিয়েছেন। সেখানে প্রায় ১০০ সহপাঠী আছেন, যার মধ্যে অধিকাংশই অর্থের বিনিময়ে অ্যাসাইনমেন্ট করিয়ে নেন। শিক্ষাব্যবস্থায় এটিকে গুরুতর অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হলেও, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেননি। এর ফলে, ইয়াসমিন মনে করেন, তার স্নাতকোত্তর ডিগ্রির মূল্য কমে যাচ্ছে।
এছাড়া, রাসেল গ্রুপ ইউনিভার্সিটির একজন অধ্যাপক জানান, গত পাঁচ বছরে তার অধীনে ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর ইংরেজি দক্ষতা ছিল অপর্যাপ্ত। এমনকি, শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ট্রান্সলেশন অ্যাপ ব্যবহার করেন। যদিও, অধ্যাপক তাদের একতরফা দোষারোপ করতে চান না, কারণ তারা চেষ্টা করছে মানিয়ে নিতে।
এদিকে, ইউনিভার্সিটিজ ইউকের প্রধান নির্বাহী ভিভিয়ান স্টার্ন এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভাষাগত দক্ষতার বিষয়ে সরকারের কঠোর নিয়ম রয়েছে এবং শিক্ষার্থীরা যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়ের মানের জন্য আকৃষ্ট হয়। তবে, যুক্তরাজ্যে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা কিছুটা কমেছে এবং সরকার বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর নির্ভরতা কমানোর জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছে।